পুরাকীর্তির আলোয় ঢাকার ইতিহাস-১

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০১৭, ০৮:৫৪

খন্দকার মাহমুদুল হাসান
বিনত বিবির মসজিদের বর্তমান অবস্থা

এ কথা ঠিক যে, মুঘল আমলে ঢাকা ছিল বাংলার রাজধানী, তবে ঢাকা শহরের পত্তন মুঘল আমলে হয়নি। তখন পুরনো একটি দুর্গকে সংস্কার করে সেনানিবাস গড়ে উঠেছিল। সেই সেনানিবাসকেন্দ্র্রিক শহর হিসেবে নতুন রাজধানীর সৃষ্টি হয়েছিল।

দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের দিকে ইসলাম খানকে যখন বাংলার সুবাদার অর্থাৎ গভর্নর নিয়োগ করেন, তখন বাংলার রাজধানী ছিল রাজমহলে। কিন্তু জাহাঙ্গীরের আদেশেই রাজমহল থেকে রাজধানী সরিয়ে আনা হয়েছিল ঢাকায়। এর পেছনে অবশ্য কারণও ছিল।

যদিও রাজধানী ছিল রাজমহলে, কিন্তু পুরো বাংলায় মুঘল রাজত্ব তখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দিল্লির স¤্রাটরা গোটা বাংলাকে তাদের রাজত্বের মধ্যে আনার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছিলেন, কিন্তু সফল হচ্ছিলেন না কিছুতেই। এর পেছনে প্রধান একটি কারণ ছিল বার ভূঁইয়াদের অব্যাহত বিদ্রোহ। প্রতাপাদিত্য ও ঈশা খাঁর মতো স্বাধীন শাসকরা বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে বারবার ব্যর্থ করে দিচ্ছিলেন। বাংলার বিস্তীর্ণ প্রত্যন্ত এলাকায় এসব স্বাধীন শাসকের প্রভাব এত বেশি ছিল যে সুদূর রাজমহল থেকে তা ক্ষুণ্ন করা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছিল না। তাছাড়া আরাকানি মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের অব্যাহত উৎপাতকে ব্যর্থ করে দেওয়াও সম্ভব হচ্ছিল না। সেসব কারণেই ঢাকাকে রাজধানী করার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

সেকালের বাংলায় প্রধান যাতায়াতব্যবস্থা ছিল নৌপথনির্ভর। জঙ্গলাকীর্ণ ও খাল-নদীতে ভরা দুর্গম বাংলায় এর চেয়ে ভালো যোগাযোগব্যবস্থার কথা তখন কল্পনাও করা যেত না। ঢাকা ছিল এমন একটি জায়গা যেখান থেকে নৌপথে বাংলার সিংহভাগ এলাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব ছিল। দিল্লি থেকে প্রত্যন্ত বাংলায় যেতে হলেও বিকল্প ছিল না নৌপথের। ঢাকা ছিল নদীর পাশের শহর। সেই নদীতে ক্রিয়াশীল ছিল জোয়ার-ভাটা। সেই জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগানোরও গুরুত্ব ছিল। ঢাকার ভেতরে যোগাযোগের উপযোগী অনেক খাল ছিল। তাছাড়া নদী-তীরবর্তী সেকালের ঢাকা ছিল লালমাটিতে গড়া উঁচু জায়গা। ফলে বন্যা হতো না ঢাকায়। এসব কারণে ঢাকা রাজধানী হওয়ার যোগ্য জায়গা বলে মুঘলদের কাছে মনে হয়েছিল। আর সুলতানি যুগে বাংলার অন্যতম রাজধানী সোনারগাঁ ছিল ঢাকার বেশ কাছেই।

তো যাই হোক, ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের পর ইসলাম খান হলেন বাংলার সুবাদার। এর আগে তিনি ছিলেন বিহারের সুবাদার। তাই ১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে নিযুক্তির পর ঢাকা যাত্রার জন্য ভালো একটা প্রস্তুতি নিলেন তিনি। ঢাকায় আসার সময় সৈন্য-সামন্ত শুধু নয় প্রশাসনিক কাজের জন্য কর্মকর্র্তা-কর্মচারী, এমনকি চিত্তবিনোদনের জন্য সংগীত ও নৃত্যশিল্পী পর্যন্ত সাথে নিয়েছিলেন। ১৬০৮ সালের বর্ষার পর রওনা দিয়ে গৌড় হয়ে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের কাছে তিনি পৌঁছোন এবং ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দের বর্ষা কাটিয়ে ১৬১০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই নাগাদ তিনি ঢাকায় পৌঁছোন। ঢাকায় পেঁৗঁছানোর পরই তিনি এখানে রাজধানী স্থাপন করেন এবং দিল্লির স¤্রাটের নামানুসারে ঢাকার নামকরণ করেন জাহাঙ্গীরনগর। তবে ইসলাম খানের নিযুক্তির সাল ১৬০৭ ও ঢাকায় আগমন সাল ১৬০৮ বলেও একটি ধারণা প্রচলিত ছিল, যা ‘ঢাকা দ্যা মুঘল ক্যাপিটাল’ গ্রন্থে (অনু : ড. মুহম্মদ মুহিব উল্যাহ ছিদ্দিকী, বাংলা একাডেমি, ১৯৯৪, পৃ. ৭, ৮, ৯) ড. আবদুল করিম যুক্তির সাহায্যে খ-ন করেছেন। ইসলাম খানের সাথে যেসব সেনাপতি ঢাকায় এসেছিলেন তার মধ্যে একজন ছিলেন মির্জা নাথান, যিনি ছিলেন সেই ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর লেখা ‘বাহারিস্তান-ই গায়বি’ থেকে তখনকার ঢাকা সম্পর্কে বহু কিছু জানা যায়। এতে দেখা যায় যে ঢাকা নামটা মুঘল রাজধানী হওয়ার আগে থেকেই চালু ছিল। সেখানে সেনাচৌকি ছিল এবং সেখানে সেনানায়কও ছিল।

এত গেল ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের কথা। তবে মুঘল যুগেরও বহু পূর্বেকার এমন কিছু প্রত্নকীর্তি খোদ ঢাকা শহর এলাকা থেকে পাওয়া গেছে যেগুলোর সময়কাল খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের বলে প্রমাণিত হয়েছে।

খড়গ রাজাদের মুদ্রা

ঢাকা থেকে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন প্রতœনিদর্শনগুলো হলো গুপ্ত অনুকৃত মুদ্রা, যা খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের বলে ধারণা করা হয়। মুদ্রাগুলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী খড়গ রাজাদের ছিল বলে জানা গেছে। ১৯১০ সালে ‘জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল’-এর ষষ্ঠ খ-ের ১৪১-১৪৩ পৃষ্ঠায় মুদ্রাগুলোর বিবরণ আছে। ‘ঢাকা : এ রেকর্ড অব চেঞ্জিং ফরচুনস’ গ্রন্থে অধ্যাপক দাণিও প্রসঙ্গটির উল্লেখ করেছেন। যেখানে মুদ্রাগুলো পাওয়া গিয়েছিল সেই জায়গাটা তখন নবাব রশিদ খানের বাগান নামে পরিচিত ছিল। সেটা ছিল বর্তমান ঢাকার পিলখানার সামান্য পশ্চিমে। এই পিলখানায় ছিল মুঘল-কোম্পানি-ইংরেজ আমলের হাতিশাল। দেশ বিভাগ-পরবর্তীকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এখানে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দফতর। কাজেই নবাব রশিদ খানের বাগানের এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু ঐ মুদ্রাগুলো ঢাকার ইতিহাস জানার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি না যে ওগুলো ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে নাকি কোনো ধনী লোকের ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসেবে ছিল।

ঠিক এরকম গুপ্ত অনুকৃত মুদ্রা ঢাকার কাছাকাছি সাভার থেকে পাওয়া গেছে। আরও পাওয়া গেছে বৌদ্ধবিহার, স্তূপ প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষ। এগুলো খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের বৌদ্ধধর্মাবলম্বী খড়গ বংশীয় রাজাদের কীর্তি বলে মনে করা হয়। ঢাকার উল্টোপাশে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার আশরাফপুরে পাওয়া গেছে খড়গ বংশীয় রাজা দেব খড়গ-এর দুটো তা¤্রলেখ। যেহেতু ঢাকা থেকে প্রাপ্ত মুদ্রাগুলো খড়গ যুগীয় এবং ঢাকা শহর হলো সাভার ও আশরাফপুরের মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত, তাই ঢাকায় খড়গ বংশীয় বৌদ্ধ রাজাদের শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল বলে ধারণা করা যায়।

পাল-সেন যুগের ঢাকা

ঢাকায় সেন বংশের রাজাদের শাসন যে প্রতিষ্ঠিত ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং এর পক্ষে প্রত্ন প্রমাণ রয়েছে। তবে পাল যুগেও ঢাকায় স্থাপনা থাকার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এককথায় বলা যায়, বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার আগেই ঢাকায় নগর জনপদের অস্তিত্ব ছিল। হোক না সেটা ছোট শহর কিন্তু সে শহরে পাকা মন্দির ছিল, যে মন্দিরে স্থাপিত ছিল পাথরে তৈরি প্রতিমা। ১৯০৬ সালে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা মসজিদের প্রাঙ্গণে পাথরে তৈরি একটি বাসুদেব মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল, যা প্রথম ঢাকা ট্রেজারিতে ও পরবর্তীকালে কলকাতার জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়েছিল। এ মূর্তিটি ছাড়াও ঢাকা শহর থেকে আরও অন্তত তিনটি পাথরে তৈরি মূর্তি আবিষ্কার হয়েছে। বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর পাথরের তৈরি অমন দেব-দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠার প্রমাণ পাওয়া যায় না। এই মোট চারটি মূর্তি হলো-

তেজগাঁও এলাকায় পুরনো জলাশয়ে প্রায় ত্রিশ ইঞ্চি উঁচু কালো ক্লোরাইট পাথরে তৈরি ‘হরিশঙ্করা’ মূর্তি। যেই জলাশয় থেকে মূর্তিটা পাওয়া গিয়েছিল সেটি তেঁজগাও রেলস্টেশনের উত্তর দিকে রেললাইনের ওপরকার ওভারব্রিজের কাছে।

চুড়িহাট্টার বাসুদেব মূর্তি

মহাখালী থেকে প্রাপ্ত মূর্তি। আর ডালবাজারের মন্দিরে রক্ষিত চণ্ডীমূর্তি। এ মূর্তিটি আদতে ঢাকার নিকটবর্তী বিক্রমপুর এলাকায় পাওয়া গিয়েছিল বলে জানা যায়। এটি লক্ষ্মণ সেনের তৃতীয় রাজ্যাঙ্কে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

‘ঢাকা: এ রেকর্ড অব চেঞ্জিং ফরচুনস’ গ্রন্থে আহমদ হাসান দানি, ‘আকনোগ্রাফি অব বুদ্ধিস্ট অ্যান্ড ব্রাহমানিক্যাল ইমেজেস অব ঢাকা মিউজিয়াম’ গ্রন্থে ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী, ‘বিক্রমপুরের ইতিহাস গ্রন্থে শ্রীযোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত প্রমুখের আলোচনা থেকে এসব তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। কাজেই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠারও আগে ঢাকায় পাকা ইমারত ছিল, মন্দির ছিল এবং প্রতিমাও ছিল। এ সবই প্রমাণ করে যে, ঢাকায় অন্তত সেন যুগেও একটি নগর জনপদ ছিল। তবে সেই জনপদের দালানকোঠা টিকে নেই।

ঢাকায় টিকে থাকা প্রাচীন ইমারত

বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্বেই ছিল সুলতানি শাসন। সেই সময়ে বাংলায় রাজত্ব করতেন স্বাধীন সুলতানরা। বলাই বাহুল্য, এই শাসকদের পদবি ছিল সুলতান। বাংলায় স্বাধীন সুলতানি যুগ টানা চলেছিল ২০০ বছর। ১৩৩৮ সালে তা শুরু হয়েছিল এবং শেষ হয়েছিল ১৫৩৮ সালে। তবে এর আগে-পরেও স্বাধীন রাজাদের অস্তিত্ব ছিল। সুলতানি যুগের প্রথম সুলতান ছিলেন ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ। তাঁর রাজধানী ছিল ঢাকার নিকটবর্তী সোনারগাঁয়। ঢাকায় সুলতানি যুগের যে ইমারতগুলোর কথা জানা যাচ্ছে, সেগুলো ইসলাম ধর্মসংশ্লিষ্ট এবং ধর্মকেন্দ্র। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সুলতানি ইমারতের মধ্যে রয়েছে-

নসওয়াল গলি মসজিদ

ঢাকা শহরের নসওয়াল গলি মহল্লায় একটি মসজিদ ছিল। সেটিকে নসওয়াল গলি মসজিদ বলা হচ্ছে। এখানকার আদি ইমারতটি নেই। সেটি ধ্বংসের পর পুনর্নির্মিত মসজিদটিও ধ্বংস করা হয়েছে। তবে এখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিলালেখ পাওয়া গেছে (ইংরেজি অনুবাদ : অধ্যাপক দানি, ঢাকা : এ রেকর্ড অব চেঞ্জিং ফরচুনস’, বাংলা : আবু জাফর, ২০০৫, পৃ. ১২)। সুলতান নাসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহ্-এর আমলে ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন তারিখে (২০ শাবান, ৮৬৩ হিজরি) একটি মসজিদে তোরণ নির্মাণ ও মসজিদ সুদৃঢ় করার কথা শিলালেখতে আছে। মসজিদটি রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তখন সংস্কার করা হয়েছিল বলে শিলালিপির বর্ণনা থেকে জানা যায়। অনুমান করা হয় যে, মূল মসজিদটি অন্তত আরও পঞ্চাশ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। জীর্ণ হয়ে পড়ার পরই তা সংস্কারের প্রয়োজন হয়েছিল। সেই হিসেবে ১৪৫৯ সালের পঞ্চাশ বছর আগে অর্থাৎ ১৪০৯ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি কোন সময়ে মসজিদটি তৈরি হয়েছিল বলে ধারণা করা চলে। এ শিলালেখতে মুবারকাবাদ নামটি পাওয়া যায়। এই নাম ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের নাম থেকে এসেছে বলেও ধারণা করা যায়।

মাণ্ডার মসজিদ

ঢাকার মাণ্ডায় একটি পুরনো মসজিদ ছিল। ডক্টর নলিনীকান্ত ভট্টশালী মসজিদের ধ্বংসস্তূপ থেকে শিলালেখটি আবিষ্কার করে ঢাকা জাদুঘরে সংরক্ষণ করেছিলেন। এই শিলালেখটি প্রকৃতপক্ষে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দির থেকে সংগ্রহ করা প্রতিমার পেছন পিঠে খোদাই করা হয়েছিল। প্রতিমাটি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত, তবে তা বিষ্ণুর বলে অনুমান করা যায়। ‘করপাস অব অ্যারাবিক অ্যান্ড পারসিয়ান ইনস্ক্রিপশন্স অব বেঙ্গল’, (১৯৯১, পৃ. ১০৫-১০৯) গ্রন্থে আরবি ভাসার শ্লথ রীতির শিলালেখটির অনুবাদ ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ড. আবদুল করিম। চার লাইনে এই শিলালেখ থেকে দেখা যায় যে, ১৪৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারিতে জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহ্-এর আমলে এই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। জালালউদ্দিন মুহম্মদ শাহের রাজত্বকাল ছিল ১৪১৫ থেকে ১৪৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

বিনত বিবির মসজিদ

ঢাকায় সুলতানি যুগের টিকে থাকা ইমারতের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে এটিই সবচেয়ে পুরনো। যদিও এটির বহু সংস্কার হয়েছে এবং ধ্বংস করে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। কোনোরকমে এটির অংশবিশেষ টিকে আছে। এটি এখন ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না এবং এর গা ঘেঁষে একটি বহুতল মসজিদ নির্মিত হয়েছে। শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্য (অনুবাদ: অধ্যাপক দানি, ঢাকা: এ রেকর্ড অব চেঞ্জিং ফরচুনস) অনুযায়ী ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে নাসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহের আমলে মারহামাতের কন্যা মোসাম্মৎ বখ্ত বিনত এটি নির্মাণ করেছিলেন। মূল মসজিদটি এক গম্বুজবিশিষ্ট ছিল। পরে মসজিদটির আয়তন বৃদ্ধিকালে আরও একটি গম্বুজ সংযোজন করা হয়েছিল।

মিরপুরের মসজিদ

এখন যেটি শাহ্ আলী বোগদাদির মাজার, সেটি প্রকৃতপক্ষে একটি মসজিদ ছিল। মৃত্যুর পর শাহ্ আলী বোগদাদিকে মসজিদের ভেতরে সমাহিত করা হয় এবং মসজিদটি সমাধিসৌধের মর্যাদা পায়। এখানে যে শিলালেখ পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে যে, বাংলার সুলতান ইউসুফ শাহের আমলে ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দে খাকান-ই মোয়াজ্জেম এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি বহু সংস্কার হয়েছে। তবে এর ২.৪২ মিটার পুরু দেয়াল বুঝিয়ে দেয় যে, এটি একটি বহু পুরাতন স্থাপনা।

হোসেনশাহী মসজিদ

ঢাকায় সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলের (১৪৯৩-১৫১৯) একটি মসজিদের শিলালেখ পাওয়া গেছে। এটি এ আমলের প্রথম ও একমাত্র শিলালেখ। পুরান ঢাকার বাবুবাজার মসজিদে কালো পাথরের তৈরি এ শিলালেখটি সংরক্ষিত থাকলেও সে মসজিদের অবস্থানস্থল সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না।  (চলবে)