বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ত্রাণের জন্য হাহাকার

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৭, ১৬:৩৩ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭, ১৭:২৯

প্রতীক ওমর
বগুড়া

বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে গত ২৪ ঘণ্টা টানা বৃষ্টি, উজানের পাহাড়ি ঢল এবং ভারত তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেইট খুলে দেয়ায় বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট পয়েন্টে বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক অবনতি হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সারিয়াকান্দি ও ধুনট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৮ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সারিয়াকান্দি, ধুনট এবং সোনাতলা উপজেলার দশ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বন্যা দুর্গত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর, কামালপুর, চন্দনবাইশা ও কর্নিবাড়ি, সোনাতলা উপজেলার মধুপর, তেকানি চুকাইনগর, পাকুল্লা, ধুনটের ভান্ডারবাড়ী, গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন। তিন উপজেলার এসব ইউনিয়নগুলোর দশ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন করে নিম্নাঞ্চলগুলোর লোকালায়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে গৃহহারার সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘরে পানি প্রবেশের কারণে দুর্গত পরিবারগুলো বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয়ের জন্য ছুটছে।

এদিকে লোকালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করার কারণে বিশুদ্ধ পানি, খাবার এবং তীব্র জ্বালানি সংকটে পড়েছে বন্যার্তরা।

তিন উপজেলায় বিভিন্ন ফসলি জমি পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে ২০ হাজার ৫০ কৃষক পরিবার। বন্যার পানির নিচে ডুবে গেছে রোপা আমন, আউশ, বীজতলা, পাট, মরিচ এবং শাকসবজির ক্ষেত। কৃষি অফিসের তথ্যমতে সারিয়াকান্দি তিন হাজার ৫০০ হেক্টর, সোনাতলা ৮২৫ হেক্টর, ধুনট ১৯০ হেক্টর, উপজেলায়  তিন উপজেলার ২০ হাজার ৫০ কৃষকের চার হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির ফসল বর্তমানে পানি নিচে ডুবে গেছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি অফিসের মতে পানি দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করলে ডুবে যাওয়া জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রতুল চন্দ্র সাহা জানান, বন্যা কবলিত তিন উপজেলার ফসলের ক্ষতির পরিমাণ কত হবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তিনি জানান, পানি কত দিন অবস্থান করবে তার ওপর নির্ভর করবে ক্ষতির পরিমাণ। কৃষি অফিস বন্যাদুর্গত এলাকায় কৃষকদের এখন কী করণীয় সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে বাঁধে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু মানবেতর জীবন যাপন করছে। টানা বৃষ্টির কারণে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দামি জিনিষপত্র। শুকনা জ্বালানি, বিশুদ্ধপানির সংকট এসব এলাকায় তীব্র আকার ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত যে ত্রাণ দেয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। অনেকেই অভিযোগ করেছেন তাদের হাতে এখনো কোনো ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি।

এদিকে তিন উপজেলার কমপক্ষে ৭০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন জানান, যমুনার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও বাঁধ যাতে ভেঙে না যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)