চাটমোহরে দোকান বরাদ্দে অনিয়ম, ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৭, ১৮:০৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর হাটের সরকারি জায়গায় (হাট পেরিফেরী) ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মাঝে দোকান বরাদ্দ না দিয়ে চাটমোহর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের কর্মচারীর আত্মীয়, চেয়ারম্যানের ভাই, আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রভাবশালীদের নামে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মিজানুর রহমান দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও এসিল্যান্ড এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।  

এই বরাদ্দের প্রতিবাদে এবং প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মাঝে দোকান বরাদ্দের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে মথুরাপুর হাটের বঞ্চিত ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। মিছিলকারীরা এসি ল্যান্ডের অপসারণসহ অব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া দোকানের বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানান। এই বরাদ্দ নিয়ে এলাকায় যেকোনো মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার দুপুরে মথুরাপুর হাটে সরেজমিনে গেলে প্রায় ৩০ বছর যাবত ব্যবসা করা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করেন, চাটমোহরের এসি ল্যান্ড ৬০ দোকান উচ্ছেদের নোটিশ দেন। এরপর দোকান উচ্ছেদ করা হয়। পরবর্তী সময়ে দোকান বরাদ্দের জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। হাটের প্রকৃত ব্যবসায়ীর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, ভূমি অফিসের কর্মচারীর ভাই, চেয়ারম্যানের ভাই, রাজনীতিবিদ আবেদন করেন। এসিল্যান্ড ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে স্বজনপ্রীতি করে বেশিরভাগ প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান বরাদ্দ না দিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনীতিবিদের দোকান বরাদ্দ দেন। রেজাউল করিম নামের এক ব্যক্তির পরিবারকে একসাথে, একলাইনে সাতটি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দোকানের কর্মচারীদের নাম দিয়ে রেজাউল আরও অন্তত চারটি দোকান বরাদ্দ নিয়েছেন। ডেকোরেটর ব্যবসায়ী রেজাউল এসিল্যান্ডের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত। শুধু তাই নয়, এসিল্যান্ড তার ইচ্ছেমতো পছন্দের লোকদের সামনের পজিশন বরাদ্দ দিয়ে অন্যদের নদীর মধ্যে বরাদ্দ দিয়েছেন। ওষুধের দোকানগুলো এক জায়গায় না রেখে তিনজনকে ভালো পজিশনে ও বাকিদের নদীর মধ্যে ও হাটের শেষমাথায় কোনার মধ্যে পজিশন দিয়েছেন। জনৈক মুফতি মফিজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার কাছে নাকি এসি ল্যান্ড কোরআন শিক্ষা করেছেন। প্রতিদান হিসেবে দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনি কোনোদিন মথুরাপুরে ব্যবসা করেননি। এলআর ফান্ডের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদ করলে তাদের সাথে এসিল্যান্ড চরম দুর্ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানান, ভূমি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর রুহুল আমিনের ভাই আব্দুল আজিজ পেয়েছেন হাটের প্রধান পজিশন। যার বাড়ি পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের টেংগরজানি গ্রামে। তিনি এখানে কখনো ব্যবসা করেননি। ভূমি অফিসের এক কর্মচারী ও তার ভাইয়ের নামে দেয়া হয়েছে হাটের সড়কের সাথে সামনের  দুটি দোকানের বরাদ্দ। যাদের বাড়ি বোঁথড়ে। তারাও কোনোদিন মথুরাপুর হাটে ব্যবসা করেননি। অথচ ২০/৩০ বছর ধরে এই হাটে ব্যবসা করেছেন সুনামের সাথে এমন অনেককে বরাদ্দই দেয়া হয়নি। তাদের আবেদন বাতিল করেছেন, তাদের কোনো কথাই শোনেননি এসিল্যান্ড।

দোকান বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম হয়েছে এবং স্বচ্ছতা ছিল না বলে জানান স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক। এ বিষয়ে মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সরদার আজিজুল হক বলেন, এসিল্যান্ড চরম স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এই দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনি প্রকাশ্যে লটারি করেননি। কারো কথা শোনেন না। যাবার আগে এই কর্মকর্তা হাটের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সংঘাত লাগানোর কাজ করেছেন। চেয়ারম্যান বলেন, তিনি একজনকেই সাতটি দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন। বিষয়টি উপজেলা পরিষদের সভায় তোলা হবে।

এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মিজানুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ১৪০টি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এলাকার লোকজনই এ বরাদ্দ পেয়েছেন। কোনো অনিয়ম করা হয়নি। আমি কাউকে চিনি না। ইন্টারনাল লটারির মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সবাইতো সামনে পাবে না। ভেতরে তো নিতেই হবে।

তার অফিসের কর্মচারীর ভাই বরাদ্দ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, তার আত্মীয় নাকি পেয়েছেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমি চাটমোহরের তিনটি হাটে যা করে গেলাম, তা আর কেউ করবে কি না দেখবেন।

এলাকাবাসী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এলাকার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়াতে এবং প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মাঝে দোকান বরাদ্দে পাবনা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা সরেজমিনে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে সমস্যার সমাধান করবেন বলে আশা সবার।

(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/প্রতিনিধি/জেবি)