অনাথ হাবিবার মহা ধুমধামের বিয়ে আজ

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০১৭, ০৯:২৩ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭, ১২:৪৮

মোহাম্মদ আরজু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি শিশু পরিবারের কন্যা হাবিবা। অনেকটা ধুমধামের সঙ্গেই বিয়ে হচ্ছে ১০ বছর শিশু পরিবারে কাটানো হাবিবার। বিয়েতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার রাতে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনে তার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হয়।  শুক্রবার দুপুরে মহা ধুমধামের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে অনাথ শিশু হাবিবার।

দুপুরে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার তিন শতাধিক অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এই বিয়ের আয়োজন করেছেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম (বার)।

জানা যায়, গত ১০ বছর আগে ‘অনাথ শিশু’ হিসেবে হাবিবার ঠাঁই হয় সরকারি শিশু পরিবারে। হাবিবার বতর্মান বয়স ১৮ বছর। শিশু পরিবারের নীতিমালা অনুযায়ী তার আর সেখানে থাকা হবে না। তাই ডাকা হলো হাবিবার মামা আর মামীকে। মামা-মামীর হাতে হাবিবাকে যখন তুলে দেয়া হয় তখনই সূচনা হয় নতুন এক অধ্যায়ের। শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক রওশন আরার আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন হাবিবা। তখন রওশন আরা অনেকটা বিচলিত ও বিমর্ষ হয়ে পড়েন। পেছনে দিকে তাকিয়ে তিনি দেখতে থাকেন হাবিবাকে। মায়ার বাধনে তিনিও যেন বাধা পড়লেন। তারপর তিনি শিশু পরিবারের পরিচালনা কমিটিকে জানালেন হাবিবাকে পুনর্বাসনের জন্য। পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে বলা হলো হাবিবা আপাতত শিশু পরিবারেই থাকবে। তাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

এরপর থেকেই হাবিবার পুনর্বাসনের নানা চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে মমতাময়ী রওশন আরার। কিন্তু কোনো চেষ্টাতেই সফলতা আসেনি। শেষ পর্যন্ত কথা বলেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে। ভালো ছেলের সন্ধান পেলে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়ারও অনুরোধ জানান রওশন আরা। আলোচনার পর রওশন আরা পুলিশ সুপারের ইতিবাচক সাড়া পেয়ে ফেরেন শিশু পরিবারে। এক পর্যায় পাত্রের সন্ধান মিলল। হাবিবার মামা মামীর সঙ্গে কথা বলে বিয়ের বিষয়টি পাকাপোক্ত করা হয়। হাবিবার জন্য ঠিক করা পাত্রের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করেন পুলিশ সুপার। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার নিজেই হাবিবার বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্নের দায়িত্ব নেন।

হাবিবার হবু স্বামী জেলার কসবা উপজলোর সোনারগাঁও গ্রামের মো. জাকারিয়া আলম। সম্প্রতি পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন তিনি।

আয়োজকরা জানান, বিয়ের অনুষ্ঠানকে সফল করতে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে পুলিশ সুপার ও ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েক দফা মিটিংও হয়েছে।

প্রশাসনের কর্মতাসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিয়েতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক হাবিবাকে এক সেট গহণা দেবেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী নব-দম্পত্তিকে বসবাসের জন্য বরের বাড়িতে একটি ঘর করে দেবেন। এছাড়া জেলা প্রশাসক মো. রেজওয়ানুল রহমান দেবেন সোনার চেইন, বিয়ের শেরোয়ানি, পাগড়ী, নাগরা ও কালার টেলিভিশন। পুলিশ সুপারের সহধর্মনী দেবেন বিয়ের শাড়ী ও গহণা। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে হাবিবার বিয়েতে উপহার দেয়া হবে স্টিলের আলমারি এবং সরকারি শিশু পরিবারের তত্বাবধায়ক রওশন আরা হাবিবাকে দেবেন একটি সেলাই মেশিন। আর অতিথি আপ্যায়ন এবং যাবতীয় খরচ বহন করবেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

শুক্রবার দুপুরে শিশু পরিবারে বরযাত্রী আগমন করবেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টায় বিয়ে পড়ানো হবে। জুম্মা নামাজের পর শুরু হবে খাওয়া দাওয়া। বিকালে নব-দম্পত্তিসহ বর পক্ষের অতিথিরা পুলিশ সুপারের বাসভবন থেকে আপ্যায়ন শেষে হাবিবার শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।

ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/প্রতিনিধি/এমআর