মানবপাচার: থাই জেনারেলসহ ৬২ জনের কারাদণ্ড

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৭, ১২:০১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

থাইল্যান্ডে মানবপাচার চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর এক জেনারেলসহ ৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। যাদের মধ্যে দুজন রাজনীতিক ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।

দুই বছর আগে মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে জঙ্গলে পাচারকারীদের পরিত্যক্ত শিবিরে গণকবরের সন্ধান মেলার পর বিশ্বজুড়ে আলোচনা হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১০৩ আসামির বিরুদ্ধে বুধবার রায় ঘোষণা করে ব্যাংককের একটি আদালত।

সাজা প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন থাইল্যান্ড সেনাবাহিনীর এক জেনারেল, যার ২৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া ৭০ বছরের বেশি সাজা পেয়েছেন ১৭ আসামি। বিচারের মুখোমুখি হওয়াদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদধারী কর্মকর্তা মানাস থাইল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। ওই এলাকা পরিণত হয়েছিল মানবপাচারের কেন্দ্রে, পাচারকারীদের এই নেটওয়ার্ক মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। ২০১৫ সালের জুনে গ্রেপ্তার হন তিনি। পাচারের ঘটনার সময় থাইল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল মানাস।

২০১৫ সালের মে মাসে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় সংখলা প্রদেশের পাহাড়ি জঙ্গলের গণকবর থেকে উদ্ধার হয় ৩৬ জনের মৃতদেহ। এরপর মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী জঙ্গলে পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি গণকবরের সন্ধান। পাচারের শিকার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন আটকে রাখার পর যাদের মৃত্যু হতো তাদের জঙ্গলেই কবর দিয়েছিল পাচারকারীরা।

এ ঘটনায় বিশ্বপ্যাপী ব্যাপক সমালোচনায় পড়ে থাইল্যান্ডের তখনকার জান্তা সরকার। দেশটিতে দাস ব্যবসার খবর আলোড়ন তোলে সারা বিশ্বে। একপর্যায় পাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে বাধ্য হয় থাই কর্তৃপক্ষ। বেরিয়ে আসে মানবপাচারের সঙ্গে সরকার ও সেনাবাহীনীর প্রভাবশালী অনেকেই জড়িত।

এ ঘটনায় করা মামলায় দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে বুধবার রায় দিয়েছে থাইল্যান্ডের একটি আদালত। মোট ৫০০ পৃষ্ঠার রায়ে ১০২ আসামির মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছেন ৬২ জন। দোষী সাব্যস্তদের বেশিরভাগ থাই নাগরিক তবে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশেরও কয়েকজনও সাজা পেয়েছেন।

মামলায় ১৭ জন ৭০ বছরের বেশি সময় করে কারাদণ্ড পেয়েছেন। এর মধ্যে বন্দিশিবির পরিচালনাকারী মিয়ানমারের এক নাগরিককে ৯৪ বছরের সাজা দিয়েছে আদালত। তিনি আনওয়ার নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম সোয়ে নেইং। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সংখলার পাহাড়ি জঙ্গলে মানবপাচারকারীদের যেসব শিবিরের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল, তার একটি পরিচালনাকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন আনওয়ার। 

৬২ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অপহরণ, হত্যা ও ধর্ষণের বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

দণ্ডিতদের মধ্যে অন্তত একজন, পাজুবান অংকাচোতেপান, আধুনিককালের এই ‘দাস ব্যবসার’ অন্যতম হোতা বলে ব্যাংককপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়। ‘বিগ ব্রাদার টং’ নামে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলীয় সাতুন প্রদেশের এই রাজনীতিক এক সময় প্রাদেশিক সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। তাকে ৭৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

৭৮ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত আরেক রাজনীতিক বান্নাকং পংফল সংখলা প্রদশের পেদাং বেসারের সাবেক মেয়র।

(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/জেএস)