৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ হচ্ছে: প্রধান তথ্য কমিশনার

প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০১৭, ০৭:৫৯ | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭, ০৮:৫৭

​মহিউদ্দিন মাহী, ঢাকাটাইমস

তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে মনে করেন প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘এই আইনটি করা হয়েছে আবেগপ্রবণ হয়ে। এ কারণেই আইনটির অপব্যবহার হচ্ছে। এই ধারাটিতে এমন অনেক বিষয় জুড়ে দেয়া হয়েছে, এতে কেউ যদি মনে করে তার সম্মানহানি হতে পারে তাহলেও এই ধারায় মামলা করা যায়। আর মামলা হলে পুলিশ যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে।’

এই গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরি অ্যাক্টে এই বিষয়টিকে একটু সহজ করা হয়েছে। এখানে সাজা কমানো হয়েছে। আর ধারাটিকে জামিনযোগ্য ধারা করা হয়েছে। আইনটির খসড়ায় এসব আছে। সম্প্রতি ঢাকাটাইমসের মুখোমুখি হয়েছেন এই গণ যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।

৫৭ ধারা নিয়ে তো বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে...

৫৭ ধারা নিয়ে তো সমালোচনা হবেই। কারণ এটার অপপ্রয়োগ হচ্ছে। এই ধারার মধ্যে বেশ কিছু বিষয় খুবই বিস্তৃত। এর মাধ্যমে পুলিশ যে কাউকে যে কোন সময় গ্রেপ্তার করতে পারে। ঠুনকো অভিযোগ হলেও এটা করতে পারে পুলিশ।

আইনটি দরকার হলো কেন?

প্রথমেই বলি, আইসিটি অ্যাক্ট দরকার আছে কি না। অবশ্যই দরকার আছে। কারণ আমাদের অনলাইন মিডিয়া এবং সামাজিক মাধ্যম দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। দিন দিন তথ্যপ্রযুক্তির উৎকার্ষতা বাড়ছে। এসব বিবেচনায় একটা আইন দরকার ছিল। ২০০৬ সালে আইনটি যখন করা হয় তখন বলা হয়েছে এটি অনলাইন সিগনেচার অথেনটিকেশনের জন্য করা হয়েছে। কারণ অনলাইন ব্যাংকিং আছে। এসব কিছু বিবেচনায় আইনটি করা হয়।

তখন কি ৫৭ ধারা ছিল?

না, তখন ৫৭ ধারা ছিল না।

এটি যুক্ত হলো কখন?

২০১৩ সালে জঙ্গি তৎপরতার পর ৫৭ ধারাটি সংযোজন করা হয়। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে জঙ্গিরা। ওই সময় এই আইনটির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

এখন সমালোচনা কেন?

আইনটি কঠিন করে করা হয়েছে। এটি জামিন অযোগ্য ধারায় করা হয়েছে। সাজাও বেশি। সর্বনিম্ন সাত বছর। আর সর্বোচ্চ ১৪ বছর। আইনটি জামিন অযোগ্য ধারায় হওয়ায় অপপ্রয়োগ বেশি হচ্ছে। আর এ কারণেই সমালোচনার ঝড় বইছে। এখন পর্যন্ত প্রায় তিনশ মামলা আছে এ সংক্রান্ত।

আইনটি বাতিল হওয়া উচিত কিনা

আইনটি বাতিল হওয়া উচিত। কারণ এটি অবেগপ্রবণ, এমবিসাস আইন। আবেগের বশবর্তী হয়ে আইনটি করা হয়েছে। তাই আমি মনে করি এই আইনটি বাতিল হওয়া উচিত।

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন হচ্ছে...

আশার কথা হচ্ছে- ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট হচ্ছে। এটির ১৯ ধারায় আমি দেখেছি শাস্তি কম রাখা হয়েছে। আর জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এতে করে হয়রানি এবং অপপ্রয়োগ কিছুটা কমবে। তবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনটি নিয়ে অংশীজনদের মতামত নেয়া দরকার। আর আমি মনে করি সবকিছু নিয়ে সমন্বিত আইন হওয়া উচিত।

সমন্বিত আইন কেমন?

এমন আইন হওয়া উচিত যে আইনে সব ধরনের মাধ্যম সন্নিবেশিত থাকবে। অর্থাৎ ইনটিগ্রেটেড আইন হওয়া উচিত, যেখানে সব কিছুই থাকবে। কারণ গণমাধ্যম মানেই একটা ইনটিগ্রেটেড মিডিয়া। একটি পত্রিকার অনলাইন আছে। আবার ছবি আছে। একইভাবে একটি ইলেকট্রনিক মাধ্যমেরও ওয়েব আছে। সুতরাং সমন্বিত আইন হওয়া জরুরি। আইনটি এমন হওয়া উচিত যেন সব কিছু কাভার করে, আইসিটি এবং মিডিয়া। তা না হলে একের পর এক সমালোচনা হবে।পরিবর্তন করতে হবে।

তথ্য অধিকার আইন ও ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক কিনা?

বিরোধ ও দ্বন্দ্ব অবশ্যই আছে। কারণ ৫৭ ধারার কারণে অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত হতে পারছে না। মানুষ অবাধে তার মতামত ব্যক্ত করতে পারছে না। তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে। কি বলে আবার কোন বিপদে পড়বে। এসব কিছু বিবেচনায় বলা যায় তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক।

তথ্য অধিকার আইনটি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা বলুনএটার সীমাবদ্ধতা আছে

তথ্য অধিকার আইনটি ভাল। কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য এটি ভালো নয়। কারণ একজন সাংবাদিক ২০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না। অপেক্ষা করতে গেলে তার সংবাদমূল্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এই আইনের সংশোধন হওয়া দরকার কি না?

সময়ের তাগিদে এই আইনটি আরও সংশোধন বা পরিমার্জন হতে পারে। তবে এখন যে আইনটি আছে সেটার ভাল ব্যবহার হলে জনগণ অনেক উপকৃত হতে পারে।

আরটিআই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে

তথ্য অধিকার আইনটি হওয়ার কারণে এখন মানুষ তথ্য পাওয়ার অধিকার সম্পর্কে জানতে পারছে। তারা অনেক বেশি সচেতন হচ্ছে। সরকারি অফিসগুলোও তাদের সেই পুরনো সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। এটিকে অবশ্যই ইতিবাচক দিব বলেই মনে করতে হবে।

আরটিআই বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কি না?

সমস্যা তেমন নেই। তবে আমাদের সংস্কৃতিক পরিবর্তন দরকার। ব্রিটিশ আমলের আমাদের যে অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট ছিল সেটি থেকে এখনো অনেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। তাই এখন আমাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিপ্লব দরকার।

আরটিআই কি দুর্নীতি কমাতে সক্ষম হয়েছে?

অবশ্যই, তথ্য অধিকার আইনের কারণে দুর্নীতি কমেছে। একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। তবে অনেকটা কমেছে। এই আইনের কারণে অনেকেই মনে করছে এ সম্পর্কে জনগণ জানতে চাইলে তথ্য দিতে হবে। আর তথ্য দিলে ‍দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। এ কারণে দুর্নীতি অনেক কমেছে বলে আমার কাছে মনে হয়।

সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ

ঢাকাটাইমসকেও ধন্যবাদ। 

ঢাকাটাইমস/২৪চুলাই/এমএম/ডব্লিউবি