সিটি নির্বাচন: রাজশাহীতে নৌকার মাঝি লিটনই

প্রকাশ | ২৫ জুলাই ২০১৭, ০৮:০৯ | আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭, ০৮:১১

রিমন রহমান, রাজশাহী

গত দুই বারের ধারাবাহিকতায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ক্ষমতাসীন দল স্থানীয়ভাবে তার নাম ঘোষণা করেছে। আর কেন্দ্র থেকেও তাকেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ছেলে।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নানা হিসাব নিকাশ। ২০১৩ সালে এই সিটি নির্বাচন হয়েছিল। সে হিসাবে আগামী বছরের শুরুতে বা মাঝামাঝিতে হবে এই নির্বাচন। এতে কে কোথায় কোন দলের হয়ে লড়বেন, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে রাজনীতি নিয়ে উৎসাহী মানুষদের। দলের নেতা-কর্মীরাও জানতে চাইছেন, কে হচ্ছেন প্রার্থী।

এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থিতার দিক থেকে অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতারা। আর বিএনপিতে গত নির্বাচনে বিজয়ী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে আগামী নির্বাচনে তিনিই প্রার্থী হচ্ছেন কি না, সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। তারা লিটনকে সামনে নিয়েই আগাতে চায়। দলের কেন্দ্র থেকেও তাকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

রাজশাহী সদর আসনটি বরাবর আওয়ামী লীগের দুর্বল এলাকাগুলোর একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই এলাকায় আওয়ামী লীগ বেশ কয়েকটি নির্বাচনে একেবারেই ভাল করতে পারেনি। এমনকি ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে তৃতীয় হয়েছে দলটি। যদিও আসনটি ছিল প্রয়াত জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানের।

বাবার নির্বাচনী এলাকায় ১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করেন লিটন। ওই নির্বাচনেও তিনি হেরে যান। তবে আওয়ামী লীগকে তিনি তৃতীয় অবস্থান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়ে আসেন। আর এর পথ পরিক্রমায় ২০০৮ সালের মেয়র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনুকে হারিয়ে দেন লিটন।

২০০৯ সালে এই আসনে মহাজোটের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার জয়কে লিটনের সাজানো বাগানে ফুল ফোটা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।

পাঁচ বছর মেয়রের পদে থাকার পর রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন করেন লিটন। তার পরও ২০১৩ সালের নির্বাচনে বেশ বড় ব্যবধানে হেরে যান তিনি। এর পেছনে সে সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রাজধানীতে শাপলা চত্বর থেকে হেফাজত কর্মীদের হটানোর পরে নানা অপপ্রচারসহ, দলের ভেতরের কোন্দলকে দায়ী করা হয়েছিল। তবে এই পরাজয়ের পরও লিটনের ওপর আস্থা কমেনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রের।

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক পাওয়ার নিশ্চয়তা পেয়ে এরই মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন লিটন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের ক্ষত শুকিয়ে এখন থেকেই তিনি শুরু করেছেন গণসংযোগ এবং প্রচার-প্রচারণা। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নিজের সময়কালের অর্জন আর বর্তমান মেয়রের ‘ব্যর্থতা’ তুলে ধরছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার তাদের দাবি ছিল লিটনকে রাজশাহীর যে কোনো একটি আসনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করানোর। সেক্ষেত্রে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার লড়তেন সিটি নির্বাচনে। তবে দলের সভানেত্রী মেয়র প্রার্থী হিসেবে লিটনকেই পছন্দ করার এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন তারা। এখন মেয়র পদে প্রার্থী হতে পারেন, এমন একজন আওয়ামী লীগ নেতার নামও শোনা যাচ্ছে না।

লিটন মেয়র হওয়ার সময় পাঁচ বছর নগরীর উন্নয়নে প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার কাজ করেছেন তিনি। অথচ তিনি পরাজিত হওয়ার পর ভাটা পড়ে সেসব উন্নয়নে। এ কারণে নগরবাসী এখনও লিটনকেই অনুভব করেন বলে দাবি করে আসছেন তার অনুসারীরা।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘লিটন প্রার্থী হলে আমি তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই প্রার্থী হবে না। কারণ, সবাই মনে করেন, লিটনের চেয়ে বেশি যোগ্য প্রার্থী আর নেই। নির্বাচনে খায়রুজ্জামান লিটন আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন এবং জয়ী হবেন। এ ব্যাপারে তাদের কোনো সন্দেহ নেই।’

ডাবলু বলেন, ‘গত নির্বাচনের সময় শাপলা চত্বর নিয়ে হেফাজতে ইসলামীর অপপ্রচার আর জামায়াতে ইসলামীর অর্থায়নে বিএনপি প্রার্থীর ভোট কেনাবেচার কারণে লিটন পরাজিত হয়েছিলেন। তবে এখন মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। নগরবাসী এও বুঝেছেন, লিটন মেয়র থাকাকালে নগরীর যে উন্নয়ন হয়েছে, তা আর কখনোই হয়নি। তাই নগরভবনে প্রয়োজন তাকেই।’

এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘গত ৮ জুলাই দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলের সভানেত্রী আমাকে মেয়র পদে প্রার্থীতা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। স্থানীয় নেতাদের কাছেও কেন্দ্রের নির্দেশনা এসেছে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি। এখন থেকেই আমরা ভোটের মাঠ গোছাচ্ছি। বিভিন্ন এলাকায় চলছে উঠান বৈঠকও। দল আমাদের কাছে যা প্রত্যাশা করে, আমরা তা দিতে চাই।’

ঢাকাটাইমস/২৫জুলাই/আরআর/ডব্লিউবি