‘ক্ষীণ’ আশায় সিদ্দিকুর

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৭, ২০:৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে চোখ হারানো কলেজছাত্র সিদ্দিকুর রহমান দেশে ফিরেছেন শুক্রবার বিকালে। তবে তার চোখের আলো ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ছয় সপ্তাহ। ‘ক্ষীণ’ আশার ওপর ভর করেই সিদ্দিকুর তাকিয়ে আছেন ভালো কিছুর আশায়। 

শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান সরকারি তিতুমীর কলেজের এই শিক্ষার্থী। সেখান থেকে তিনি সরাসরি চলে যান চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। আপাতত তিনি সেখানেই থাকবেন।

বিমানবন্দরে চোখের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সিদ্দিকুর বলেন, ‘ডাক্তার বলেছেন ‘লিটল হোপ’...একেবারে সামান্য সম্ভাবনা আছে ভালো হওয়ার। তবে আরও ছয় সপ্তাহ গেলে তা বোঝা যাবে।’

এ সময় ঢাকাটাইমসের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে সিদ্দিকুর জানান, দেশে ফেরার পর সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কেউ তার সাথে যোগাযোগ করেননি। তবে তার ডাক্তারদের সাথে সরকারের যোগাযোগ হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তিনি।

পরবর্তী চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্দিকুর বলেন, ‘আজকে ছুটির দিন হওয়ায় হাসপাতালের অনেক ডাক্তার নেই। আগামীকাল সব ডাক্তার এলে তারা বৈঠকে বসবেন। সেই বৈঠকে আমার চিকিৎসার ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।’

সিদ্দিকুর তার চোখ হারানো নিয়ে বিচার দাবি করেন কি না জানতে চাইলে চুপ থাকেন, চোখের পানি ফেলেন।

তাঁর চাকরির ব্যাপারে জানতে চাইলে সিদ্দিকুর সেই মুহূর্তে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এর আগে বিমানবন্দরে নেমে সাংবাদিকদের সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমার রক্ত, আমার চোখ অবশ্যই সার্থক হবে, যদি সাত কলেজে লেখাপড়ার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। আমি তা–ই চাই। আমি রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানাই। আমার সামর্থ্য ছিল না দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর। রাষ্ট্র আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমার খোঁজ নিয়েছেন।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে সিদ্দিকুর বলেন, ‘আমি আমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই, পড়াশোনা শেষ করতে চাই। আমি যেন অবহেলার পাত্র না হই। সম্মানজনক একটা অবস্থান চাই।’

এ সময় হাসপাতালে তাঁকে স্বাগত জানাতে আসা তাঁর সহপাঠীরা ‘দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’ দাবি করেন।

এরপর সিদ্দিকুরের কেবিনে তার বন্ধুরা একে একে আসতে থাকেন, তার ভালোমন্দ খোঁজখবর নেন এবং পাশাপাশি সবাই তার সাথে সেলফি তোলেন।

ভারতের স্থানীয় সময় ১২টার দিকে মালদ্বীপ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হন সিদ্দিকুর। একইসময়ে তার সঙ্গে যাওয়া চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল এহসান মেনন ও তার বড়ভাই নওয়াব আলীও দেশে ফিরে আসেন।

সিদ্দিকুরের বরাত দিয়ে সহপাঠী শেখ ফরিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা বন্ধুরা তাকে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করেছি। তাকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়েছে। সেখানেই বাকি চিকিৎসা হবে সিদ্দিকুরের।’

ফরিদ জানান, বৃহস্পতিবার চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ের চিকিৎসক লিঙ্গম গোপালের সঙ্গে দেখা করেছেন সিদ্দিকুর। চিকিৎসক বলেছেন, তার বাঁ চোখের রেটিনার ৯০ শতাংশই নষ্ট। বাকি ১০ শতাংশে আলো ফিরে আসা ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ডান চোখের দৃষ্টি দেশে থাকতেই নষ্ট হয়। যার কারণে আজ সিদ্দিকুর দেশে ফিরে আসছেন।

পরীক্ষার তারিখ ঘোষণাসহ সাত দফা দাবিতে গত ২০ জুলাই রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকালে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে সিদ্দিকুরসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার দুই চোখে কয়েকটি অস্ত্রোপচারে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ভারতের চেন্নাইয়ে পাঠানো হয়। এদিকে সিদ্দিকুরের ওপর হামলার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তর ও রমনা জোন দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করলেও গতকাল পর্যন্ত সেগুলোর প্রতিদেন প্রকাশ করা হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/এসও/জেবি)