রায় মোকাবেলা রাজনৈতিকভাবেও: ১৪ দল

প্রকাশ | ১৩ আগস্ট ২০১৭, ১৯:০৩ | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০১৭, ২০:৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় আইনগনভাবে মোকাবেলার কথা বলেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে ক্ষমতাসীন জোট ১৪ দল এই রায়কে আইনগতর পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও মোকাবেলার ঘোষণাও দিয়েছেন। এই রায়ের পর্যবেক্ষণকে অপ্রাসঙ্গিক, অগ্রহণযোগ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন তারা।  

রবিবার বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোটের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই অবস্থান জানান হয়।

গত বৃহস্পতিবার সরকারের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী রায়ের তীব্র সমালোচনা করেও এর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বলেন, রায়কে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই।

এরই মধ্যে রায়ের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষমতাসীন দল সমর্থক আইনজীবীদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবারও কর্মসূচি রয়েছে তাদের। আবার এই রায়ের প্রতিবাদে কর্মসূচি দেয়ার সমালোচনাও করেছেন আইনমন্ত্রী।

তবে ১৪ দলের বৈঠক শেষে সমন্বয়ক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বৈধ সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে রায়ে যে পর্যবেক্ষণ রয়েছে তা চৌদ্দ দল প্রত্যাখ্যান করছি। সেই সঙ্গে এই রায় বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। বাতিল করতে হবে। আমরা এটা আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।’

গত ১ আগস্ট প্রকাশ হওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে সংসদকে অপরিপক্ক বলা হয়েছে। এই জাতি কারও একক নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়নি-এমন মন্তব্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ এর আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

নাসিম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে দেশের মানুষ জানে। বঙ্গবন্ধু যে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তা চন্দ্র সূর্যের মতই সত্যি। এটা নিয়ে রায়ে যা বলা হয়েছে তা জনগণ মেনে নেবে না, ক্ষমা করবে না। সুতরাং এ রায়ের পুনর্বিবেচনা জরুরি।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘এই রায়ে জনগণের অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। সংবিধানে আছে সব কিছুর মালিক জনগণ সুতরাং জনগণের প্রতিনিধিদের হাতেই ক্ষমতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বলা যায় রায় সংবিধান পরিপন্থী। আর ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে এতে করে স্বাধীনতা বিরোধীদেরউস্কানি দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু অমীমাংসিত অবস্থানে নিতে চাইছে। সুতরাং এই রায় প্রত্যাখ্যান করছি।’

জাসদের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের রায় হয়ে যাওয়ার পর তা জনগণের সম্পদ হয়ে যায়। সে সম্পদ নিয়ে আলোচনা সমালোচন হতে পারে। তা কোনোভাবেই আদালত অবমাননা নয়, অন্যায় নয়। এ রায়ে জাতীয় সংসদকে কটাক্ষ করা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে খাটো করা হয়েছে। সুতরাং এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিষয় বহির্ভূত ও অপ্রসাঙ্গিক। মুক্তিযুদ্ধ ও জনগণের শক্তিকে ম্লান করার জন্যই এ রায় দেয়া হয়েছে।’

‘ষোড়শ সংশোধনী থাকলেও ক্ষতি ছিল না বরং বিচারপতিদের কেউ একে অন্যের প্রতি অবিচার করলে তার সঠিক বিচারের সুযোগ ছিল। সুতরাং এ রায় বাতিল হওয়া জরুরি’ বলেন ইনু।

১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া বলেন, ‘এই রায়ে সংসদকে অবমাননা করা হয়েছে। আমি জানি না মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রধান বিচারপতি কোথায় ছিলেন। আসলে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তিনি জানেন না বলেই দুঃসাহস দেখিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত যেন চক্রান্ত করতে পারে সে সুযোগ করে দিয়েছেন।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বলেছেন এ রায় নিয়ে রাজনীতি করা অনুচিত। কিন্তু দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে রায়ে কথা বলা হয়েছে তা উপেক্ষা করে থাকা অনুচিত কি না। সুতরাং আমরা কোন বোধ নিয়ে এগুব তা নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা মনে করি এবং দৃঢ়ভাবে বলেই আমাদের ইতিহাসের প্রকৃত ধারায় ফিরে আসতে হবে, রায়কে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।'

জাতীয় পার্টি (জে পি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেছেন, ‘এই রায়ে শুধু চৌদ্দ দল নয় সারাদেশ সংক্ষুব্ধ। সুতরাং রায় বাতিল হোক।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকাটাইমস/১৩আগস্ট/টিএ/ডব্লিউবি