‘কাদেরের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি কীভাবে দেখা করলেন?’

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৭, ১৬:৪৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কেন এবং কীভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন-তা জানতে চেয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় এই কথা বলেন মান্না। ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়: অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক ও বাংলাদেশর রাজনীতি’ শীর্ষক এই গোলটেবিলের আয়োজন করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি।

গত ১ আগস্ট প্রকাশ হওয়া ষোড়শ সংশোধনী মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে সংসদ, শাসন ব্যবস্থা নিয়ে নানা মন্তব্য করা হয়। এগুলো নিয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ সরকার ও সরকারি দল। এই রায়ে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়েছে বলে প্রধান বিচারপতির সমালোচনায় মুখর তারা। এই পরিস্থিতিতে গত শনিবার রাতে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে তার সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। আর বুধবার রাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কাদেরের বৈঠকের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মান্না। বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি কীভাবে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের সাথে দেখা করেন? তার সাথে দেখা করলেন, তাহলে আমার সাথেও দেখা করেন। আমার জামিন দিয়েছেন আপনি, পাসপোর্ট রেখে দিয়েছেন। আমার হার্টে তিনটি ব্লক রয়েছে, বিদেশে যেতে হবে। কিন্তু তাতো হওয়ার নয়।’

ষোড়শ সংশোধনীর রায় বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজন ছিল বলেও মন্তব্য করেন মান্না। বলেন, ‘এই রায় নিয়ে সংসদ সদস্যদের যে বক্তব্য, এই সংসদ সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কি? আবার সরকার বলছে মূল রায় নিয়ে কথা বলার কিছু নেই, আছে রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে। আসলে এই সরকার সংসদকই বিশ্বাস করে না। রায় পূর্ণাঙ্গ হবে, এই রায়কে বেশি করে সমর্থন করি।’

সরকার রিভিউ করেও রায় পাল্টাতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন মান্না। তিনি বলেন, ‘এই রায় পরিবর্তন করা যবে না, সরকার রিভিউ করে করুক। সমগ্র জাতির জন্য এই রায় একটি দিক নির্দেশনা। এই রায় ষোল কোটি মানুষের একটি দিক নির্দেশনা।’

২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটের দিন মানুষ ছিল না দাবি করে মান্না বলেন, ‘সরকার জোর করে ক্ষমতায় আছে, ক্ষমতায় থাকার তাদের কোন রাইট নেই।’ তিনি বলেন, ‘রায় নিয়ে সরকার খুব বিপাকে আছে, বানের পানিতে মানুষ ডুবে যাচ্ছে। সেদিকে তারা তাকাতে পারছে না। সরকারের শাসন করবার মতো অবস্থা নেই, এখন নিজেদের রক্ষার জন্য ব্যস্ত।’

 

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট যে কথা বলবে, তা নিয়ে বিতর্ক চলবে না। সেটি মেনে নেওয়াটাই সংবিধানসম্মত। সাত জন বিচারপতি অভিন্ন মত দিয়েছেন ষোড়শ সংশোধনী রায়ে, উপায় নেই তা মানতে হবে। সংসদে সব কিছু বলা যায়, সেখানে আদালত অবমাননা হবে না। কিন্তু নিয়ম যারা মানে না তাদেরকে ইমম্যাচুয়েট বললে ভুল হবে না।’

বিকল্পধারা নেতা বলেন, ‘রায় নিয়ে যে বচন শুনলাম সংসদ সদস্যদের মুখে, তা তাদের মুখে মানায় না। একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে লজ্জা পাই। রায় নিয়ে একজন সিনিয়র মন্ত্রী বললেন, যতবার রায় দিবেন, তত বার সংসদে পাস হবে। অবশ্য পরে দল থেকে বলা হয়েছে এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তুফানের বেগে যে বক্তব্য এসেছে তা আদালত অবমাননা কিনা, তা আদালত দেখবে।’

ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়কে ‘সাহসী’ আখ্যা দিয়ে বি চৌধুরী বলেন, ‘জনগণ মনে করে আদালতের পর্যবেক্ষণ সঠিক ছিল। বিচারকদর প্রভাবিত করা বিবেক সম্মত নয়। সরকারকে এটা মানতে হবে।...কিন্তু তাদের বক্তব্য দেখে মনে হচ্ছে বর্তমান সরকার কোর্টের সঙ্গে লড়াই করছে, এটা অনভিপ্রেত।’

সভাপতির বক্তব্যে জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘গত ৪৬ বছরে এই দেশে কী কী আপত্তিকর, তাই পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। অথচ প্রধান বিচারপতির জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাকে শান্তি কমিটির সদস্য বলা হচ্ছে, রাবিশ।’

রায়ের পর্যবেক্ষণ পুরোপুরি সঠিক মন্তব্য করে রব বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রাম বিপ্লব কোন এক ব্যক্তি করে না পৃথিবীর ইতিহাসে। তবে মুক্তিযুদ্ধের নেতা বঙ্গবন্ধু এতে কোন দ্বিমত নেই ‘

রব বলেন, ‘উন্নয়নের গণতন্ত্রের অবস্থা হলো ঢাকা শহরে বন্যা। এর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। আর তার জন্য আর একটা শক্তি প্রয়োজন, সেটা হলো তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি।’

ঢাকাটাইমস/১৭আগস্ট/জিএম/ডব্লিউবি