ক্রেতাশূন্য ঠাকুরগাঁওয়ের পশুর হাট, খামারিদের মাথায় হাত

প্রকাশ | ২৭ আগস্ট ২০১৭, ১৮:২২

বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও থেকে

কোরবানি ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমে উঠছে পশুর হাটগুলো। ইতোমধ্যে বাজারে প্রচুর গরুর আমদানি হচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বন্যার কারণে বাইরে থেকে বেপারি বা ক্রেতা না আসায় গরুর হাটে কেনাবেচা নেই বললেই চলে। ফলে খামার মালিক ও ব্যবসায়ীরা গরু বিক্রি করতে না পেরে চরম হতাশায় ভুগছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ১৫টির মতো পশুর হাট রয়েছে। হাটগুলো হচ্ছে- রামনাথ, লাহিড়ী, খোঁচাবাড়ি, ফাঁড়াবাড়ী, নেকমরদ, মাদারগঞ্জ, কাতিহার যাদুরানী ও গড়েয়া হাট। কোরবানি উপলক্ষে এসব হাটে প্রচুর গরুর আমদানি হচ্ছে। দেশীয় খামারে মোটাতাজাকরণ গরুসহ ভারতীয় গরুও রয়েছে।

শুক্রবার জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে ব্যাপক পরিমাণ গরুর আমদানি হয়েছে। দেশীয় খামারে মোটাতাজাকরণ গরুর পরিমাণ বেশি। ছোট গরু থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল আকারের গরুও রয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত গরুর তুলনায় ক্রেতা নেই বললেও চলে।

আব্দুল জলিল, নজিব উদ্দীন নামে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কোরবানি উপলক্ষে তারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে গৃহস্থদের বাড়ি এবং খামার থেকে গরু কিনে এনেছেন। কিন্তু  ক্রেতার অভাবে গরু বিক্রি করতে পারছেন না। বর্তমানে তারা চোখে সর্ষের ফুল দেখছেন। কারণ ক্রেতারা যে দাম বলছেন তাতে গরু প্রতি কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

হারুন অর রশিদ নামে একজন খামারি অভিযোগ করে ঢাকাটাইমসকে বলেন, কাঁচা ঘাস, খড়, খৈল, খুদ, ফিড থেকে শুরু করে সবধরনের জিনিসের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। সারা বছর একটি গরু পালন করতে যে ব্যয় হয় সে তুলনায় গরুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এ বছর বন্যার কারণে বাইরে থেকে বেপারি না আসায় তাদের গরু চাহিদা খুব কম। তাই বর্তমান বাজারে গরু বিক্রি করে তাদের লোকসান দিতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, আমরা প্রতি বছর গরু বিক্রির লাভের টাকা দিয়ে কোবরানির ঈদ পালন করে থাকি। কিন্তু এ বছর লাভ তো দূরের কথা পুঁজি ঘাটতি হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের সন্তান পরিজন নিয়ে ঈদ করা সম্ভব হবে না।

রমজান আলী নামে একজন গরুর রশিদকারী ঢাকাটাইমসকে জানান,গত বছর বর্তমান সময়ে গরুর রশিদ দিতে দিতে ফুরসত পাওয়া যেত না। আর এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি বিক্রীত গরুর রশিদ করতে পেরেছেন তিনি।

অবশ্য জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, আসন্ন ঈদে ঠাকুরগাঁও জেলায় পশুর  চাহিদা প্রায় ৩৫-৩৬ হাজার। আর জেলার বিভিন্ন খামার ও বাসাবাড়িতে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে প্রায় ৩৩ হাজার, ছাগল ১২ হাজার আর ভেড়া দুই হাজার। এখানে পালিত পশু দিয়ে জেলার চাহিদা মিটিয়ে কমপক্ষে ৪-৫ হাজার গরু বাইরে বিক্রি করা হবে। জেলা পশুসম্পদ বিভাগ শুরু থেকে এসব কার্যক্রম দেখভাল করে আসছে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. ফারহাত আহম্মদ ঢাকাটাইমসকে জানান, প্রতিবারের মতো এ বছরও জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসব হাটবাজারে যাতে প্রতারক চক্র স্থানীয় খামারি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিন বসানো হবে। এছাড়াও ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মিলনমেলা যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। পকেটমার ও অন্যান্য প্রতারক চক্র দ্বারা যাতে কোনো গরু বিক্রেতা প্রতারিত না হয় সে ব্যবস্থা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৭আগস্ট/প্রতিনিধি/জেবি)