শপিংমলে নেই কেনাকাটা, হতাশায় বিক্রেতারা

প্রকাশ | ৩০ আগস্ট ২০১৭, ১৯:১৮ | আপডেট: ৩০ আগস্ট ২০১৭, ১৯:২৯

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস

‘বিক্রি নাই, সবাই বসে আছি। আপনারে এসব কথা বলেও কোনো লাভ নেই। আরে বাবা ঈদের বিক্রিতো দূরের কথা ঘর ভাড়াই ওঠে না। কর্মচারীদের বেতন দিমু কেমনে বুঝতে পারতাছি না।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের চাঁদ সন্সের মালিক আবদুর রাজ্জাক। তাঁর দোকানে বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবিতে ঠাঁসা। কী নেই তাঁর দোকানে। সুলতান, রইস, বাহুবলী, টিউবলাইট, রাজশাহী সিল্কসহ নানা ডিজাইনের দেশি-বিদেশি পাজ্ঞাবি।

আবদুর রাজ্জাক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঈদের কোনো আমেজ নেই, বিক্রিও নেই। বিক্রি স্বাভাবিকের চেয়েও খারাপ। দেখতেই পারছেন আমরা সবাই বসে আছি। সাধারণত কোরবানি ঈদে বিক্রি একটু কম হয়, কিন্তু এতটা কম কোনো বছরই হয় নাই। কম হবে না কেন পুরা দেশে বন্যা, মানুষ পানিতে ভাসতেছে।’

আলাপচারিতার মাঝখানে তাঁর দোকানে পাজ্ঞাবি কেনার জন্য এক ক্রেতা প্রবেশ করেন। আবদুর রাজ্জাক একটি পাজ্ঞাবি বিক্রির জন্য কত অনুনয়-বিনয়ই না করলেন। দাম কম রাখবেন বলেও ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার কোনো চেষ্টাই কাজে আসেনি।

এলিফ্যান্ট রোডের আরেক ব্যবসায়ী আলপনা প্লাজার কর্ণধার আরসাদ কবিরাজ ঢাকাটাইমকে বলেন, ‘ভাই বিক্রি নাই বললেই চলে। সকাল দশটায় দোকান খুলছি এখন মাগরিবের আজানের সময় হইছে। যাত্রা করতে পারি নাই। এত খারাপ অবস্থা হবে এই ঈদের সময়ে কল্পনাও করি নাই।’

সরেজমিনে এলিফ্যান্ট রোডের আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারাও একই হতাশার গল্প শোনান। তাঁরা প্রতি মুহূর্তে অপেক্ষায় থাকেন ক্রেতার। কিন্তু ক্রেতাও আসে না, তাদের বিক্রিও হয় না।

এলিফ্যান্ট রোড মাড়িয়ে ধানমন্ডি হকার্স, চাঁদনি চক, গাউছিয়া, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার ও নিউমার্কেটে গিয়ে একই চিত্র দেখা যায়।

ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের শাড়ি ব্যবসায়ী কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের খারাপ সময়ের কথা আর কী বলবো। রোজার ঈদে মানুষ শপিং করছে ইন্ডিয়া থেকে, ভাবছি কোরবানের সময় একটু ব্যবসা হবে। কিন্তু সেটাও হয়নি, আর হওয়ার সময়ও নাই।’

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি পোশাক ও প্রসাধনীতে সেজেছে রাজধানীর শপিং মলগুলো। কোরবানি ঈদের মাত্র তিন দিন থাকলেও এখনো জমে উঠেনি কেনাকাটা। স্বাভাবিক দিনের মতোই শপিং মলগুলাতে চলছে কেনাকাটা। ঈদের কোনো আমেজ নেই।

তবে ঈদুল আজহায় পেশাক ও প্রসাধনীর মার্কেটের বেচাকেনা কম হয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

বসুন্ধরা শপিং মলের চিত্র

পণ্যের কালেকশান আর ডিজাইনের দিক থেকে বসুন্ধরা শপিং মল প্রত্যেক ঈদকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নিয়ে আসা হয় নিত্যনতুন পণ্য। এবারের ঈদেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এখানেও জমেনি ঈদ বাজার। স্বাভাবিক দিনের মতো করেই চলছে কেনাকাটা। ক্রেতা আকর্ষণের জন্য পণ্যভেদে মূল্যছাড় দিয়েও ক্রেতা ভেড়াতে পারেনি বিক্রেতারা।

সরেজমিনে ইনফিনিটি, দেশি-দশ, লুবানন, রিচম্যান, স্মাটেক্স, আড়ং, ইজি, মনেরেখ শাড়িজ, জ্যোতিসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের দোকান ঘুরে হতাশার চিত্রই দেখা যায়।

বসুন্ধরা সিটিতে ক্রেতা সংকট তা বলা যাবে না। তারপরও কেন বিক্রি হচ্ছে না জানতে চাইলে রিচম্যানের ম্যানেজার রুহুল আমিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেশের অবস্থা ভালো না। বাংলাদেশের প্রায় জেলাতেই বন্যা, মানুষ পানিতে বসবাস করছে। এক কথায় বলতে পারি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ। তাই ঈদের কোনো আমেজ নেই। আমাদের বিক্রিও নেই। আমরা এবারের ঈদে যেটা বিক্রি করলাম সেটা স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কম।’

বসুন্ধরা শপিং মলে আসা ক্রেতারা বলছেন, কোরবানির ঈদে প্রধান আকর্ষণ থাকে কোরবানির পশু কেনা ঘিরে। তাই কেনাকাটা কম করছেন তারা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আসা আকরাম হোসাইন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই ঈদ হচ্ছে পশু কেনার ঈদ, জামাকাপড় কেনার নয়। এই ঈদে পোশাক কেনা লোকের সংখ্যা খুবই কম। আমিও কিনতাম না, শুধু আমার বাচ্চা মেয়েটা আবদার করেছে ঈদে নতুন জামা লাগবে। তাই কিনে দিচ্ছি।’

বিক্রেতাদের মন্দা গেলেও ক্রেতা-বিক্রেতা সবার মুখে একই সুর। কোরবানির ঈদের আনন্দ পশুর হাটে, শপিং মলে নয়।

(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/এনআই/জেবি)