গফরগাঁওয়ে শেষ দেখা শকুন

প্রকাশ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:২৩

ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান, ঢাকাটাইমস

দুই বছর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে কোনো এক বিকালে দেখা দিয়েছিল শকুন। বিরল বিলুপ্তপ্রায় আকারে বিশাল শকুনটি দেখতে ভিড় করেছিল উৎসুক জনতা।

সেময় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের অনুরোধে শকুনটিকে গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। এরপর আর গোটা ময়মনসিংহ জেলার কোথাও শকুনের দেখা মেলেনি।

এক সময় আকাশে দলবেঁধে উড়ে চলা শকুন দেখা গেলেও এটি এখন অতীতের বিষয়। প্রবীণরা মনে করেন, পাখিকুলের মধ্যে শকুন সবচেয়ে দীর্ঘজীবী। তার গড় আয়ু কমপক্ষে একশ বছর। ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও শকুন আকাশে উড়তে দেখা যেত, কিন্তু এখন আর তা চোখে পড়ে না।

শকুন হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ পশু চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডাইক্লোফেনের ব্যবহার।
পরিবেশবিদদের মতে, শকুনই একমাত্র পাখি, যা আকাশে অনেক উঁচুতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উড়তে পারে।
বিভিন্ন দেশে গবাদি পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘ডাইক্লোফেন’ ব্যথানাশক ওষুধের প্রভাবে শকুন মারা যাচ্ছে। এ কারণে ডাইক্লোফেন ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে নিষিদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে শকুন বিলুপ্তির পথে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত পশুর মাংস শকুনের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু ডাইক্লোফেন দেয়া হয়েছে এমন মৃত পশুর মাংস খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে দুই তিন দিনের মধ্যে শকুনের মৃত্যু ঘটে।

২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব ভেটেরিনারি মেডিসিনের গবেষক ড. লিন্ডসে এক গবেষণায় দেখেন, পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনের ব্যবহারই শকুন বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। মানবসৃষ্ট কারণে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচতে পৃথিবীর অনেক দেশেই পশু চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনের পরিবর্তে সমান কার্যকর অথচ শকুনবান্ধব ‘মেলোক্সিক্যাম’ নামক ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ, ক্যামেরুন, সুদান, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, ঘানা, চীন, ভারত ও নেপালে এ জাতীয় শকুন খাদ্য ও বসবাসের জন্য ঘুরে বেড়ায়। শকুনকে বিলুপ্তি থেকে বাঁচাতে প্রতিবছর ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস পালিত হয়ে থাকে।

ময়মনসিংহের নতুন প্রজন্ম শকুন সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৪সেপ্টেম্বর/জেডএ)