হাসপাতালে অভিনব প্রতারণা, ১২ জনের দণ্ড

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৩১ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৮:৪৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মাদক সেবন, ভুয়া চিকিৎসক ও ভুতুড়ে বিল তৈরিসহ অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণার অভিযোগে ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

রবিবার রাত ১০টা থেকে তিনটা পর্যন্ত র‌্যাব-২ এর উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম।

ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাবুল হোসেন (৩২), হালদার (৩০), মো. জাহিদ আহমেদ (৩৯), মো. সাদেক (৩৪), মো. রিয়াজ আহমেদ (৩৪), মো. সোহাগ (৩১), বি আর আহমেদ শরীফ (৪০),  দেলোয়ার হোসেন (৬২), মো. জাহিদ হোসেন (২৩), মো. মিজানুর রহমান (৩৬), মো. সাইফুল ইসলাম (৩২), মো. ইসলাম (২৫)। এদের মধ্যে দুইজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড, পাঁচজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড, একজনকে দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড, তিনজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড এবং একজনকে দুই মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

র‌্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, শেরেবাংলা নগরের জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল থেকে দালাল চক্রের মাধ্যমে রোগীদের প্রতারণামূলকভাবে সুচিকিৎসার প্রলোভনে ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কর্তৃক মৌখিক রেফার্ড করার মিথ্যা কথা বলে এবং বিভিন্ন অপ-কৌশলে মোহাম্মদপুরের নিউ ওয়েলকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে  চিকিৎসার নামে প্রথমেই বিভিন্ন ধরনের ডায়াগনস্টিক টেস্ট, ঔষধ ও সার্জিকেল সামগ্রী কেনা ও সার্ভিস চার্জসহ একটি ভুতুড়ে বিল ধরিয়ে দিয়ে রোগী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।

র‌্যাব জানায়,  এমন অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা  করা হয়। আদালত চলাকালে দেখা যায়, নিউ ওয়েলকেয়ার হাসপাতালে গ্রামের অসহায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত রোগীদের ভয় দেখিয়ে যেমন পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগীর হাত-পা কেটে ফেলতে হয়, আমাদের ক্লিনিকে আসুন ঔষধ দিয়ে আরোগ্য লাভ করবেন। কিন্তু ভর্তি করানোর পর অপারেশনসহ ঔষধের বিল বাবদ লাখ লাখ টাকা দাবি করে, এমনকি টাকা পরিশোধ করার জন্য অনেকেই নিজের ভিটে-মাটি বিক্রয় করেও নিষ্কৃতি পাচ্ছে না। অনেক অসহায় রোগীকে রক্ত দেয়ার নাম করে রক্তের ব্যাগ ঝুলিয়ে রেখে রক্ত চলছে জানিয়ে গ্রামের রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। 

র‌্যাবের ওই সূত্র জানিয়েছে, দালালরা নিজেরাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসাবে পরিচয় দেয়। আটককৃত বি আর আহমেদ শরীফ জিজ্ঞাসাবাদে জানায় প্রায় দুই বছর ধরে তিনি এ ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছেন। তিনিই পঙ্গু হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে আনা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। শরীফ নাম পরিবর্তন করে ডা. বি আর আহমেদ শরীফ, এমবিবিএস, এফসিপিএস (অর্থোঃ) পার্ট-২, সহ ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র বা রোগের কোনো বিবরণ বলতে না পারলেও বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি ব্যবহার করে আসছেন। তিনি স্বীকার করেন যে, রোগীর চিকিৎসার জন্য ঔষধ লেখার জন্য বিএমডিসির অনুমতি নাই এবং তাদের দেয়া প্রেসক্রিপশনে একদিনে দশবার ইনজেকশান দিতে হবে লেখা থাকলেও বাস্তবে তা রোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল মাত্র। এছাড়াও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক টেস্ট, সার্জিকেল সামগ্রী ও ঔষধ তাদের দেয়া প্রেসক্রিপশনে লিখে থাকে এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সে সকল ঔষধ, ডায়াগনস্টিক টেস্ট, সার্জিকেল সামগ্রী তাদের কাছ থেকে কিনতে বাধ্য করা হয়, যা বিক্রি করে তারা বাজারমূল্যের চেয়ে অধিকহারে অর্থ অবৈধভাবে গ্রহণ করছে।

র‌্যাবের ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে হাসপাতালের একটি রুম থেকে বিদেশি মদ ও গাঁজা নিয়ে মেতে থাকা অবস্থায় হাসপাতালের মালিকপক্ষ ও তাদের এজেন্ট দালালচক্রের আটজনকে আটক করে র‌্যাবের আভিযানিক দল। আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, পঙ্গু হাসপাতালের রোগীদের যারা রাতের বেলায় ভর্তি হতে আসে তাদের সু-কৌশলে ভাগিয়ে নেয়ার জন্য দালালচক্র পঙ্গু হাসপাতালের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় এবং একে অপরকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসাবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে রোগীদের অখ্যাত হাসপাতালসমুহে কমিশনের লোভে রোগীদের পাঠিয়ে দিয়ে আসছে। আটককৃতদের দেয়া তথ্য মতে পঙ্গু হাসপাতাল এলাকা থেকে দালাল চক্রের আরো চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আটককৃতদের মধ্যে বাবুল হোসেনের নামে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রিয়াজ আহমেদের নামে ঢাকা জেলার সাভার এবং প্রশান্ত হালদারের নামে মাদারীপুর জেলার ডাসার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৯সেপ্টেম্বর/এএ/জেবি)