হলি আর্টিজান

আইনজীবী-তদন্তকারীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই হাসনাতের পরিবারের

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১১:২৫

আশিক আহমেদ
ঢাকাটাইমস

গুলশানের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলায় গ্রেপ্তার প্রকৌশলী হাসনাত করিমের আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই তার পরিবারের। যোগাযোগ নেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গেও। এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে এই সাবেক নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক।

তবে আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলেও মাঝেমধ্যে কারাগারে হাসনাত করিমকে দেখতে যান পরিবারের সদস্যরা। আগামী ১০ অক্টোবর তার মামলার দিন ধার্য রয়েছে।

এদিকে এক বছর পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তকাজ। বিভিন্ন সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কাউন্টার টেররিজমের প্রধান মনিরুল ইসলাম দ্রুতই এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হবে বললেও বাস্তবে তা হয়নি।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের ওই অভিজাত রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ইফতারের পর সন্ধ্যারাতে হামলার পরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন। পরে শেষরাতে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হয়।

জঙ্গি হামলার পর সেখানে অন্যদের সঙ্গে জিম্মি ছিলেন হাসনাত ও তার স্ত্রী-সন্তানরা। তবে তাদের কোনো ক্ষতি করেনি জঙ্গিরা। হাসনাতকে একসময় জঙ্গি পরিবেষ্টিত হয়ে হলি আর্টিজানের ছাদে ঘুরতে দেখা যায়- এমন ছবি ও ভিডিও পরে প্রকাশিত হয়। জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার সন্দেহভাজন হিসেবে হাসনাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে, যিনি হামলার দিন হলি আর্টিজানে ছিলেন, তাকে পরে আদালতের নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয়।

এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন আরো পাঁচজন- গুলশান হলি আর্টিজান বেকারি হামলায় মূল সমন্বয়ক (পুলিশি তদন্তে দাবি) তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ।

গত এক বছরে জঙ্গিবিরোধী পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন আস্তানায় নিহত জঙ্গিদের মধ্যে বেশ কজন ছিলেন যারা হলি আর্টিজান হামলা পরিকল্পনায় জড়িত ছিল বলে পুলিশ জানায়। 

মামলার তদন্ত অভিযোগপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির বলেন, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তাই এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না কবে অভিযোগপত্র দেয়া হবে। তবে তদন্তকাজ চলছে, শেষ হলেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।’ হাসনাতের পরিবারের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই বলে জানান তিনি।

মাস ছয়েক আগে হাসনাত করিমের বাবা প্রকৌশলী রেজাউল করিম মারা যান। তার পর থেকে হাসনাতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ কমে যায়। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনের নম্বর বন্ধ রয়েছে বলে জানান ওই আইনজীবী।

হাসনাত করিমের বাবা প্রকৌশলী রেজাউল করিম ছেলের মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে অ্যাডভোকেট সানোয়ার হোসেন সমাজির সঙ্গে যোগাযোগ ও পরামর্শ করতেন। পরে তাদের এক আত্মীয় অ্যাডভোকেট শাহ সাহাবুদ্দিনকেও ওকালতনামা দিয়ে হাসনাত করিমের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করেন তিনি।

জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট শাহ মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে হাসনাত করিমের বাবা মারা গেছেন। তিনি সব সময় যোগাযোগ রাখতেন আমার সঙ্গে। গত তিন মাস ধরে আর হাসনাত করিমের পরিবারের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। তারা যোগাযোগ না করলেও আমি মামলা খোঁজখবর নেব।’

তার কাজে হাসনাত করিমের পরিবার হয়তো সন্তুষ্ট নয়- এমন মন্তব্য করে অ্যাডভোকেট সাহাবুদ্দিন বলেন, আমার মনে হয় আমার প্রতি তাদের আগ্রহ কম। আমি তার জামিনের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ও জজ আদালতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। তাকে কারাগারে ডিভিশন সুবিধা দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু মামলাটা সম্পর্কে ধারণা তো থাকতে হবে।  

গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন হাসনাত করিম। পরে তাকে নেওয়া হয় গাজীপুরের কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কারাগারে। সেখানে তিনি সাধারণ হাজতিদের সেলে রয়েছেন। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেল সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, নিয়মানুযায়ী হাসনাতের পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে থাকেন।

বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের দ্বৈত নাগরিক হাসনাত হলি আর্টিজান ঘটনার কিছুদিন আগে দেশে ফিরে বাবার আর্কিটেক্ট ফার্মে পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ঘটনার দিন মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে তিনি সপরিবারে হলি আর্টিজানে খেতে গিয়েছিলেন।

হলি আর্টিজানে হামলার পর একজন কোরিয়ান নাগরিকের গোপনে ধারণ করা ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর হাসনাত করিম ও তাহমিদের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। হামলায় সরাসরি জড়িত ও সেনা কমান্ডো অভিযানে নিহত দুজন জঙ্গি ছিল নর্থ সাউথ পড়ুয়া্। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলেও অভিযোগ পুলিশের।

দফায় দফায় রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে হাসনাত করিম হলি আর্টিজান হামলায় জড়িত থাকার অভিযাগ অস্বীকার করেন। পুলিশও এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি এখন পর‌্যন্ত। তবে আদালতের নির্দেশে তাহমিদকে ছেড়ে দেয়া হয়।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হয় তার প্রথম আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানোয়ার হোসেন সমাজির সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, মামলাটি এখন আর আমার কাছে নেই। হাসনাত করিমের বাবা আমার সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। তিন মারা যাওয়ার পরে তার পরিবারের কেউই এখন আর যোগাযোগ করেন না।’

(ঢাকাটাইমস/২৩সেপ্টেম্বর/মোআ)