বিল বকেয়া, এনাম হাসপাতালে ‘বন্দী’ নবজাতক ও মা

প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০৮:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

চিকিৎসা বিল আংশিক বাকি থাকায় গত এক মাস ধরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নবজাতক ও তার মা বন্দী দশায় আটক বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

পরিবারটি জানায়, জমি বিক্রি ও সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে তারা হাসপাতালের ১২ লাখ টাকা বিলের মধ্যে ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে, কিন্তু তাতেও মুক্তি পাচ্ছে না নবজাতক ও মা। এমনকি প্রতিনিয়ত চিকিৎসকদের অপমান সইতে হচ্ছে তাদের। সাংসদের মালিকানাধীন হাসপাতাল বলে থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে ফিরে এসেছেন নবজাতকের বাবা আনিসুর রহমান।

ঢাকা-১৯ আসনের সাংসদ ডা. এনামুর রহমানের প্রতিষ্ঠান সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা দিয়ে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছিল। সেই সুবাদে প্রধানমন্ত্রীর নজর কেড়েছিলেন ডা. এনামুর রহমান। আর তাতে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিযোগিতায় হন ঢাকা-১৯ আসনের সাংসদ।

আর এই হাসপাতালের বিরুদ্ধেই কিনা টাকা না পেয়ে রোগীকে বন্দী করে রাখার অভিযোগ!

এর আগেও অগ্নিদগ্ধ সেলিম মিয়া নামে এক যুবক চিকিৎসার বিল পরিশোধ করতে না পারায় তাকে হাসপাতালে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

শনিবার রাতে সরেজমিনে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সপ্তম তলায় শিশু ওয়ার্ডের ৭০১ নম্বর বেডে গিয়ে দেখা যায় নবজাতক শিশু ও তার মাকে। এ সময় ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্সদের নজরদারিতে রাখার ব্যাপারটিও লক্ষণীয় ছিল।

নবজাতকের বাবা আনিসুর রহমান ঢাকাটাইমসকে অভিযোগ করে বলেন,  প্রসববেদনার কারণে স্ত্রী হ্যাপি আক্তারকে গত ১৪ জুলাই সাভারের ল্যাব জোন হাসপাতালে ভর্তি করান তিনি। পরে সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। টানা নয় দিন ভর্তি থাকার পর ২৫ জুলাই প্রফেসর শিউলী তার অপারেশন করেন। কিন্তু মাত্র ছয় মাস বয়সে সন্তান জন্ম নেওয়ায় নবজাতকের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে শুরু হয়। তাকে কয়েক দিন নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের ইনকিউবিটরে রাখা হয়। এরপর চিকিৎসা শেষে শিশুটি সুস্থ হওয়ায় গত ১৭ আগস্ট তাদের হাসপাতাল থেকে বাড়িতে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে হাসপাতালের সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করতে না পারায় তাদের আর যেতে দেওয়া হয়নি।

আনসির রহমান জানান, এর আট দিন পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি সাদা কাগজে সাই নিয়ে মা ও তার নবজাতককে পাশের শিশু ওয়ার্ডে ৭০১ নম্বর সাধারণ বেডে স্থানান্তর করেন। আর হাসপাতালের বিল পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে কর্তৃপক্ষ। এমনকি তার সন্তান ও স্ত্রীর চিকিৎসাসেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে এই প্রতিবেদক ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক অর্ণবের কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার স্ত্রী ও সন্তানের চিকিৎসা বাবদ ১২ লাখের বেশি টাকা বিল করেছে। গ্রামের শেষ সম্বল ভিটে-মাটি বিক্রি করে এ পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় সাত লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেন তারা। এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন। দেওয়ার মতো আর কোনো অর্থ নেই তাদের কাছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বরং বারবার ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে। উপায়ন্তু না পেয়ে সর্বশেষ তিনি সাভার মডেল থানার শরণাপন্ন হলে সেখান থেকেও তাকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. এহসানুল করিম বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ১০ শতাংশ শয্যা দরিদ্র্য রোগীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার বিধান রয়েছে। অধিকাংশ বড় হাসপাতালে এ ধরনের সেবা দেয় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে কোনো প্রতিষ্ঠান বিনা চিকিৎসায় ফেরত দিতে পারবে না। কোনো দরিদ্র রোগী ব্যয় নির্বাহ করতে না পারলে ১০ শতাংশ শয্যার ব্যয় থেকে তা সমন্বয় করতে পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এনাম মেডিকেলের নবজাতক ও মায়ের বিষয়টি সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমজাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাটাইমসকে জানান, রোগীদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে সে ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে দরখাস্ত করতে হবে। তাহলে দরিদ্র কোটায় ঐ রোগী বিলের ব্যাপারে ছাড় পাবেন। আর যদি এনাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বিল তৈরি করে থাকেন সেটার জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের সত্যতা জানতে চাইলে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. নাজিম বলেন, ‘ব্যাপারটি হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী সাংসদ ডা. এনামুর রহমান অবগত আছেন। এ ব্যাপারে আপনি তার সাথেই কথা বলুন।’ এ কথা বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/মোআ)