মালিতে নিহত জাকিরুলের বাড়িতে শোকের মাতম
প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:১৮ | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:২১
মালিতে নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জাকিরুলের নেত্রকোণার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। সদাচারি জাকিরুলকে অকালে হারিয়ে এলাকাবাসীও শোকে মুহ্যমান।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিপুল মিয়া জানান, মৃত্যুর সংবাদে এলাকার শত শত মানুষ জাকিরুলদের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে আসেন, পূর্বধলা থানার পরিদর্শক অভি রঞ্জন সরকার, স্থানীয় জারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজেদা খাতুন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রবিবার দায়িত্ব পালন শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের পুতে রাখা ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইজ (আইইডি) বিস্ফোরণে অন্য আরো দুই সহকর্মীর সাথে তিনিও নিহত হন। এ সময় আরও চারজন আহত হন।
নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া গ্রামের সরকার বাড়ির সফির উদ্দিনের ছেলে জাকিরুল ইসলাম সোহাগ। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট জাকিরুল।
জাকিরুলের বড় ভাই নাজমুল আলম সরকার জানান, ২০০১ সালে যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। বিয়ে করেন ময়নসিংহের মেয়ে তামান্না সরকারকে। এরই মাঝে তিনি দুই পুত্র সন্তানের জনক হন। সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি পেয়ে হন ল্যান্স করপোরাল। চলতি বছরের মে মাসের ১৭ তারিখে বাংলাদেশ ছেড়ে যান আফ্রিকার মালিতে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে। সেনাবাহিনীর কাছ থেকে মৃত্যুর এই সংবাদ রবিবারই পান বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, সেনাবাহিনী থেকে তাদেরকে জানানো হয়েছে, চারদিনের মধ্যে যেকোনো দিন মরদেহ আসবে। পরে পারিবারিক কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হবে বলেন তিনি।
জারিয়া গ্রামের বাসিন্দা মুকুল তালুকদার জানান, জাকিরুলের বাড়িতে স্বজনদের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। এলাকার মানুষও শোকগ্রস্ত।
সোমবার সকালে জাকিরুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন সবাই কাঁদছেন। কান্নার রোলে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এলাকার অনেককে দেখা গেছে চোখ মুছতে। জাকিরুলের মা ও স্ত্রীকে নানা স্মৃতির কথা বলতে বলতে আহাজারি করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল মন্ডল বলেন, জাকিরুল চিলেন সদাচারি একজন মানুষ। এলাকার কারো সাথে অসদাচরণ করেননি। সবার সাথে মিশতেন। ছুটিতে বাড়ি এলে গ্রামের সবার খোঁজখবর নিতেন। এমন একজন মানুষ অকালে চলে যাওয়ায় আমরা ব্যথিত।
জাকিরুলের চাচা আব্দুর রশিদ সরকার বলেন, গতকাল খবর পাওয়ার পর থেকে জাকিরুলের অসুস্থ বাবা সফির উদ্দিন বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। মা জোসনা সরকারকেও সান্ত্বনা দিয়েও রাখা যাচ্ছে না। ছেলে জাকিরুলের ছবি বুকে নিয়ে আহাজারি করছেন। জাকিরুলের স্ত্রী তামান্না সরকারেরও একই অবস্থা। জাকিরুলের দুইটি ছেলে। বড় ছেলে তায়িসের বয়স ছয় বছর। ছোট ছেলে তাজদিকের বয়স তিন বছর। এই শিশু অবুঝ শিশুগুলো এতিম হয়ে গেল।
এলাকার মিয়াজ মন্ডল বলেন, আমাদের সন্তান জাকিরুল বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে শহীদ হয়েছেন। আমরা শোকাহতের পাশাপাশি গর্বিতও। জাকিরুল বীরের বেশে আত্মাহুতি দিয়েছেন।
(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)