‘কদিন কাঁচামরিচ খাইয়েন না’

প্রকাশ | ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:০৪ | আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৭, ১৯:১৩

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

জাকির হোসেন। থাকেন একটি মেসে। বরাবরের মতো আজ কাঁচাবাজারে পাঁচ টাকার কাঁচামরিচ দিতে বললেন দোকানিকে। কাঁচামরিচ তো দিলই না, তাকে দোকানির পরামর্শ- আপাতত কিছুদিন কাঁচামরিচ না খেতে।

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিন-চার দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম প্রকারভেদে বেড়ে গিয়েছিল ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত। এ নিয়ে চারপাশে হইচই পড়ে গেলে সরকারের নানা উদ্যোগে অবশেষে চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগামে টান পড়ে।

ভোক্তারা সেই ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে এবার দৈত্যের আকারে হাজির হয় কাঁচামরিচের চোখরাঙানি। কেজিতে ১০-২০-৩০ টাকা নস্যি, ১১০ টাকা পর‌্যন্ত বেড়ে ২৫০ টাকায় ওঠে সবুজ লঙ্কা।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দোকানির কাছে এখন ১০-২০ টাকার কাঁচামরিচ চাওয়া চক্ষুলজ্জার ব্যাপার যেন। অথচ কদিন আগেও ১০ টাকার কাঁচামরিচ কিনলে তা দিয়ে মাঝারি একটি পরিবারের দুই-তিন দিনের চাহিদা মিটে গেছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম কেজিপ্রতি ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা উঠে থেমে গেছে, তা ভাবতে নিষেধ করছেন দোকানিরা। তারা বলছেন দাম নাকি আরো বাড়বে। কারণ আমদানি কম, আর বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেছে মরিচ চাষ হওয়া জমি।

লেখার শুরুতে যে জাকির হোসেনের কথা বললাম, তিনি থাকেন রাজধানীর কাঁঠালবাগানে। আজ বাজারে পাঁচ টাকার কাঁচামরিচ কিনতে গিয়ে রীতিমতো অপমানিত হয়েছেন বলে জানান তিনি। জাকির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি মেসে থাকি। একা মানুষ, তাই অল্প বাজার করি। গত শুক্রবারও পাঁচ টাকার কাঁচামরিচ কিনেছি। কিন্তু আজ সেই দোকানি আমাকে পাঁচ টাকার কাঁচা মরিচ চাইতেই বলে, কাঁচামরিচ ছাড়া কিছুদিন খান। দাম কমলে পরে আইসেন।’

নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তদের অনেককে দেখা যায়, কাঁচামরিচ কেনার সময় সাধারণত ৫, ১০, ১৫ বা ২০ টাকার মরিচ কেনে। হঠাৎ কেজিতে ১১০ টাকা বাড়ায় সব শ্রেণির মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত।

ভোক্তাদের জন্য একরকম ‘স্বস্তি’ যে কাঁচামরিচের সঙ্গে নতুন করে প্রতিযোগিতা করেনি অন্যান্য সবজি। এগুলোর দাম ঈদের সময় যে চড়েছিল, সেখানেই স্থিতিশীল আছে। এ ক্ষেত্রেও সবজি বিক্রেতারা বলছেন, চালান কম, আর বৃষ্টির কারণে কমছে না সবজির বাজার।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁপে ১৫-২০, আলু ২০-২৫, পটল ৩৫-৪০, টমেটো ৯০-১০০, বেগুন লম্বা ও গোল ৬০-৭০, বরবটি ৬০, কাঁকরোল ৫০-৬০, ঢেঁড়স ৫০-৬০, শসা ৩৫-৪০, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৩৫ (প্রতি টুকরা), কচুমুখি ৩০-৪০, চিচিঙ্গা ৪০-৫০, গাজর ৪০-৫০, ধুন্দুল ৪০, দেশি পেঁয়াজ ৪০-৪৫, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০-৪৫, রসুন ৭০-৮০, মূলা ৩০-৩৫,  করলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া আকারভেদে লাউ প্রতিটি ৪০-৫০ টাকা, লেবু হালি ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

লাউশাক প্রতি আঁটি ২০ টাকা, লালশাক ১৫ টাকা, ডাঁটাশাক ১৫ টাকা, কলমি ১০ টাকা, পুঁইশাক ২৫-৩০ টাকা, পাটশাক ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় অন্যান্য মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে তেলাপিয়া মাছ ১১০-১৩০ টাকা, কই মাছ ১৬০-১৮০ টাকা, শিং ৫০০-৬০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৫৫০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০-৭০০ টাকা, রুই মাছ আকারভেদে ২৫০-৩৫০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের বাজার গত সপ্তাহের দাম অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৩০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে । গরু প্রতি কেজি রাখা হচ্ছে ৪৫০-৪৮০ টাকা, আর খাসি ৭৭০ টাকা।

চালের বাজার

গত সপ্তাহে পাইকারি বাজারে প্রকারভেদে চালের দাম কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকা কমলেও খুচরা বাজারে কমেছে মাত্র দুই-তিন টাকা। এখন মোটা চাল ৫০ টাক থেকে নেমে ৪৮ টাকা, মিনিকেট ৬৫ থেকে নেমে ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০ টাকা থেকে নেমে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৬৮ টাকায়।

 (ঢাকাটাইমস/৬অক্টোবর/মোআ)