বিশ্বের সেরা ১০ জাদুঘর

প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:৫৩

নজরুল ইসলাম, ঢাকাটাইমস

পৃথিবীর বুকে মানুষের জয়যাত্রার আগে থেকে আজ পর্যন্ত সব ইতিহাসের সংগ্রহশালার নামই হলো জাদুঘর। জাদুঘর একটি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের নিদর্শন বহন করে। একটি জাতির শেকড়ের সন্ধান পাওয়া যায় জাদুঘর থেকেই। শুধু তাই নয়, একটি জাতির ঐতিহ্যকে পরিচয় করিয়ে দেয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। তাই প্রত্যেক জাতির কাছে জাদুঘরের রয়েছে আলাদা কদর। বিশ্বে এমন সব বিখ্যাত জাদুঘর রয়েছে যা সভ্যতার ইতিহাস জানানোর পাশাপাশি এদের দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী দেখে পাঠকের শুধু চোখ জুড়ায় না, মনও ভরিয়ে দেয়। চলুন দেখে নিই বিশ্বের সেরা দশটি  জাদুঘর সম্পর্কে।

ব্রিটিশ মিউজিয়াম

এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জাদুঘরগুলোর একটি। জাদুঘরটি ১৭৫৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত নানা চিত্রকর্মের বিশাল সংগ্রহ নিয়ে এটি বর্তমানের অন্যতম সেরা জাদুঘর। হাজার বছরের ইতিহাসের নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। সংগ্রহের তালিকায় পৃথিবীর পুরো ইতিহাসটাই যেন লুকিয়ে আছে এ জাদুঘরে। পদার্থবিজ্ঞানী স্যার হ্যান্স স্লোয়েনের সংগৃহীত জিনিসপত্রের ওপর ভিত্তি করেই জাদুঘরটি শুরুতে গড়ে ওঠে। বর্তমানে পুরো জাদুঘরটির সংগ্রহশালা ৭০ লাখ ছাড়িয়েছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ৪০ লাখ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিবছর গড়ে ৬০ লাখ দর্শনার্থী এই জাদুঘর দেখতে যান। মিসরীয় সভ্যতার বিশাল অংশ রয়েছে এখানে।

প্রাদো মিউজিয়াম

স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে এটির অবস্থান। পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত জাদুঘর এটি। বিখ্যাত জুয়ান দে ভিলানুয়েভা এই জাদুঘরটি ডিজাইন করেন। এই জাদুঘরকে পুরো পশ্চিমা চিত্রকর্মের এক অসাধারণ সংস্করণ বলা হয়। এই জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ হলো রুবেনসের ‘দ্য থ্রি গ্রেসেস’। বিখ্যাত চিত্রকর ভেলাজকুয়েজের ‘লাস মেনিয়াস’ চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব চিত্রকরদের আঁকা ছবিতে সমৃদ্ধ এই জাদুঘর। বিখ্যাত ইউরোপিয়ান চিত্রকলার বিশাল এক সংগ্রহশালা বলা হয় প্রাদো মিউজিয়ামকে। স্পেনের প্রাচীন সভ্যতাগুলোকে সমৃদ্ধ করেছে জাদুঘরটি। ফলে জাদুঘরটি পেয়েছে বিশ্বজোড়া খ্যাতি।

ল্যুভর মিউজিয়াম

পৃথিবীর বিখ্যাত সব জাদুঘরের তালিকায় ওপরের সারিতেই থাকবে ল্যুভর মিউজিয়ামটি। পৃথিবীর সেরা স্থাপত্য সৌন্দর্যের মধ্যেও এটি সেরাদের তালিকায় রয়েছে। এই জাদুঘরে পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর ও মহামূল্যবান অনেক চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য রয়েছে। প্যারিসের সিন নদীর তীরে এর অবস্থান। বর্তমানে এতে ছয়টি প্রশাসনিক বিভাগসহ পৃথক গ্যালারিতে গ্রিক, রোমান, মিসরীয় ও প্রাচ্য দেশীয় অসংখ্য শিল্প নিদর্শন রয়েছে। এ ছাড়া মধ্যযুগ, রেনেসাঁ এবং আধুনিককালেরও বহু বিখ্যাত শিল্পী ও ভাস্করের শিল্প ও ভাস্কর্য কর্ম রয়েছে। বিশ্বনন্দিত শিল্পীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রেম্বান্ট, রুবেন্স, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ও টিশিয়ানের নাম। দ্য ভিঞ্চির বিশ্ববিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘মোনালিসা’ রয়েছে এই জাদুঘরে।

গিমে মিউজিয়াম

ল্যুভর মিউজিয়ামের মতো আরেকটি সমৃদ্ধ জাদুঘরের নাম বলতে গেলেই সবার আগে চলে আসে গিমে মিউজিয়ামের নাম। এটির অবস্থান ফ্রান্সে। ফ্রান্সের বিশিষ্ট শিল্পপতি এমিল গিমের নামানুসারে এই জাদুঘরের নাম করা হয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৮৭৯ সালে। প্রতিষ্ঠার প্রায় এক দশক পেরোনোর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে শুরু হয় গিমে জাদুঘরের নতুন যাত্রা। এ জাদুঘরটি বিশেষভাবে পূর্ব ও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর প্রত্নসামগ্রী দিয়ে সাজানো রয়েছে। এই জাদুঘরটিতে জাপান, চীন, ভারতবর্ষ, মিসর ও  গ্রিসের বিপুল পরিমাণ প্রত্নসামগ্রী রয়েছে।

মাদাম তুসো মিউজিয়াম

বিখ্যাত জাদুঘরগুলোর কথা বলা হবে আর সেখানে মাদাম তুসো জাদুঘরের নাম  আসবে না এমনটা হতেই পারে না। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে এর অবস্থান। এই জাদুঘরে বিশেষত্ব হচ্ছে, খ্যাতিমানদের  মোমের মূর্তি তৈরি করে রাখা হয়। মোমের মূর্তিতে সেই এরিস্টটল থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান কিংবা স্টিফেন হকিং— কে নেই এই মাদাম তুসো জাদুঘরে। এ কারণেই এই জাদুঘরটি বিখ্যাত হয়েছে পৃথিবীজুড়ে। তবে এর শুরুটা একটা ইতিহাস। ফরাসি বিপ্লবের সময় নিজেই এই সংগ্রহের সূচনা করেন মাদাম তুসো। কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তার কাটা মাথাটিকে দিয়ে মোমের প্রতিকৃতি তৈরি করতেন তুসো।

উফিজি গ্যালারি মিউজিয়াম

উফিজি গ্যালারি জাদুঘরটি অবস্থিত ইতালির ফ্লোরেন্সে। এই জাদুঘরজুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা রকম দর্শনীয় বস্তু। এটিকেই বলা হয় রেনেসাঁ যুগে প্রথম চিত্রকর্মের সংগ্রহশালা। এ ছাড়া জাদুঘরে প্রবেশের শুরু থেকেই দেখা যায় বিখ্যাত সব ভাস্কর্য। যেন একেকটা মূর্তি একেকটা ইতিহাসের কথা বলছে। জাদুঘরটির দেয়ালের পরতে পরতেও স্থান পেয়েছে এসব মূর্তি। এই জাদুঘরে বিখ্যাত সব চিত্রকরের ভাস্কর্যে ঠাঁসা। বিখ্যাত চিত্রকর মাইকেল অ্যাঞ্জেলো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো কালজয়ী সব চিত্রশিল্পীর আঁকা বিখ্যাত সব ছবির সংগ্রহ আছে এই জাদুঘরে।  

ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম

এই জাদুঘরটির অবস্থান মিসরে। এর যাত্রা শুরু হয় ১৮৫৩ সালে। এই জাদুঘরের আকর্ষণীয় বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে মিসরীয় সভ্যতার হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মিসরের বিখ্যাত সম্রাট তুতেনখামেনের সমাধিসহ বিখ্যাতদের সব সমাধি রয়েছে ইজিপশিয়ান জাদুঘরে। প্রায় এক লাখ ২০ হাজারেরও বেশি ঐতিহাসিক সভ্যতার প্রত্নসামগ্রী রয়েছে এই জাদুঘরে।

ভ্যাটিকান মিউজিয়াম

ভ্যাটিকান সিটিতে এই জাদুঘরটি অবস্থিত। মূলত ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের জন্য এই জাদুঘর বানানো হয়। পরে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই জাদুঘর কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠীর ইতিহাস ধারণ করেনি। বরং এটি ধারণ করছে সমাজ ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব ঐতিহাসিক নিদর্শন। বিভিন্ন মানচিত্র এবং আধুনিককালের ধর্মীয় অনেক চিত্রও সংগ্রহশালায় আছে। বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে মিসরীয় চিত্রকর্ম সবই রয়েছে এই জাদুঘরে। দীর্ঘ নয় মাইলজুড়ে রোমান ক্যাথলিক চার্চ-এর ভ্যাটিকান সংগ্রহশালা নিয়ে এই জাদুঘর। বছরে প্রায় ৪০ লাখেরও বেশি দর্শনার্থী এই মিউজিয়াম দেখতে আসেন।

মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম

এই জাদুঘরটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ওয়েস্টার্ন হেমিসফেয়ারে অবস্থিত। জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭০ সালে। প্রায় ২০ লাখেরও বেশি দর্শনীয় বস্তু রয়েছে এই জাদুঘরে। এখানে রয়েছে ইসলামী সভ্যতার বিভিন্ন চিত্রকর্ম এবং ইউরোপিয়ান অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ আরও অনেক কিছু। বিখ্যাত জার্মান পেইন্টার আলব্রেস্ট দুরের খোদাই করা অ্যাডাম এবং ইভের মূর্তির জন্যও এই জাদুঘরটি বিখ্যাত।

হার্মিটেজ মিউজিয়াম

এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন জাদুঘর। বিশ্বের জনপ্রিয় জাদুঘরগুলোর তালিকায় প্রথম সারিতেই রয়েছে জাদুঘরটি। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট পিটারসবুর্গের তৎকালীন রানী দ্বিতীয় ক্যাথরিনের নির্দেশে জাদুঘরটির নির্মাণ শুরু হয়। ১৮৫২ সালে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শিশকিন, লেভিতান, আইভাজোতুস্কি, কুইনজি, রোপিনসহ আরও অনেক বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে এই জাদুঘরে।

(ঢাকাটাইমস/০১নভেম্বর/এনআই/জেবি)