টঙ্গীতে বাড়ছে ছিনতাইকারী-পকেটমার চক্রের দৌরাত্ম্য

প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:৫৯ | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:১৪

ইফতেখার রায়হান, টঙ্গী
ফাইল ছবি

রাজধানীর সবচেয়ে নিকটবর্তী শিল্পনগরী হিসেবে খ্যাত টঙ্গী। প্রতিদিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী এলাকা দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। এছাড়াও টঙ্গী রেল স্টেশন ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র টঙ্গীর বিভিন্ন বাস স্টেশন, রেল স্টেশন ও গলিপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে করে বিভিন্ন যানবাহনের চালক, সাধারণ যাত্রী, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাকরীজীবীসহ অনেকেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

ঘাম ঝরিয়ে কষ্টে উপার্জন করা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র পরিবহনের জানলার পাশ থেকে ছিনতাই করে পালিয়ে যাচ্ছে সহজে। অন্যদিকে যাত্রীবেশে পকেটমার চক্রের সদস্যরা সাধারণ যাত্রীদের পকেট কেটে নিয়ে যাচ্ছে টাকা দামি মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। প্রশাসনসহ সবার চোখের সামনে এই চক্র চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। প্রায়ই ছিনতাইকারী ও পকেটমার চক্রের সদস্যদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে আতঙ্কিত এ এলাকা দিয়ে চলাচলরত সাধারণ মানুষ।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গী ও উত্তরা পূর্ব থানার গুটি কয়েক অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা এই সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী ও পকেটমারের সঙ্গে জড়িত। গত কয়েক মাসে ছিনতাই, পকেটমার ও ছিঁচকে চোরদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাই ও পকেটমার চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপর কিছুদিন ছিনতাই ও চুরির ঘটনা কম ঘটলেও বর্তমানে চক্রটি ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া বাস ও ট্রেনে যাতায়ত করা ভুক্তভোগীরা অনেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় তারা থানা পুলিশে অভিযোগ না করে তাদের গন্তব্যে চলে যান।

সূত্রে জানা যায়, টঙ্গী বাজার ও আব্দুল্লাহপুর ঢাকাÑময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। এসময় সড়কের পাশে ওঁৎ পেতে থাকা ছিনতাইকারীরা সিএনজির উপরের কাপড় কেটে যাত্রীর ব্যাগ, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টায় দৈনিক ইত্তেফাকের টঙ্গী প্রতিনিধি কাজী রফিক টঙ্গী থেকে তার উত্তরার বাসায় ফেরার পথে আবদুল্লাহপুর পুলিশ চেক চেকপোস্টের সামনে থেকে সিএনজির উপরের কাপড় কেটে ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি দামি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

ঘটনাস্থল ঘুরে জানা যায়, আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী বাজার থেকে প্রতিদিন ৪০/৪৫টি মোবাইল ফোন পরিবহনের যাত্রীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকায় পুলিশের সামনেই ছিনতাকারীরা আমাদের সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে।

ছিনতাইচক্রের অন্যতম সদস্য কালা মানিক ঢাকাটাইমসকে জানান, তারা যে মোবাইল ফোন ছিনতাই করে সেগুলোর মধ্যে দামি মোবাইল ফোনগুলো টঙ্গী বাজার মাজার বস্তির গ্যাদা নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে। পুলিশের কোনো ঝামেলা হলে সেটা গ্যাদাই সমাধান করে দেয়। 

এছাড়া টঙ্গী রেল স্টেশন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছুড়ে ছিনতাইয়ের ঘটনার সংবাদ ঢাকাটাইমসে প্রকাশ হওয়ার পর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি তার নিজ উদ্যোগে একাধিক ছিনতাইকারীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করেন। এরপর থেকে ট্রেনে ঢিল আতঙ্ক কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানা গেছে।

এবিষয়ে টঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ তালুকদার ঢাকাটাইমসকে জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনা সম্পর্কে থানায় কোনো অভিযোগ পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাছাড়া ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সতর্ক আছে। গত কয়েক দিন টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন পকেটমার ও ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

উত্তরা পূর্ব থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী ঢাকাটাইমসকে জানান, ছিনতাইকারী আগের থেকে এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আর যদি এমন কোনো অভিযোগ থানায় আসে সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/০১নভেম্বর/আইআর/জেবি)