রংপুরে ফেসবুকে পোস্ট নিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব, নিহত ১

রফিকুল ইসলাম রফিক, রংপুর
| আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:১৮ | প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:০৩

ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর স্ট্যাটার দেয়ার অভিযোগ এনে রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীর ঠাকুরবাড়ি গ্রামে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে হাবিব মিয়া (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।

বিক্ষুব্ধ লোকজন বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। তবে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন দাবি করেন, পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাই নিজেদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় তিন ঘণ্টা রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে। পরিস্থিতি এখনো থমথমে। ঘটনাস্থলে এখনো অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সদরের পাগলাপীর সলেয়াসা নামক এলাকায় কয়েক দিন আগে টিটু রায় নামে এক যুবক তার ফেসবুক আইডিতে হজরত মোহাম্মদ সা. সম্পর্কে অবমাননাকর পোস্ট দেন। এতে এলাকার মুসল্লিরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা ওই যুবকের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার বাদ জুমা সলেয়াসা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন।

জুমার নামাজের পর শত শত মানুষ সলেয়াসা বাজার এলাকায় জমায়েত হয় এবং মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় ওই সড়কের দুই ধারে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে অবরোধকারীদের রাস্তা ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানায়।

বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, যা পরে সংঘর্ষের রূপ নেয়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৫০ রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন।

আহতদের মধ্যে হাবিব মিয়া, মাহবুল মিয়া, আলীম মিয়া, নাজির হোসেন, আলিম, জামিল, রফিকুল, নাসিরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিব মিয়া মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন মেডিকেল ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই গোলাম কিবরিয়া।

আহতদের মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন এসআই সেলিম মিয়া, কনস্টেবল নাসির হোসেন, রফিকুল ইসলাম।

উত্তেজিত জনতা সলেয়াসা বাজার ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় হিরেন বাবু, ধীরেন রায়, মন্টুসহ পাঁচটি সংখ্যালঘুর বাড়িতে আগুন দেয় এবং ১০টি বাড়ি ভাঙচুর করে। হিরেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘উচ্ছৃঙ্খল লোকজন এসে আমার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আগুনে আমার সবকিছু পুড়ে গেছে।’

মুসল্লি আলিফ মিয়া ও রায়হান কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা নবীর্জি সম্পর্কে কটূক্তিকারীর শাস্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।’

তারা দাবি করেন, ‘কোনো হিন্দুর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়নি। বরং হিন্দুরাই তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে, যার প্রমাণ অনেক পুলিশই জানে।’

রংপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান সাইফ সাংবাদিকদের জানান, মহাসড়ক অবরোধ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানালে জনতা পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ইটপাটকেলে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৪ সালে কক্সবাজারের রামুতে ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়িঘরে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। ২০১৬ সালে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে। এক হিন্দু যুবকের কথিত ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় জনতা।

(ঢাকাটাইমস/১০নভেম্বর/আরআই/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :