রংপুর হামলা: তিন গ্রাম পুরুষশূন্য, গ্রেপ্তার ১০০

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৭, ২০:২৪ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭, ২০:২৮

রফিকুল ইসলাম রফিক, ঢাকাটাইমস

রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গত দুই দিনে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  গ্রেপ্তার আতঙ্কে সেখানকার তিনটি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

ফেসবুক মহানবী (স.) ও পবিত্র কাবা শরিফ নিয়ে অবমাননাকর পোস্ট দেয়া যুবক টিটু রায়কে গ্রেপ্তারের দাবিতে শুক্রবার জুমা নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল বের করে মুসল্লিরা। এ সময় যেকোনো ধরনের হামলা ঠেকাতে পুলিশ এগিয়ে গেলে সংঘষের ঘটনায় একজন নিহত ও ১৫ পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়। এ সময় ১০টি হিন্দু পরিবারের ১৯টি ঘরে আগুন ও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হাবিবুর রহমানের দাফন শনিবার মধ্যরাতে পুলিশের পাহারায় শলেয়াশা গ্রামে সম্পন্ন হয়।
ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোর বাড়িঘর নির্মাণ এবং তাদের আহারের ব্যবস্থা করেছে উপজেলা প্রশাসন। রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা জামান ববি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন জানান, হিন্দু পরিবারগুলোর মধ্যে সৃষ্ট আতঙ্ক কেটে পরিবেশ স্বাভাবিক হয়েছে। একটি দুর্বৃত্ত চক্র হিন্দুদের উসকে দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তাদের।

আজ রবিবার সকালে ঠাকুরপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগুনে পোড়া ও ভাঙচুর হওয়া বাড়িঘর নির্মাণের কাজ চলছে। কাল সোমবারের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরেজমিনে উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা দেখভাল করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খাওয়া-দাওয়া ও ঘর নির্মাণকাজের।  দ্রুত পুনবার্সন শুরু হওয়ায় খুশি ক্ষতিগ্রস্তরাও।

হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও রংপুর জেলা প্রশাসনের গঠন করা তদন্ত দলের সদস্যরা। রংপুর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবারের সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় দুই দিনে ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৩ জন জামাত-শিবিরের নেতাকর্মী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গ্রেপ্তার আতঙ্কে সদর উপজেলার খলেয়া, শলেয়াশা, মমিনপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার পুরুষরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। বাসাবাড়িতে আছেন শুধু মহিলা ও শিশুরা। এসব পরিবারের ছেলেমেয়েরাও স্কুল-কলেজ যেতে পারছে না।

এদিকে, যার পোস্ট নিয়ে এত কা- সেই টিটু রায়কে গত সাত দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এখন কেউ কেউ দাবি করছেন, ওই পোস্টটি টিটু রায়ের নয়।  

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে টিটু রায়কে নিয়ে এই আলোচনা, তাকে গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তবে ওই আইডিটি টিটু রায় ব্যবহার করছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় কাজ চলছে।’   

প্রকৃত ঘটনা উদ্ধার করতে সময় লাগবে জানিযে জেলা প্রশাসনের তদন্ত দলের প্রধান আবু রাফা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত টিপোর্ট দিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত জীতেন বালা, অমূল্য চন্দ্র রায়, ক্ষিরোদ চন্দ্র রায়, বিধান চন্দ্রের সঙ্গে সাথে কথা হয়। তারা জানান, সরকার তাদের তিন বেলা খাবার দিচ্ছে। ঘরবাড়ি করে দিচ্ছে। তারা তাতে খুশি। এখন তাদের কোনো সমস্যা নেই।

পুলিশ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ও ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সব ধরনের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে একটি চক্র হিন্দুদের উসকে দিয়ে পরিস্থিতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি ও স্থানীয় হরিদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেনের।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত নাছিমা জামান ববি বলেন, ‘কিসের কাস্তে মার্কাওয়ালারা শহরে মানববন্ধন করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের শহরে নিয়ে গিয়ে মানববন্ধন করার চেষ্টা করছে। আমরা সার্বক্ষণিক এদের (ক্ষতিগ্রস্ত) সাথে আছি। সরকার পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিচ্ছে। কিন্তু কেন তারা এই মানববন্ধন করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করবে?’

একই অভিযোগ করেন হরিদেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। একটি চক্র বাইরে থেকে লোক এনে মানববন্ধন করার চেষ্টা করছে। ওই চক্রটি একের পর ষড়যন্ত্র করছে।’ এ সময় তিনি উপস্থিত হিন্দুদের উদ্দেশে জানতে চান তাদের কোনো সমস্যা আছে কি না, উত্তরে তারা নাবোধক জবাব দেন।

 (ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/মোআ)