খালেদার ক্ষমার নমুনা ২১ আগস্ট: কাদের

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৭, ২১:১৬ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭, ২১:২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারি দলের বিরুদ্ধে অত্যাচার, নির্যাতনের অভিযোগ এনে ক্ষমা করে দেয়ার যে কথা বলেছেন, তার জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থেকে তাদের ক্ষমার নমুনা দেখিয়েছে ২১ আগস্ট। সেদিন গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে খুন করেছে তারা।

রবিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ৩/এ তে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।

খালেদা জিয়ার তার দীর্ঘ বক্তব্যে সরকারের বিরুদ্ধে বেপরোয়া দুর্নীতি, ব্যর্থতা আর নির্যাতনের অভিযোগ আনেন। বলেন, ক্ষমতায় গেলে তারা এই ধারায় রাজনীতি করবেন না।

‘অত্যাচার নির্যাতনের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিয়েছি’ এমন মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমরা বলেছি আপনাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু মানুষ তো ভুলেনি। কারণ, এতদিনে অনেক মানুষকে আপনারা গুম, খুন করেছেন।’

খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বেগম জিয়া ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেছেন। তার ক্ষমার নমুনা ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা। একটাই নমুনা দিলাম।’

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় ব্যাপক প্রাণহানির পাশাপাশি শত শত মানুষ আহত হয়। শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান অনেকটা সৌভাগ্যের কারণে। এই ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি নেতা তারেক রহমান, জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুও রয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জুলুম তো করেছে বেগম জিয়া ও বিএনপি। তাঁরা ক্ষমতায় থাকতে আমাদের নেতা শাহ এম এইচ কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমামকে খুন করেছে। তাদের হাতে আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীর রক্তের দাগ এখনো আছে।’

কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কেন ক্ষমা চাইবে। যিনি জুলুম করেছে তিনি তো আজও জাতির কাছে ক্ষমা চাননি। তাঁর কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। শেখ হাসিনা তো কোন অন্যায় করেন নাই, তিনি কেন ক্ষমা চাইবেন?’

ইতিবাচক রাজনীতি করতে আওয়ামী লীগের প্রতি খালেদা জিয়ার আহ্বানের জবাবে কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় ইতিবাচক ধারায় রাজনীতি করে আসছে। বিএনপি যদি ইতিবাচক রাজনীতির ধারায় ফিরে আসে তাহলে আমরা তাদের স্বাগত জানাব।’

বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ এনেছেন, সেগুলোর জবাবে কাদের বলেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) জানেন তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চলছে তাতে তাঁর হয়ত দণ্ড হয়ে যাবে। সে কারণে তিনি এখন ক্ষমার নাটক সাজাচ্ছেন।’

বিদেশে এজেন্ট পাঠিয়ে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পদত্যাকে বাধ্য করা হয়েছে, খালেদা জিয়ার এমন অভিযোগেরও জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশের লোক গিয়ে প্রধান বিচারপতির মতো একজন ব্যক্তিকে পদত্যাগে বাধ্য করাবে, এমন অভিযোগ হাস্যকর।’

‘আপিল বিভাগের যে পাঁচজন বিচারপতি এখন আছে, তাদেরকেই জিজ্ঞেস করুন সরকার তাকে (সিনহা) পদত্যাগে বাধ্য করেছে না। তাঁরাই তো প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কাজ করবেন না- এমন বক্তব্য দিয়েছেন। সেটা তিনি (সিনহা) ভালো করেই জানেন, এ জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন’ বলেন কাদের।  

নির্বাচনকালীন সহায়ক বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে লাভ হবে না জানিয়ে কাদের বলেন, ‘নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। সে সময় যে সরকার থাকবে সেই সরকার পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো নির্বাচন কমিশনকে একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে।’

জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ক্ষমতা দিতে বিএনপির দাবির বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সেনা মোতায়েন চায় না, কথাটা ঠিক নয়। আমরা চাই নির্বাচন কমিশন সময়ের প্রয়োজনে যেখানে দায়িত্ব দিতে পারে।’

এখন এই দাবি তুললেও খালেদা জিয়া তার শাসনামলে কেন সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ক্ষমতা দেননি, সেই প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনি তো  দুই দফায় ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। কোনো নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ক্ষমতা দিয়েছেন?’

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট গ্রহণে বিএনপির বিরোধিতার বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘ইভিএম সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি তিনি চান না, তিনি চান ২০০১ সালের মতো ম্যাকানিজমের নির্বাচন। সেই জন্য তিনি ইভিএম চান না। তবে আমরা ইভিএম চাই।’

‘রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দাবি করার অধিকার আছে। তবে এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার, তারাই ঠিক করবে’ বলেন কাদের।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ।

(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/টিএ/ডব্লিউবি/জেবি)