খুলনায় অপরাধী বনাম পুলিশের সত্য-মিথ্যা তদন্তে পিবিআই

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ০৯:৩১

খুলনা ব্যুরো, ঢাকাটাইমস

খুলনা নগরীতে একটি ছিনতাইয়ের পরবর্র্তী জের পাল্টাপাল্টি মামলা-হামলা, সংবাদ সম্মেলনসহ আরও অনেক ঘটনা। দুই পক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কেউ স্বীকার করতে নারাজ। দুই পক্ষের সত্য-মিথ্যার জট খুলতে আদালতের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আগামী ২৬ ডিসেম্বর এ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক বাবলু রহমান।

গত ১৮ জুলাই ছিনতাইকালে শাহজালালের দুই চোখ জনতা না পুলিশ উৎপাটন করেছে এই প্রশ্ন এখন খুলনা মানুষের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

পুলিশের দাবি, খালিশপুর থানা এলাকায় ছিনতাইকালে জনতার হাতে চোখ উৎপাটনের শিকার হয় শাহজালাল। অন্যদিকে শাহজালালের পরিবারের ভাষ্যমতে, বাসা থেকে আটকের পর দাবিকৃত লাখ টাকা দিতে না পারায় পুলিশই তার দুই চোখ তুলে নিয়েছে। আটকের পর শাহজালালকে নিয়ে পুলিশ প্রথমে খালিশপুর ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে- এ ধরনের তথ্য সামনে এসেছে। ইতিমধ্যে খালিশপুর ক্লিনিকের সেদিন রাতের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে কিছু আলামত পাওয়া গেছে।

তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক বাবলুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, তদন্তের স্বার্থে অনেককে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হচ্ছে। তদন্তে যা পাওয়া যাবে বিজ্ঞ আদালতে সেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। মামলার তদন্তের স্বার্থে তিনি এ বিষয়ে আর তেমন কিছু বলতে রাজি হননি। 

শাহজালাল ও তার স্বজনদের দাবি, খালিশপুর থানা এলাকার গোয়ালখালীতে ঘটনার দিন সাদা পোশাকে খালিশপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাসেলসহ দুজন রাত আটটার দিকে হঠাৎ তাকে ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে আটক করে। পরে পুলিশের গাড়ি এসে শাহজালালকে খালিশপুর থানা হাজতে নিয়ে যায়। পরে এএসআই রাসেল ও সোর্স রাসেল দুই লাখ টাকা দাবি করে তার পরিবারের কাছে। টাকা দিতে না পারায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহজালালকে থানা থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে দুই চোখ হারানো অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া যায়।

পুলিশের দাবি, ঘটনার দিন রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েন শাহজালাল। সেখানে গণপিটুনির পর তার দুটি চোখ তুলে ফেলে জনতা। এ ব্যাপারে সেদিন রাতেই সুমা আক্তার নামের এক নারী বাদী হয়ে দুজনকে আসামি করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন। ইতিমধ্যে শাহজালালকে অভিযুক্ত করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম খান ঢাকাটাইমসকে জানান, সিসিটিভি ক্যামেরায় গত ১৮ জুলাই রাতের ফুটেজ যাচাই করা হয়েছে। তাতে শাহজালালের কোনো ছবি নেই। তবে শাহজালাল একজন পেশাদার অপরাধী, তার বিরুদ্ধে খুলনাসহ অন্য জেলার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি।

এ ব্যাপারে খালিশপুর ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ডা. মুজাহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, ১৮ জুলাই  রাতে খালিশপুর থানার পুলিশ এক যুবককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ক্লিনিকে নিয়ে আসে। চিকিৎসার পর তাকে আবার পুলিশ নিয়ে যায়। তবে তখন ওই রোগীর নাম হাসপাতালের খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়নি। হাসপাতালের সেদিন রাতের সিসি টিভি ফুটেজ তদন্ত কর্মকর্তা সংগ্রহ করেছেন বলে জানান তিনি।

পুলিশি হেফাজতে চোখ উৎপাটনের অভিযোগে শাহজালালের মা রেনু বেগম গত ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন। খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খানসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য খুলনা পিবিআইকে নির্দেশ দেন। গত ১৮ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। ১৮ তারিখে পিবিআই আরো সময়ের আবেদন করলে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়।

অন্যদিকে শাহজালালের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় দ্রুত বিচার আইনে করা ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলার বাদি সুমা আক্তার। গত ১৮ অক্টোবর খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ওই ছিনতাইয়ের সঙ্গে শাহজালাল জড়িত। তবে চোখ উৎপাটনের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তা তিনি নিশ্চিতভাবে কিছু জানেন না।

মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, শাহজালালের বিরুদ্ধে করা ছিনতাইয়ের মামলায় পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ক্রিমিনাল রিভিউশন ২০৫২/১৭ শুনানি শেষে দ্রুত বিচার আইনের ওই মামলার বিচারকাজে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর মহানগর দায়রা জজ অরূপ কুমার গোস্বামী এ আদেশ দেন। পাশাপাশি আগামী ২৯ নভেম্বর পরবর্ত শুনানির জন্য দিন নির্র্ধারণ করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৭নভেম্বর/মোআ)