রান খরায় ঘরের ছেলেরা

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৭, ১১:০৬

ক্রীড়া প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাজে একটা সময় কাটায় বাংলাদেশ। সে সফরের ঝাঁজটা বোধ হয় এখনো রয়ে গেছে। এখন চলছে বাংলাদেশের ঘরোয়া টুর্নামেন্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসর। যেখানে দেশি ক্রিকেটারদের গায়ে নেই উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের ট্যাগ। এখন পর্যন্ত ঘরের ছেলেরা ধরতে পারেননি ভালো কোনো সাফল্য। বল হাতে রনি, জায়েদ, তাসকিনরা কিছুটা আলো ছড়ালেও ব্যাটসম্যানরা একেবারেই ফ্লপ। ফলে অনুমতিভাবেই সেরার আসনগুলো লুফে নিয়েছেন বিদেশি তারকারা।

পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম ১৪ ম্যাচে বাংলাদেশের একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক। রাজশাহী কিংসের এই বাঁ-হাতি দেশিদের কাতারে থেকে পঞ্চাশের ঘরে নাম লেখান। গত ১১ নভেম্বর রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে মিরপুরে ৬৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন মুমিনুল। সে থেকে অদ্যাবধি আর কেউ অর্ধশতক পেরোতে পারল না। ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন-জাতীয় দলের এই আট তারকাই ব্যর্থতার ঘরে বন্দী।

তবে, ফিফটির দেখা না পেলেও অন্যদের তুলনায় খানিকটা লড়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ইমরুল কায়েস। দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এখন পর্যন্ত বেশি রান ইমরুলের। চার ম্যাচে ১৩৪ রান করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ ৪৫। এ ছাড়া লিটন দাস ঝুলিতে পুরেছেন ৪ ম্যাচে ৮৮ রান। লিটনের সর্বোচ্চ ২৩। সৌম্য সরকার করেছেন চার ম্যাচে ৭৫ রান। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩৮। ৪ ম্যাচে ৬২ রান করেছেন ঢাকার সাকিব আল হাসান। তার সর্বোচ্চ ২৩। মুশফিক করেছেন ৪ ম্যাচে ৩৮ রান। মুশির সর্বোচ্চ ১৬। খুলনার দলনতো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকে এসেছে ৪ ম্যাচে ৮৫ রান। সর্বোচ্চ ৪০। এমনটা দেখে বুঝাই যাচ্ছে ব্যাটে-বলে মিলছে না দেশি তারকাদের। বলা যায়, ভয়াভহ রান খরা।

কেবল জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাই নন, জাতীয় দলের বাইরে থাকা কেউ সেভাবে নজর কাড়তে পারেননি। শুরুটা ভালোই হয়েছিল শাহরিয়ার নাফিস, রনি তালুকদার এবং মোহাম্মদ মিঠুনের। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে ততো নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছেন তারা। প্রথম দিন লাসিথ মালিঙ্গা ও থিসারা পেরেরার মতো বোলারের বিপক্ষে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে লড়াই করেন রনি তালুকদার। সেদিন ব্যাট হাতে দলকে উপহার দেন ৪৭ রানের ঝকঝকে ইনিংস। এরপর আর তার দেখা নেই। পরের তিন ম্যাচে রনির মোট রান ১০। রনির চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে রংপুর রাইডার্সের দুই ব্যাটসম্যান শাহরিয়ার নাফিস ও মোহাম্মদ মিঠুন। তিন ম্যাচে ৮৪ রান নাফিসের। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩৫। আর মোহাম্মদ মিঠুন করেছেন তিন ম্যাচে ৮৭। সর্বোচ্চ ৪৬। একপ্রকার গড়পড়তা পারফরম্যন্স করেছেন দুজন।

ব্যাটসম্যানদের ঠিক উল্টোপিটে হাঁটছে বোলাররা। ঢাকা ডায়নামাইটসের আবু হায়দার রনি ও খুলনা টাইটান্সের আবু জায়েদ এখন পর্যন্ত যৌথভাবে বিপিএলের সর্বাধিক উইকেট শিকারী। দু’জনই সমান ৪ খেলায় ৭ উইকেট করে নিয়েছেন। রনির সেরা বোলিং ১৩ রানে ৩ উইকেট। জায়েদ নেন ৩৫ রানের বিনিময়ে ৪টি। উইকেট প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের শফিউল ইসলাম নিয়েছেন চার ম্যাচে ৬টি, তাসকিন আহমেদ চার ম্যাচে ৬টি, সানজামুল ইসলাম চার ম্যাচে ৫টি উইকেট শিকার করেছেন। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারের তালিকায় এরা আছেন উপরের দিকেই।

এরপর তাইজুল ইসলাম, ফরহাদ রেজা, আবুল হাসান রাজুর অবস্থান ঠিক তাদের পেছনে। প্রত্যেকে সমান ৫টি করে উইকেট পেয়েছেন। আরেক দুই বোলার সাইফউদ্দীন ও শুভাশিস রায় ৪টি করে উইকেট লাভ করেছেন। যেখানে দেশ সেরা স্পিনার সাকিব আল হাসান খানিকটা পিছিয়ে। ৪ ম্যাচে ১১ ওভার বল করে ৯০ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহ চার ম্যাচে ৭ ওভার বল করে ৫৮ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট। নাসির প্রথম দুই ম্যাচে তিন উইকেট শিকার করলেও পরে আর সুবিধা করতে পারেননি। অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের অবস্থাও ভালো নয়। চার ম্যাচে ১৩ ওভারে ৮৩ রান খরচায় নিয়েছেন মাত্র ২ উইকেট।

দেশি ব্যাটসম্যানদের রান খরা নিয়ে ক্রিকেটবোদ্ধারা বলছেন, অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই বেকায়দায় স্থানীয় ব্যাটসম্যানরা। এভিন লুইস, জস বাটলার, ব্র্যাথওয়েট, কাইরণ পোলার্ডরা শারীরিক দিক থেকে অনেক বেশি সুঠাম ও দীর্ঘদেহী। তাদের বিগ হিটগুলো যে খুব ক্রিকেটীয় ব্যাকরণ মেনে একদম শরীর ও পা ঠিক বলের পিছনে গিয়ে নেয়া- তা নয়। বেশির ভাগই পাওয়ার হিটিং। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শারীরিক সামর্থ্য তুলনামূলক কম। তারা কোনোভাবেই তেমন পাওয়ার হিটিং করতে পারবেন না। তারা বরং নিজের মেধা-বুদ্ধি খাটিয়ে যতটা সম্ভব দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করলে সফল হবেন। ফলে এটা অনুমেয়, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিররা উইকেটে গিয়ে বিদেশিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিগ হিট না নিয়ে বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যাটিং করলে হয়তো এমন দুর্দশা দেখতে হতো না ভক্তদের।

(ঢাকাটাইমস/১৭ নভেম্বর/জেইউএম)