‘দুর্নীতির বিচার কঠিন হলেও রোধ সম্ভব’

প্রকাশ | ২১ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ  ফরাসউদ্দিন বলেছেন, ‘সমাজে যদি একটা ঢেউ তুলতে পারি যে, দুর্নীতি ভালো জিনিস নয়, এটা রুখতে হবে, তাহলে বিচার করা কঠিন হলেও রোধ করা সম্ভব।’

মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলেক্ষে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমীতে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন এই গভর্নর বলেন, ‘দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের জন্য একটা পরিমণ্ডল প্রয়োজন, বিচার-আচার করে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। যদি সমাজে একটা ঢেউ তুলতে পারি যে, দুর্নীতি ভালো জিনিস নয়, এটা রুখতে হবে, এটার বিচার করা কঠিন হলেও রোধ করা সম্ভব।’

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একটা রেগুলেটরি ফ্রেইমওয়ার্ক না থাকে, যদি রেগুলেটরি ফ্রেইমওয়ার্ক ছাড়া যদি বাজার অর্থনীতি যান তাহলেও প্রবৃদ্ধি হবে, কিন্তু বাণিজ্যে ও শিল্পেও প্রবৃদ্ধি হবে। তবে একটু চুরি-ডাকাতি বাড়বে, দুর্নীতি বাড়বে, বাংলাদেশ তাই হয়েছে। বাজার অর্থনীতিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতবাজ-লুটেরা অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে। কারণ হলো ওই যে পরিমণ্ডল। যদি রেগুলেটরি ফ্রেইমওয়ার্ক ছাড়া টেকনলজিক্যাল অ্যাডভান্সম্যান্টে চলে যান। তাহলে মোবাইল ফান্ড ট্রান্সফার হবে, যাকে মোবাইল ব্যাংকিং বলা হয়। আমি তীব্র ভাষায় নিন্দা করি, ধিক্কার জানাই।’

নিজেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা ট্রান্সফার করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘কিছুদিন আগে বিভিন্ন অনিয়মের কারণে কয়েক লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনেকগুলো এজেন্টের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। কারণ এখানে কোনো নিয়ামক পরিমণ্ডল নেই। বগুড়ায় আমার শিক্ষককে কিছু টাকা পাঠাইতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গুণে গুণে ২ শতাংশ কেটে রেখেছে। তারপর সেখানে গিয়ে টাকা তুলতে গেলে তার কাছ থেকেও টাকা কেটে নিয়েছে। এই রকম লুটপাট ও ডাকাতি করছে। অথচ ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে ৫০ পয়সা লাগে।’

ই-কমার্সের কোনো কর কাটা হয় না উল্লেখ তিনি বলেন, যারা ই কমার্সে কেনাকাটা করে তারা কোনো গরিব নন, তারা বড়লোক। তারা টেলিফোনে অর্ডার দেন, বাড়িতে পণ্য চলে আসে, ক্রেডিট কার্ডে টাকা নিয়ে নেয়। যেখানে কোনো ট্যাক্স নেই। একমাত্র বাংলাদেশেই এটা হয়ে থাকে। সেখানে টেক্স বসানোর জন্য পাঁচ বছর ধরে বলছি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।

ব্যক্তিখাতের প্রতিষ্ঠানকে বিদেশি ঋণের সুযোগ দেয়ার সমালোচনা করে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি কোর্ডের সভাপতি বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যক্তিখাতের প্রতিষ্ঠানকে বাইরে থেকে ঋণ নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যদিও সেখানে সুদ কম। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার পড়ে আছে, বাংলাদেশের মুদ্র অবমূল্যায়ন হতে বাধ্য। যখন অবমূল্যায়ন হতে তখন স্বল্প সুদেও হবে না, অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। বাইরে থেকে যারা ঋণ এনেছিলেন আগে সেখানে কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ামক ছিল না, যার কারণে ঋণ গ্রহণকারীদের ৯০ শতাংশ ছলে-বলে-কৌশলে বাইরে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দিয়েছে।’

দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে কমিশনের দুই কমিশনার ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব শামসুল আরেফিন বক্তব্য দেন।

(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/জেআর/জেবি)