যুদ্ধাপরাধ: ‘ঘোড়ামারা’ আজিজসহ ছয়জনের রায়ের অপেক্ষা

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০১৭, ১০:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গাইবান্ধা-১ আসনের জামায়াতের সাবেক সাংসদ আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ। এই রায়ের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আনা ২৯তম মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই রায় ঘোষণা করেবেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আমির হোসেন ও মো. আবু আহমেদ জমাদার।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন। গত ২৩ অক্টোবর উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

আব্দুল আজিজ ছাড়া মামলায় অন্যান্য আসামি হলেন- মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মো. আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)। মামলায় ছয় আসামিদের মধ্যে মো. আব্দুল লতিফ কারাগারে  আছেন। বাকি পাঁচ আসামি পালাতক।

গত ৯ মে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রায়ের জন্য অপেক্ষামাণ রেখেছিলেন। ১১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হওয়ায় মামলাটিতে পুনরায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ও শেখ মোশফেক কবির। আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ও মো. শাহিনুর ইসলাম।

আজিজসহ গাইবান্ধার ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর প্রসিকিউশনের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আসামিদের মধ্যে মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পরে ঘোড়ামারা আজিজসহ সকল আসামিদের পলাতক দেখিয়েই আদালতে মামলার বিচারিক কাজ শুরু হয়।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল আজিজ মিয়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চারদলীয় জোটের অধীনে জামায়াত থেকে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন।

গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর আব্দুল আজিজসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। এর আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর আজিজসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সুন্দরগঞ্জের পাঁচগাছী শান্তিরাম গ্রামের মৃত আলম উদ্দিনের ছেলে আজিজার রহমান সরকার বাদী হয়ে জামায়াত নেতা আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আজিজার রহমানের বড় ভাই ফয়েজ উদ্দিনকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগে ওই মামলাটি করা হয়। অপরদিকে ধর্মপুর গ্রামের আকবর আলীকে হত্যার অভিযোগে জামায়াত নেতা আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন আনিছুর রহমান। গত বছরের ২০ নভেম্বর আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামিদের বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ:  প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ৯ অক্টোবর সকালে আসামিরা পাকিস্তানের দখলদার সেনা বাহিনীর ২৫/৩০ জনকে সঙ্গে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি বাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে চার জন নিরীহ, নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে। পরে তাদের দাড়িয়াপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গনেশ চন্দ্র বর্মণের মাথার সঙ্গে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে এবং বাকিদের ছেড়ে দেয়। আসামিরা আটককৃতদের বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ওই দিন বিকাল চারটার দিকে আসামিরা সুন্দরগঞ্জ থানার মাঠেরহাট ব্রিজ পাহারারত ছাত্রলীগের নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠেরহাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। পরদিন সকালে আসামিরা বয়েজকে থানা সদরের স্থাপিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিন দিন আটক রেখে নির্যাতনের পর ১৩ অক্টোবর বিকালে তাকে গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটির নিচে চাপা দেয়।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সুন্দরগঞ্জ থানার পাঁচটি ইউনিয়নের নিরীহ-নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অবৈধভাবে আটক করে। তাদের তিন দিন ধরে নির্যাতন করার পর পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পের কাছে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং তাদের লাশ মাটি চাপা দেয়। সেখানে ওই শহীদদের স্মৃরণে একটি বধ্যভূমি নির্মিত হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২২নভেম্বর/এমএবি/এমআর)