আরও লুটপাট করতেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি: বিএনপি

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৮:৪৯ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ২০:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। দলটি মনে করে বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম কমছে তখন বিদ্যুতের দামও কমার কথা। সেখানে বিদ্যুতের দাম আবারও বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছে দলটি। বিএনপির অভিযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আরও বেশি লুটপাটের সুযোগ দিতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।  

বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে দলের বক্তব্য জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকালে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৩৫ পয়সা বাড়বে। আগামী ডিসেম্বর থেকে এই দাম কার্যকর হবে।

আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে  ‘গণবিরোধী সিদ্ধান্ত’ বাতিলের দাবি জানান বিএনপির নেতা। রিজভী বলেন, ‘তেলের দাম কমায় বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও কমার কথা। কিন্তু বিদ্যুতের দাম না কমিয়ে উল্টো বাড়ানো নজিরবিহীন এবং গণবিরোধী। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত জ্বালানি (ফার্নেস) তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হলে খরচ আরও কমানো যেত।’

রিজভী বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে কুইক রেন্টাল প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এসব প্রকল্পের পেছনে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের আত্মীয়-স্বজন। এদের লুটপাটের আরও বেশি সুযোগ করে দিতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি এখন লুটের খাত।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘যেখানে বিদ্যুতের দাম কমানোর কথা সেখানে পূর্বের তুলনায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসায় এখন বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে বাড়বে ৩৫ পয়সা। যা শুধু অযৌক্তিক ও গণবিরোধী নয় ভোটারবিহীন সরকারের লুটপাট নীতির বহিঃপ্রকাশ। গোটা দেশটাকে গিলে খেতেই রক্তচোষা সরকার উন্মত্ত হয়ে পড়েছে। তারা ব্যাংক, বিমা, শেয়ারবাজারসহ সমস্ত অর্থনীতিক খাতকে তিলে তিলে খেয়ে তাদের স্বাদ মিটেনি। তাই বার বার গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গরিবের রক্ত পান করাটাই যেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য।’

রিজভী বলেন, ‘এর আগে গত মার্চে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এর আগে ২০১০ সাল  থেকে ২০১৫ সালের  সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে ছয়বার এবং খুচরা পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধুমাত্র লুটপাটের জন্যই গরিবের সর্বশেষ সম্বলটুকু আত্মসাৎ করে সরকার আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ালো।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বিদ্যুতের সঙ্গে সবকিছু সম্পর্কিত। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়বে সীমিত আয়ের মানুষ। শিল্প খাতেও পড়বে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব। এমনিতে সরকারের লুটপাট আর ভয়াবহ দুঃশাসনে দেশে কোনো বিনিয়োগ নেই। এমন সময় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা মানেই বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা। এতে গোটা অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। প্রতিযোগী মূল্যে শিল্প উৎপাদন সক্ষমতা ব্যাহত হবে। এ ছাড়া বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলো, রপ্তানি সক্ষমতা, শিল্প বহুমুখীকরণ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে। দেশে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে বেকারত্ব্। এমনিতেই এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকারত্বের হারের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একই সঙ্গে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দামও।’

রিজভী বলেন, ‘বর্তমানে নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। তার ওপর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মাশুলও দিতে হবে নিম্ন আয়ের মানুষদের। কৃষি খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। এমনকি কয়েক দফা বন্যায় দেশে তীব্র খাদ্য সংকট চলছে তার ওপর বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়বে। নতুন করে বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধিতে কৃষি ও শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৩নভেম্বর/বিইউ/জেবি)