‘শার্টের কলারে হাত দিয়ে বলে আমি কিন্তু কর দেই’

প্রকাশ | ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৪:০২ | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭, ১৪:৩৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

জনগণের মধ্যে সচেতনতা আসায় করদাতার সংখ্যা বাড়ছে বলে আয়কর সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে। বক্তারা বলেন, মানুষ এখন কর দেয়াকে গৌরবের বলে মনে করে। করের টাকাতেই যে দেশের উন্নয়ন হয়, এটা এখন দেশবাসী বুঝতে শিখেছে।

শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কচিকাঁচার মেলা প্রাঙ্গণে এই কর মেলার উদ্বোধন করা হয়। কর অঞ্চল-৪ এর আয়োজন উদ্বোধন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।

আয়কর দেয়াকে উৎসাহ দিতে আর এই প্রক্রিয়াকে আরও জনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো এই মেলার আয়োজন করে এনবিআর।

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানান হয়, করদাতার সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। তবে এখনও করযোগ্য বহু মানুষ করজালের বাইরে রয়ে গেছে। তাদের কাছ থেকেও কর আদায় করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘করদাতারা কর দিয়ে গৌরববোধ করে। তারা শার্টের কলারে হাত দিয়ে বলে আমি কিন্তু কর দেই। এটা রাজস্ববোর্ডের সফলতা।’

‘কর দেওয়া ও কর নেওয়ার মধ্যে সম্মানের বিষয় জড়িত। এতে তৃপ্তির বিষয় রয়েছে। দেশের উন্নয়নে আমার দায়িত্ব আছে, যা আইন দ্বারা স্বীকৃত।’

করের টাকাতেই দেশের উন্নয়ন হয় মন্তব্য করে প্রধান অতিথি বলেন, ‘যাদের কাছ থেকে কর নেওয়া হয় তাদেরই সেবার মাধ্যমে সেটা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’

অনুষ্ঠানে করদাতার সংখ্যা আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলা হয়, এতে করের পরিমাণ বাড়বে।

কর ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের তাগিদ দিয়ে সচিব বলেন, ‘এই ব্যবস্থাপনা উন্নত না হলে দেশ উন্নত হতে পারে না। সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে স্বচ্ছভাবে কর আরোপের মাধ্যমে সম্পদ বাড়ানো এবং সেই সম্পদ জনগণের কাজে ব্যয় করা হয়।’

মোজাম্মেল হক খান বলেন,  ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চাই। এর মধ্যে ২০৩০ এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হবে সেখানে আমাদের বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এর জন্য আমাদের রাজস্ব প্রয়োজন। কারণ রাজস্ব হলো উন্নয়নের অক্সিজেন।’

এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর বলেন রহমান, ‘আমরা দেখেছি ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারলে জনগণ সাড়া দেয়। আমরা সেবার মান আরও বাড়িয়েছি, পরিবেশ উন্নত করছি। প্রতিটি কর অঞ্চলে আমাদের বিশেষ টিম প্রতিদিন মনিটরিং করবে। যে কর অঞ্চলের সেবার মান ভালো থাকবে, সে কর অঞ্চলকে আমরা সম্মানিত করব।’

নজিবুর রহমান বলেন, ‘আয়কর সপ্তাহ স্বার্থক হবে তখনই যখন প্রতিটি করদাতা এখানে হাসিমুখে সুন্দর পরিবেশে আয়কর রিটার্ন দিতে পারবেন। রিটার্ন দাখিল করে তারা যেন বলতে পারেন, গতবারের চেয়ে এবারের ব্যবস্থাপনা ভাল হয়েছে। সেজন্য বিভিন্ন কর অঞ্চলের মধ্যে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। করদাতাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে বলা হয়েছে।’

কর অঞ্চল-৪ এর কর কমিশনার রাধে শ্যাম রায় জানান, দ্বিতীয়বারের মত শুরু হওয়া আয়কর সপ্তাহ ২৪ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সেবা দেয়া হবে। তবে নির্ধারিত সময় পরও সেবা গ্রহিতারা আসলে তাদের সেবা দেয়া হবে।

এনবিআরের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জানান, ২৪ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর সপ্তাহ চলবে। ৩০ নভেম্বর হলো আয়কর দিবস। সেদিনই এবার রির্টার্ন দেওয়রা শেষ দিন।

আয়কর মেলায় করদাতাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পর প্রতিটি কর অঞ্চলে ১২ থেকে ২৩ নভেম্বর বিকেন্দ্রীকরণ মেলা করার কথাও জানানো হয় অনুষ্ঠানে।

এনবিআর থেকে জানানো হয় ১ থেকে ৭ নভেম্বর রাজধানীসহ দেশের ৫৬টি জেলা শহরে, ৩৪টি উপজেলা, ৭১টি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় সারাদেশে আয়কর আহরণ হয়েছে দুই হাজার ২১৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ২২১ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার আয়কর বেশি আহরণ হয়েছে ৮৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪১০ টাকা্। চলতি বছর আয়করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.১২ শতাংশ।

এছাড়া এবার আয়কর মেলা থেকে সেবা নিয়েছে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬৯ জন। গত বছর যা ছিল ৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৩ জন।

আর রিটার্ন দাখিল করেছেন তিন লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৭ জন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮ জন।

(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/জেআর/ডব্লিউবি)