সাতক্ষীরার ‘কর বাহাদুর পরিবার’

কর দিয়ে নিজের মধ্যে উদ্দীপনা পাই: গোলাম রব্বানী

প্রকাশ | ২৬ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:১৮

এম বেলাল হোসাইন, সাতক্ষীরা

নিয়মিত কর দিয়ে দেশের উন্নয়নের একজন অংশীদার হওয়া কম গর্বের নয়। নিয়মিত কর দিতে পেরে তিনি গর্ব বোধ করেন। তাই কর দেয়ার পর নিজের মধ্যে একটা উদ্দীপনা পান তিনি। ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলছিলেন সাতক্ষীরা জেলার ‘কর বাহাদুর পরিবার’ খেতাব পাওয়া পরিবহন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক গোলাম রব্বানী।

১৯৭৪-৭৫ সালে প্রথম কর দেন তিনি। তবে সেবার তিনি কত টাকা আয়কর দিয়েছিলেন তা সঠিক মনে করতে পারেননি। এবার ৩ লাখ ১৯ হাজার ২৮০ টাকা কর দিয়েছেন বলাকা পরিবহনের এই মালিক ও ব্যবসায়ী। তার পরিবারের সদস্যরাও আয়কর দেন। স্ত্রী আয়কর দিচ্ছেন ৩২ বছর ধরে।

নিয়মিত কর দিয়ে এর আগে তিনবার ব্যক্তিগতভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন গোলাম রব্বানী।  এবার পেলের প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত কর বাহাদুর স্বীকৃতি।  

কর দিয়ে সাতক্ষীরা জেলার কর বাহাদুর নির্বাচিত হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, ‘আমি বহু বছর ধরে আয়কর দিয়ে আসছি। এর প্রতিদান পেয়ে আনন্দিত। ২০০৮ সাল থেকে পর পর তিনবার আমি শ্রেষ্ঠ করদাতা নির্বাচিত হয়েছিলাম।’
গোলাম রব্বানী মনে করেন কর দেয়ার মধ্যে লাভ ছাড়া কোনো ক্ষতি নেই। তাহলে কর দেওয়ার বিষয়ে মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা যায় কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে কর দেওয়ার লাভ-ক্ষতি সম্পর্কে মানুষ এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারেনি। তবে আগের তুলনায় এখন অনেকেই তা বুঝতে পেরেছে এবং তারা নিয়মিত কর দিচ্ছে।

কর দেওয়ার সুবিধা ও অসুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, কর দিলে নিশ্চিন্তে থাকা যায়। এ ছাড়া নিয়মিত কর দিলে তো কোনো ক্ষতি হয় না বরং লাভই হয়। কর দিলে নিজের মধ্যে একটা উদ্দীপনা কাজ করে।

গোলাম রব্বানীর মতে, করের আওতায় পড়ে এমন সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়মিত কর দিলে দেশ ও জনগণের উন্নতি অবধারিত। এ প্রসঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন তিনি। ‘বর্তমান সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো একটি বড় প্রকল্প বিদেশি সহায়তা ছাড়াই প্রায় শেষ করে ফেলেছে। এর অর্থের জোগান যাচ্ছে এই কর রাজস্ব থেকে। সরকার এটি করতে পারছে কারণ আমাদের কর আদায় বেড়েছে, করদাতা বেড়েছে। সব না হলেও এখন অধিকাংশ ব্যবসায়ী স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর দিচ্ছেন।’

এলাকায় অন্যদের কর দিতে উৎসাহিত করেছেন বলে জানান এই কর বাহাদুর। ‘রাজস্ব হলো উন্নয়নের অক্সিজেন। আয়কর দেওয়া ব্যবসায়ীদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলে মনে করি। আমি আমার আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার ব্যবসায়ীদের নিয়মিত কর দিতে উদ্বুদ্ধ করি।’

গোলাম রব্বানীর স্ত্রী নূরজাহান রব্বানী ৩২ বছর ধরে আয়কর দিচ্ছেন। এই দম্পতির বড় ছেলে পরিবহন ব্যবসায়ী গোলাম আজম ও ঠিকাদার ছোট ছেলে গোলাম আকবর ১৪ বছর ধরে কর দিচ্ছেন। আর মেয়ে জোবাইদা নাহার কর দিচ্ছেন ১১ বছর ধরে। বড় ছেলে ও একমাত্র মেয়ে দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। তিন সন্তানই ঢাকায় বসবাস করেন।

সাতক্ষীরা জেলা কর অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২৭ হাজার করদাতার মধ্যে গোলাম রব্বানি গত অর্থবছরে ৩ লাখ ১৯ হাজার ২৮০ টাকা কর দেন। তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত মোট আয়কর দিয়েছেন ৯২ লাখ ৪২ হাজার ৯৬৭ টাকা।

কর দিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, আর তাতে প্রতি বছর করদাতার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান খুলনা সার্কেল-১৩ সাতক্ষীরা সহকারী কর কমিশনার শামসুজ্জামান। তার তথ্যমতে, এ বছর সাতক্ষীরা জেলায় নতুন করদাতা বেড়েছে ১৪ হাজার ৭৭৪ জন। করের প্রতি ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ ই-সেন্টার ও পৌরসভার ই-সেন্টারের উদ্যোক্তাদের ই-টিন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গত ৭ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রথমবারের মতো ‘কর বাহাদুর পরিবার’ ঘোষণা করে। পরদিন এনবিআরের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে যেসব পরিবারের সদস্যরা নিয়মিতভাবে কর পরিশোধ করে আসছেন, তাদেরই এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এবার এনবিআর প্রথমবারের মতো সারা দেশের ৮৪ কর বাহাদুর পরিবারের নাম প্রকাশ করে। এই তালিকায় ঢাকা থেকে রয়েছে ১৬টি পরিবার, চট্টগ্রাম থেকে ৮টি আর দেশের বাকি ৬২ জেলা থেকে ৬০টি পরিবার। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা থেকে মনোনয়নের জন্য যোগ্য কোনো পরিবার পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/২৬নভেম্বর/মোআ)