সাংবাদিকদের তোপের মুখে উবার

প্রকাশ | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:২৬ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৪:৪৭

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপভিত্তিক অন ডিমান্ড রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার ঢাকায় তাদের সেবার এক বছর পার করেছে। এই উপলক্ষে তাদের কার্যক্রম জানাতে রবিবার সকালে  রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে উবারের কার্যক্রম সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ের উবার সম্পর্কে সাংবাদিকরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করলে সময় স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে উবারের কর্তারা। সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উবার ঢাকার জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তারা। এ নিয়ে সাংবাদিকরা হতাশা প্রকাশ করেন। তাদের ভাষ্য, সংবাদ সম্মেলনে যদি প্রশ্ন করার সুযোগই না থাকে তবে তাদের সংবাদ সম্মেলনে কেনো নিমন্ত্রণ জানানো হলো?

তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিক শাহজালাল রোহান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘উবার এই প্রথম বারের মত ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করলো। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সম্পর্কে অনেক কিছু জানার ছিল কিন্তু উবার এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিয়ে তথ্য জানার অধিকার থেকে সংবাদ কর্মীদের বঞ্চিত  করলো উবার।

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া বেশির ভাগ সাংবাদিকদেরই উবারের কাছে তাদের সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় জানার ছিল। কিন্তু কৌশল খাটিয়ে উবার সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যায়। তারা তাদের ঢাকার জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। 

এনিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিক উজ্জ্বল এ গোমেজ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে সাধারণত সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর দেন আয়োজকরা। কিন্তু উবার অজানা কারণে প্রশ্ন উত্তরে অংশ না নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের ইতি টানে।’ 

এদিকে সকাল সাড়ে দশটায় সংবাদ সম্মেলনের সময় নির্ধারণ করা হলেও সেটি শুরু হয় সকাল সোয়া এগারোটায়। এতে করে সাংবাদিকরা শুরুতেই বিরক্তি প্রকাশ করেন। উবারের সময় জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রেসিডেন্ট অমিত জৈন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা উবারের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট। কেননা, এই শহরে জনসংখ্যার আধিক্যের ফলে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ঘাটতি আছে। ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাই বেশি। এই বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে রাইড শেয়ারিংয়ের আওতায় এনে পরিবহন সংকট অনেকটাই কমিয়েছে উবার।’

ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার সেন্ট্রাল অপারেশনের হেড প্রদীপ পরমেশ্বর তার বক্তব্যে বলেন, ঢাকায় প্রতিনিয়ত গাড়ির সংখ্যা বেড়ে চলছে। শহরের যাতায়াত ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে গিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হয়েছি। তারপরও আমরা সফলতার সঙ্গে ঢাকায় এক বছর পার করেছি। আমরা আশা করছি অ্যাপ ভিত্তিক পরিবর্তন ব্যবস্থায় যথাযথ নীতিমালা তৈরি হলে এই শহরের পরিবহন সংকট অনেকটাই কমবে।’

উবারের ঢাকা ও কলকাতার জেনারেল ম্যানেজার অর্পিত মুন্ডা তার পেজেন্টেশনে উবারের কার্যক্রম তুলে ধরেন। এসময়  তিনি বলেন, ‘উবারের যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশের ন্যাশনাল হেল্প লাইন নম্বর ৯৯৯ যোগ করা হয়েছে। ফলে যাত্রীরা আরও সুরক্ষিত থাকছেন।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে জানানো হয়েছিল সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ের সাংবাদিকদের জন্য প্রশ্ন উত্তর পর্ব থাকছে। ওই পর্বে সাংবাদিকরা উবারের সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু অজানা কারণে উবার সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি আয়োজকরা। সাংবাদিকরা সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া উবারের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার সেন্ট্রাল অপারেশনের কর্তব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তারা উবার ঢাকার জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান বেঞ্চমার্ক পিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেঞ্চমার্ক পিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এএফএম আসাদু্জ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, সময় স্বল্পতার কারণে উবার সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। আপনাদের যত প্রশ্ন আছে তা আমাদের কাছে লিখিত আকারে দিলে যথাসম্ভব উত্তর দেয়া হবে।’

এদিকে গত বছর উবারের ৬ কোটি গ্রাহকদের তথ্য চুরি হয়েছিল। কিন্তু এতদিন তা গোপন রাখে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ঘটনাটি ফলাও করে প্রচার করা হয়। 

উবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তথ্য চুরির এই ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল প্রতিষ্ঠানটি। 

সম্প্রতি ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এই ঘটনাটি উঠে আসে। উবারও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ল’ অনুযায়ী যদি কোনও হ্যাকিংয়ের ঘটনায়  ৫০০ এর বেশি তথ্য খোয়া যায় তা হলে সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকদের এবং অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানাতে হবে। কিন্তু এক বছর আগের এই ঘটনায় তেমন কোনও পদক্ষেপই নেয়নি উবার। এমনকি ঘটনাটি তারা চেপে গেছে।

এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক স্নেইডারম্যান।

আন্তর্জাতিতভাবে উবারের যাত্রা হয় ২০১০ সালে। ঢাকায় তাদের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর। প্রতিষ্ঠানটি বলছে তাদের কোনো নিজস্ব ট্যাক্সি নেই। তারা কেবলমাত্র উবার ড্রাইভার ও উবার যাত্রীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করিয়ে দেয়। যদিও রাইড শেয়ারিং অ্যাপের সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে কোনো আইন নেই। এজন্য আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। 

(ঢাকাটাইমস/৩ডিসেম্বর/এজেড)