প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি ‘নাশকতা নয়’

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:১৩ | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ২৩:৪৩

আদালত প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

একবছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান কারিগরি ত্রুটির জন্য জরুরি অবতরণে বাধ্য হওয়ার ঘটনাটি কোনো নাশকতা নয় বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে। এতে এই মামলার আসামি বিমানের ১১ কর্মকর্তাকেই অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করা হয়েছে। 

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ইন্সপেক্টর মাহবুবুল আলম বৃহস্পতিবার রাতে ওই প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রুটি মানবসৃষ্ট ত্রুটি হিসেবে প্রমাণিত হয়নি।

২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর  বিশ্ব পানি সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী বিমানের বোয়িং- সেভেন সেভেন সেভেন থ্রি জিরো জিরো ইআর উড়োজাহাজটিতে করে রওয়ানা হন। আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় বিমানের ত্রুটি ধরা পড়ে এবং ইঞ্জিনে তেলের দাম কমে যাওয়ায় তুর্কমেনিস্তানের রাজধানীতে বিমানটি জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। সেখানে মেরামতের পর প্রধানমন্ত্রী ওই ফ্লাইটেই হাঙ্গেরি যান।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ত্রুটি নিয়ে সে সময় বাংলাদেশে তুমুল আলোচনা হয়। এমনকি এটি পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা কি না, সে নিয়েও কথা উঠে। হাঙ্গেরি সফর শেষে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী একে দুর্ঘটনা বললেও পরে সংসদে বলেন, তদন্ত যেভাবে এগুচ্ছে, তাতে তার মনে হয়েছে এটা নাশকতা হতে পারে।

তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণের পর বিমানের বাম পাশের ইঞ্জিনের কাইরলং খোলা হলে ওয়েল প্রেসারের বি-নাট ঢিলা পাওয়া যায়। এটি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয় বলেই সে সময় এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন।

ওই ঘটনা তদন্তে সে সময় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। এর একটি করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, অপরটি করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং আরেকটি তদন্ত করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক তদন্তে কর্মকর্তাদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর রাতে দণ্ডবিধির ১০৯/১১৮/১২০(খ)/২৮৭ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারায় বিমানের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) এমএম আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় ১১ আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন।

আসামিরা হলেন বিমানের ইঞ্জিনিয়ার অফিসার নাজমুল হক, জুনিয়র টেকনিশিয়ান শাহ আলম, বিমানের প্রধান প্রকৌশলী (প্রোডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স) এস এ সিদ্দিক ও প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সিস্টেম কন্ট্রোল) বিল্লাল হোসেন, প্রকৌশল কর্মকর্তা সামিউল হক, লুৎফর রহমান, বিমল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসাইন, প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান ও টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান।

মামলায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর হাঙ্গেরি সফরে যাওয়ার বিমানটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন আসামিরা। ২০১৬ সালের ২৬ নভেম্বর ওই উড়োজাহাজ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করেন তারা। ২৭ নভেম্বর সকাল ৯টা ১৪ ঘটিকায় শাহজালাল আন্তজাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে বিমানটি।

উড়োজাহাজটি অনুমানিক দুই ঘণ্টা ২৮ মিনিট প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উড়ার পর পাইলট ইঞ্জিনে তেল কমার লক্ষণ দেখতে পান।আর ৩০ মিনিট পর পাইলট ইঞ্জিনের তেলের চাপ আরও কমার লক্ষণ দেখতে পান।এরপর বাংলাদেশ সময় ১টা ৫৮ মিনিটে ইঞ্জিনে তেলের চাপ লিমিটের নিচে নেমে আসায় উড়োজাহাজটি নির্ধারিত গন্তব্যের আগেই তুর্কিমিস্তানের রাজধানীতে পাইলট অবতরণ করতে বাধ্য হন।

মামলার পরে আসামিদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং এই মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে। প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়া হলো আদালতে। এই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এখন আদেশ দেবেন বিচারক।

(ঢাকাটাইমস/০৭ডিসেম্বর/জেডএ/ডব্লিউবি)