গুম হওয়া স্বজনদের ফেরার অপেক্ষায় তারা

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:১৯ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গত কয়েক বছর ধরে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বেশ কিছু মানুষের স্বজনরা জড়ো হয়েছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবে। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন স্বজনের ছবি। বলেছেন, প্রিয় মানুষ হারিয়ে কতটা কষ্টে আছেন। বছরের পর বছর ধরে না ফিরলেও স্বজনরা ফিরবেন-এই আশা এখনও ছাড়ছেন না তারা।

রবিবার নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা সংবাদ সম্মেলন করতে সেখানে জড়ো হন। ‘মায়ের ডাক, সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দাও’  শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনে যান গুমের শিকার ২৭টি পরিবারের সদস্যরা।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান চার বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলামের বোন মারুফা ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের গুম পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত হতে হচ্ছে। এই বিচার চাইতে গুম হওয়া মুন্নার বাবা, পারভেজের বাবা মারা গেছেন। পিন্টুর মা ও আমার মা অসুস্থ। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

অনুষ্ঠানে গুমের জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করেন বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সরকার সতর্ক থাকলে দেশে এত গুম খুন হতো না। গতকাল ফরহাদ মজহারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় আমি বুঝতে পেরেছি পুলিশ ও র‌্যাব সক্রিয় ছিল বলে উনি ফিরে আসতে পেরেছেন। এতে বোঝা যায় তাঁর নিখোঁজ হওয়ার পেছনে অন্য কোনো শক্তি কাজ করেছিল।ৎ

অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমি গুমের পরিস্থিতির শিকার এই কঠিন সময়টি সম্পর্কে আমি জানি। প্রতি বছর এভাবে শোক বিহ্বল পরিস্থিতি দিয়ে গুমের শিকার পরিবারগুলো সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানিয়ে যান। তাঁদের সন্তান, ভাইয়ের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এই আহ্বান কারও কানে পৌঁছায় না। গুম অস্বীকার করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।’

মান্না বলেন, ‘গত এক বছরে দেশে ৫২ জন গুম হয়েছেন এবং কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন ৮৭ জন। কেউ গুম হলে থানা অভিযোগ নিতে চায় না। চাপে পড়ে অভিযোগ নিলেও কোনও অগ্রগতি হয় না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসাচং ইউনিট (রামরু)-এর পরিচালক সি আর আবরার বলেন, ‘গুম পরিবারগুলোর যে অভিযোগ, রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার জবাব দেওয়া। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তারাই এখন নীরব।’

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক  রুমিন ফারহানা বলেন, ‘একটা মানুষ যখন হারিয়ে যায়, তখন তার পরিবার অনন্তকাল ধরে তার ফিরে আসার অপেক্ষা করে। প্রতি মুহূর্তের অপেক্ষা মৃত্যুর চেয়ে অনেক কঠিন।’

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের সংখ্যা দিয়ে গুমকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমরা বিচারের নায্যতায় নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সেই পরিস্থিতিতে আমরা মার্চ মাসের মধ্যে গণশুনানির দাবি জানাচ্ছি।’

ঢাকাটাইমস/১০ডিসেম্বর/জিএম/ডব্লিউবি