এক সেতুর দুর্ভোগে শ্রীপুরের হাজারো মানুষ

প্রকাশ | ২২ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৭:৫২

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

গাজীপুরের শ্রীপুরে বরমীর পেলাইদ এলাকায় উড়িয়াদী খালের উপর নির্মিত সেতু ভেঙ্গে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছে শ্রীপুর, কাপাসিয়া ও গফরগাঁও উপজেলার হাজারো মানুষ।

বরমীর সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী কয়েকটি সড়ক যান চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় শ্রীপুর থেকে গোসিঙ্গা-পেলাইদ হয়ে যাতায়াত করত বরমীসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলার লোক। উড়িয়াদী সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষ।

রাজধানী ঢাকার সাথে কিশোরগঞ্জ সহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে শ্রীপুরের বরমী এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সেতু নির্মাণ করে বতর্মান সরকার। এরপর কয়েকটি উপজেলার মানুষ শ্রীপুর-গোসিঙ্গা-পেলাইদ সড়ক ব্যবহার করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সংযুক্ত হত।

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আলী আজমত জানান, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে শ্রীপুর-বরমী সড়কটি কয়েক বছর বন্ধ রয়েছে। ফলে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ বিকল্প বরমী-পেলাইদ-গোসিঙ্গা-শ্রীপুর সড়ক ব্যবহার করে আসছেন। ফলে ওই সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে গিয়েছিল। অপরদিকে স্থানীয়দের বাঁধা সত্ত্বেও এ সড়ক দিয়ে কয়েকমাস যাবত ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বালু বহনকারী ড্রাম্প ট্রাক দিন রাত চলাচল করে আসছে। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে উড়িয়াদী খালের উপর নির্মিত ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ে।

বরমী গ্রামের ব্যবসায়ী আল-আমীন বলেন, বরমী-শ্রীপুর সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় দুই মাস যাবত বিকল্প সড়ক হিসেবে এ সড়ক দিয়ে ব্যবসার মালামাল আনা নেয়ার কাজ করতাম। এখন এ সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ায় ত্রিশ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী আজহারুল ইসলাম জানায়, বরমী-শ্রীপুর সড়ক বন্ধ হওয়ার পর আমরা ১০ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরের গিয়ে কলেজ করতাম। এখন এ ব্রিজটি ভেঙ্গে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় কলেজে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ভাংনাহাটি গ্রামের হ্যামস কারখানার শ্রমিক নাজমা আকতার বলেন, পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী থেকে নৌকাযোগে এসে বরমী ঘাট থেকে অফিসের পরিবহনে যাতায়াত করতাম। এখন ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় আমাদের পাঁচ কিলোমিটার পথ হেটে আসতে হয়।

বরমী বাজারের ব্যবসায়ী রিপন সাহা জানান, বরমী বাজারে কয়েক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বরমীর অন্যান্য সড়ক যান-চলাচলের অনুপযুক্ত থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মালামাল পরিবহনের সর্বশেষ ব্যবস্থা ছিল গোষিঙ্গা-পেলাইদ-বরমী সড়কটি। কিন্তু তা ভেঙ্গে পড়ায় এখন ৩০ কিলোমিটার ঘুরে চলতে হচ্ছে।

বরমী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক হোসেন জানায়, পেলাইদ থেকে চার কিলোমিটার দুরে বিদ্যালয়ে ইজি বাইকের মাধ্যমে যাতায়াত করত। ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় এখন আর গাড়ি চলে না। অনেক কষ্টে হেঁটে চলাচল করতে হয়।

পেলাইদ গ্রামের ইজি বাইক চালক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, এ সড়কে ইজি বাইক চালিয়ে দৈনিক এক হাজার টাকা আয় করতাম। কিন্তু এই সেতুটির কারণে এখন আর এ সড়কে যাত্রী পাওয়া যায় না।

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল হক বাদল সরকার বলেন, জনদুর্ভোগ বিবেচনায় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে আপাতত পায়ে হেটে চলাচলের জন্য বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে দেয়া হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেন বলেন, অতিরিক্ত চাপে পুরাতন এ ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। তবে খুব দ্রুততম সময়ে ব্রিজ নির্মাণের প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যেই দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২২ডিসেম্বর/প্রতিনিধি/মোআ)