গাইবান্ধা-৩: ছাড় নয় ফিরে পেতে চায় জাপা

উত্তম সরকার, গাইবান্ধা
 | প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:১৪

টানা ৩০ বছর যে আসন নিজেদের দখলে ছিল সেটি এবার ফেরত পেতে চায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা)। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবার আর আসনটি ছাড় দিতে নারাজ তারা। ইতিমধ্যে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে জনসংযোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে জাপার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাংগঠনিক ও জনসংযোগ তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যসহ আছেন অন্তত এক ডজন প্রার্থী।

১৯৮৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত একটানা ৩০ বছর আসনটি ধরে রেখেছিলেন জাপা প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাওয়া-না ওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে জাপা ভেঙে গেলে তিনি কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন অংশে যোগ দেন। ফলে দশম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দেয়ায় আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায় তাদের। ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে সহজ বিজয় লাভ করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. ইউনুস আলী সরকার। ওই নির্বাচন বর্জন করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট।

দশম সংসদ নির্বাচনে অনেকটা ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগ এ আসনটি নিজের ঘরে তুললেও মূলত এটি জাপার দুর্গ হিসেবে পরিচিত। তাই জাপা আগামী নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া। দলটি ইতিমধ্যে তাদের নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে।

জাপার চেয়ারম্যান এরশাদ এ আসনে তার দলের তরুণ প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পীকে একাধিক কর্মী সম্মেলনে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। এর পর থেকে দিলারা খন্দকার মাঠে-ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন। জনসংযোগের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন কর্মী বৈঠকে। নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে প্রচারণায় মাঠ গরম করে তুলেছেন তিনি। সাম্প্রতিক বন্যার সময় তিনি ত্রাণ তৎপরতার মধ্য দিয়ে বন্যার্ত মানুষের দোয়া নেন। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শোতে অংশ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে তৈরি করেছেন আকর্ষণ।

প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করেন দিলরুবা খন্দকার। তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মকা- চালাবেন তিনি।

এদিকে আওয়ামী লীগ এই আসনে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। মনোনয়ন-প্রত্যাশীর সংখ্যাও তাই অনেক বেশি দুই উপজেলার ২০ ইউনিয়ন (সাদুল্যাপুরে ১১ ও পলাশবাড়ী ৯) নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৩ আসনে। সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান সাংসদ ডা. ইউনুস আলী সরকার এবং পলাশবাড়ীর বাসিন্দা সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি উম্মে কুলছুম স্মৃতি ছাড়াও এক ডজনের বেশি সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।

ক্ষমতাসীন দল থেকে মনোনয়ন-প্রত্যাশী অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর প্রধান, সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ, ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. শাহ মো. ইয়াকুব উল আজাদ, দলের উপজেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গাইবান্ধা জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার প্রধান বিপ্লব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফিরোজ কবীর সুমন, সাদুল্যাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদাক শাহরিয়ার খান বিপ্লব, সাদুল্যাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য এম এ ওয়াহেদ মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আজিজার রহমান বিএসসি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম।

সম্ভাব্য প্রার্থীর আধিক্য সম্পর্কে পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক উপাধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম লিখন বলেন, বড় দলে মনোনয়ন-প্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। তবে যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন দলের নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই কাজ করবেন।

পলাশবাড়ী ও সাদুল্যাপুর উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের বর্ণনা দিয়ে সাংসদ ইউনুস আলী সরকার বলেন, পরিচ্ছন্ন রাজনীতি এবং উন্নয়ন কর্মকা-ে বিশ^াসী তিনি। বঙ্গবন্ধু-কন্যা তার কর্ম তৎপরতায় সন্তুষ্ট হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই তিনি মনোনয়নের বিষয়টি দেখবেন বলে আশা করেন ইউনুস আলী।

মনোনয়ন-প্রত্যাশী মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি এলাকার উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করবেন। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে রাজনীতি করবেন।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন-প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সভাপতি ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক। খ্যাতনামা এই চিকিৎসক সম্প্রতি গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে জেলার উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। সেখানে তিনি বিএনপির মনোনয়নে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তার মনোভাব ব্যক্ত করেন।

বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মইনুল হাসান বলেন, দলীয় চেয়ারপারসন তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি এলাকার জনগণের সমর্থন নিয়ে বিজয়ী হবেন এ বিশ্বাস তার রয়েছে। তিনি কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে এলাকায় উন্নয়ন পরিষদ ব্যানারে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে দলমত নির্বিশেষে সেবামূলক কর্মকান্ডে অংশ নেয়ার জন্য এলাকায় তার বিপুল জনসমর্থন রয়েছে।

এ ছাড়া পলাশবাড়ি থানা বিএনপির সভাপতি শাহ আলম সরকার, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা ড. মাসুম মিজান মনোনয়ন-প্রত্যাশী। মনোনয়ন চাইতে পারেন বিএনপি জোটের শরিক দলের মধ্যে জাপার (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এ আসনের ছয়বারের এমপি ড. টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, জামায়াতের জেলা শূরা সদস্য পলাশবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাওছার মো. নজরুল ইসলাম লেবু।

অন্য দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাদুল্যাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম খাদেমুল ইসলাম খুদি দলের মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেন, মহাজোটের শরিক হিসেবে তিনি ১৪ দলের প্রার্থিতা চাইবেন। এ আসনে জাসদের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী দলের উপজেলা সভাপতি সাংবাদিক নুরুজ্জামান প্রধান।

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :