বিয়ের গহনা ডাকাতি, এগিয়ে এলেন পড়শিরা

প্রকাশ | ০৪ মার্চ ২০১৮, ১৩:৪২ | আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮, ১৩:৪৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

বিয়ের চার দিন আগের ঘটনা। অনেক কষ্টে জোগাড় করা নগদ টাকা, সোনাদানা লুট করে পালায় ডাকাত দল। একমাত্র মেয়ের বিয়ের আগে এমন ঘটায় চিন্তায় ঘুম ছুটে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার চ্যাংদানা গ্রামের সর্দার পরিবারের। বিয়ের ক’দিন আগে এমন বিপদের মুখে পড়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন কনেও।

তাদের পাশে এসে দাঁড়ান হবু বর ও তার পরিবার। সাহায্যের হাত বাড়ান পড়শিরাও। সকলের সহযোগিতায় শনিবার রাতে বিয়ে হলো মানসী নামে ওই তরুণীর। নিজেরাই জোগাড়যন্ত্র করে নতুন বৌকে সাজিয়েগুজিয়ে ঘরে তুললেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। সব দেখে নিশ্চিন্ত মানসীর বাবা মণিমোহন সর্দারও।

শনিবার মণিমোহনবাবু বলেন, ‘একমাত্র মেয়েটার ভালো করে বিয়ে দেব বলে তিলে তিলে টাকা জমিয়ে সোনার গয়নাগুলি বানিয়েছিলাম। আরও অনেক শখের জিনিসও কেনা হয়েছিল। সব কিছু ডাকাতে নিয়ে গেল। আত্মীয়-পরিজনেদের নিমন্ত্রণ করা হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল।’

এ দিন মানসীর বিয়ের পরে বাবা জানান, বরপক্ষ এবং প্রতিবেশীদের পাশে পেয়েই এই সংকটের সময়টা কেটে গেল।

বিয়ের আসরে এ দিন হাজির ছিলেন মানসীর প্রতিবেশীরাও।

তারা জানান, ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে গ্রামে পাশাপাশি থেকেছেন আর বিপদের দিনে পাশে থাকবেন না, তা কি হয়! ডাকাতির ঘটনার পর থেকে তাই টানা সর্দার পরিবারের পাশে ছিলেন প্রতিবেশী ফারুক আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘মণিমোহনদার মেয়ে তো আমাদেরও মেয়ে। ওর বিয়ের প্যান্ডেল, বাজারহাট থেকে মিষ্টি আনা- আমরাই সব দেখভাল করছি।’

বন্ধুর বিয়ে উপলক্ষে মুর্শিদাবাদের শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছেন তুহিনা পারভিন। তিনি জানালেন, ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছেন।

মানসীর বিপদের কথা শুনে আর থাকতে পারেননি। বিয়ের দু’দিন আগেই তাই বন্ধুর কাছে চলে এসেছেন তিনি।

পাত্র বিষ্ণু দাস দেগঙ্গার বিপ্লব কলোনির বাসিন্দা। জাহাজে কর্মরত। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দু্ই মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছেন বিয়ে উপলক্ষে।

এ দিন তিনি বলেন, ‘আমি তো মানসীকে বিয়ে করছি, টাকা-অলঙ্কারকে তো নয়। ডাকাতির পরে মানসী যতই ভয়ে থাক, বিয়ে ঠিকভাবে হওয়া নিয়ে আমার কখনওই চিন্তা হয়নি।’

বিষ্ণুর বাবা সুকুমার দাস ও মা গৌরী দাসেরও একই কথা।

গৌরীদেবী বলেন, ‘শাঁখা-সিঁদুর দিয়ে বিয়েটা হলেই হলো। আমরা নিজেদের সাধ্যমতো বৌমাকে সাজিয়ে ঘরে তুলব। টাকা-গয়নার জন্য আবার বিয়ে আটকে যায় নাকি? আমরাও তো বাবা-মা।’

শনিবার সকাল থেকে বাড়িতে আত্মীয়-প্রতিবেশীদের আসতে দেখে মুখে হাসি ফুটেছে মানসীরও। বিকাল থেকে সেই বাড়িতে বাজতে শুরু করে সানাই।

সন্ধ্যায় কনের সাজে মানসী বলেন, ‘সে দিন ডাকাতির পর থেকে খুব ভয় করছিল। এমন বিপদের পরেও সব কিছু ভালোভাবে মিটল।’

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

(ঢাকাটাইমস/৪মার্চ/এসআই)