গারদখানা থেকে পালিয়ে যাওয়া কাউসার জেএমবির স্বক্রিয় কর্মী

প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০১৮, ১৩:৩৫

এম. লুৎফর রহমান, নরসিংদী

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. জাফর ইকবালের ওপর জঙ্গি হামলার পরদিনই নরসিংদীর আদালত থেকে পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যান নব্য জেএমবির সদস্য কাউসার ওরফে কাশেম ওরফে কাশু ওরফে ফরিদ। তিনি জঙ্গিদের অর্থের জোগান দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি ও ছিনতাই করতেন। এ কারণে জাফর ইকবালের ওপর হামলার সঙ্গে জঙ্গি ফরিদের পালানোর কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম।

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পলাতক ফরিদ সিরাজগঞ্জের কালিম উদ্দিনের ছেলে। ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নরসিংদী শহরের বাসাইলের একটি বাড়িতে জঙ্গি তৎপরতা ও ডাকাতি করার সময় চার সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময় তাদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের সঙ্গে জঙ্গি তৎপরতার সম্পৃক্ততা পায়। পরে তাদের অস্ত্র ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় আটটি মামলা রয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত হাজিরার জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে শনিবার নরসিংদী জেলা কারাগারে আনা হয়। সেখান থেকে পুলিশ রবিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে জেলা আদালতের হাজতে নিয়ে আসে। পরে দুপুরে তাকে আদালতের এজলাসে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি পালিয়ে যান। পুলিশ সদস্যরা পিছু নিলেও তাকে আর আটক করতে পারেনি।

পুলিশের বিভিন্ন সূত্র জানায়, ফরিদ নব্য জেএমবির সক্রিয় কর্মী। তিনি গ্রেপ্তার মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গিদের মামলা ও সংগঠন পরিচালনায় অর্থের জোগানের জন্য বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি ও ছিনতাই করতেন। ঢাকার বড় বড় ডাকাতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমনকি গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগারে বসে অন্য বন্দিদের নব্য জেএমবির সদস্য হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার পরদিনই নরসিংদীর আদালত থেকে তার পালানোর ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছে পুলিশ।

বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এলে ফরিদকে গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যসহ একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। তবে তিনি নরসিংদী ছেড়ে অন্য জেলায় আত্মগোপন করেছেন বলে ধারণা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা এবং মামলায় কোনো আইনজীবী ব্যবহার না করায় সূত্র পেতে বেগ পোহাতে হচ্ছে পুলিশকে।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বলেন, আদালত থেকে পালানো ফরিদকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। আদালতে সিসি ক্যামেরা থাকলে তার পালানোর ঘটনা সহজে উদ্ঘাটন করা সম্ভব হতো।

আদালত পুলিশের ওসি মো. রুহুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে  বলেন, এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা চেষ্টা করছি- তাকে গ্রেপ্তার করার। আমরা সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলা ও সার্বিক বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন।

তিনি আরও বলেন, আদালতের নিরাপত্তার জন্য আমরা সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিলাম। পরে বিচারকদের আপত্তির কারণে তা খুলে ফেলতে বাধ্য হয়েছি। আজকে যদি সিসি ক্যামেরা থাকত, তা হলে সহজেই ঘটনাটি বের করে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হতো।

(ঢাকাটাইমস/৬মার্চ/প্রতিনিধি/এলএ)