খালেদার জামিনের মুক্তিতে যত বাধা

প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০১৮, ০৮:০২ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮, ০৮:০৩

মোসাদ্দেক বশির, ঢাকাটাইমস

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে ইপল করে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও কারামুক্তিতে এখনও নানা বাধা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে জামিন দিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আজ বুধবার শুনানি হবে আপিল বিভাগে। তবে এই মামলায় জামিন মিললেই তিনি মুক্তি পাবেন, এমনটা নয়। 

এরই মধ্যে কুমিল্লায় বাসে পেট্রল বোমা হামলায় আট জনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ২৮ মার্চ তাকে আদালতে হাজিরের জন্য পরোয়ানা (পিডাব্লিউ) দিয়েছে কুমিল্লার আদালত।

এ মামলায় জামিন না হওয়া পর্যন্ত তার কারামুক্তি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

কুমিল্লার মামলার শুনানির দিন আবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা যুক্তিতর্কের জন্য রেখেছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণাকারী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫।

১০০ কিলোমিটার দূরত্বে দুটি আদালতে একই দিন হাজির হওয়া অসম্ভব, বলছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা। আবার সেদিন তাকে কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়াকে হাজির না করা হলে তার কারাবাস আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আইনজীবীরা।    

এ মামলা ছাড়াও আরো চারটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জরি রয়েছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। কুমিল্লার বাসে পেট্রল বোমার ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের মামলা, ঢাকায় যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেওয়ার একটি মানহানির এবং ১৫ আগস্ট ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগের মামলা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে নড়াইলে করা মামলা।

রাজধানীর বকশি বাজার বিশেষ আদালতে যে ১৬টি মামলা স্থানন্তর করা হয়েছে তার মধ্যে এই পাঁচটি মামলা নেই বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। অর্থাৎ এসব মামলায় বিএনপি নেত্রীকে আদালতে গিয়েই জামিন নিতে হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘কুমিল্লায় গাড়ি পোড়ানো ও মানুষ হত্যার অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে সেসব ঘটনার পেছনে খালেদা জিয়ার প্ররোচনার অভিযোগ রয়েছে। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে কাস্টোডি ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। এর মানে হলো ওই মামলাতেও তিনি কারগারে অবরুদ্ধ আছেন। তাই এই মামলাতেও তিনি জেলে আছেন বলে ধরতে হবে এবং মামলাতেও জামিন না হওয়া পর্যন্ত তার জামিনের সুযোগ নেই।’

গত সোমবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে চার মাসের জন্য জামিন দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি সহিদুল করিমের বেঞ্চ।  

মঙ্গলবার হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন ও রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিনের বিষয়টির ভাগ্য নির্ধারণ হবে।  

খালেদা জিয়ার আইনজীবী জাকির হোসেন ভূইয়া ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকালে ম্যাডামের (বিএনপি নেত্রী) জামিনের আদেশের কপি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসেছে। বুধবার আমরা জামিননামা দেবো।’

কুমিল্লার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোয় খালেদা জিয়ার কারাবরণ দীর্ঘ হবে কিনা জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘এটা নিয়ে এখনই আমরা ভাবছি না। আগে বেইলবন্ড দেয়, তার পর দেখা যাবে।’         

কুমিল্লায় বাসে পেট্রল বোমা হামলার ঘটনায় দুই হত্যা মামলা

২০১৫ সালে বিএনপির অবরোধ আন্দোলন চলাকালে ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে চৌদ্দগ্রামের মিয়ার বাজার এলাকায় ইউনিক পরিবহনের একটি বাসে পেট্রল বোমা হামলা হয়। এতে দগ্ধ হয়ে আটজন মারা যান। আহত হন আরো অন্তত ২০ যাত্রী।

এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে প্রধান আসামি করে ৫৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২০ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা করে পুলিশ। এতে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় ছয় নেতাকে করা হয় হুকুমের আসামি।

এই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গত ২ জানুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম জয়নব বেগম।

একই ঘটনায় করা বিস্ফোরক আইনের গত বছরের ৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে কুমিল্লার আদালত।

দুটি মামলাতেই খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা পড়েছে আদালতে।

পতাকার মানহানির মামলা

২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই মামলাটি করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী।

মামলায় বলা হয়, স্বীকৃত স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে জাতীয় পতকা তুলে দিয়ে খালেদা জিয়া দেশের মানচিত্র এবং জাতীয় পতাকার মানহানি ঘটিয়েছেন।

এই মামলায় সমন জারির পরও খালেদা জিয়া হাজির না হওয়ায় মহানগর হাকিম নূর নবী তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

আদালতের নির্দেশে তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম মশিউর রহমান গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় প্রতিবেদন দেন। এতে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।

২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে একাত্তরের আলবদর নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদকে মন্ত্রী বানান খালেদা জিয়া। মানবতাবিরোধী অপরাধে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

খালেদা জিয়া ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে তুলে দিয়ে দেশপ্রেমিক জনগণের মর্যাদা ভূলণ্ঠিত করেছেন বলে অভিযোগপত্র বলা হয়। এতে বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারার মানহানির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করা হয় অভিযোগপত্রে।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের মামলা

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বির্তকিত মন্তব্যের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে নড়াইলের একটি আদালত।

২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বির্তক আছে বলে মন্তব্য করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি।

এই ব্ক্তব্যের জেরে নড়াইলের নড়াগাতি থানাধীন চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম ২৪ ডিসেম্বর নড়াইল সদর আমলি আদালতে মামলা করেন।

ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগের মামলা

১৫ আগস্ট ‘ভুয়া’ জন্মদিন পালনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে একটি আদালত।

অবশ্য এই মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ফিরিয়ে দিয়েছে আদালত।

এই মামলার বাদী ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, খালেদা জিয়ার ম্যাট্রিক পরীক্ষার নম্বরপত্র অনুযায়ী জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬ সাল। ১৯৯১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রকাশিত জীবনীতে বলা হয়, তার জন্মদিন ১৯ আগস্ট, ১৯৪৫ সাল। তার বিয়ের কাবিন নামায় জন্মদিন ৪ আগস্ট, ১৯৪৪ সাল। সর্বশেষ ২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী তার জন্মদিন ৫ আগস্ট, ১৯৪৬ সাল।

মামলায় বলা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে তার ৫টি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিন পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি পাঁচটি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীর জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ উৎসব করে জন্মদিন পালন করে আসছেন। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সুনাম ক্ষুন্ন করতে তিনি ওই দিন জন্মদিন পালন করেন।

(ঢাকাটাইমস/১৪মার্চ/এমএবি/ডব্লিউবি)