ভোটের বছরে এমপিওর জন্য বরাদ্দ রাখছেন অর্থমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০১৮, ২৩:২৭ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮, ২৩:৫১

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

গত আট বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ না রাখলেও ভোটের বছর বাজেটে টাকা রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রাক বাজেট আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মন্ত্রী। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই হবে জাতীয় নির্বাচন। আর ভোটের এক বছর থাকতে সম্প্রতি এই সুবিধার জন্য আন্দোলনও করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

এক প্রশ্নে মুহিত জানান, এমপিও সুবিধার বাইরে থাকা এক হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান এবার এই ‍সুবিধা পেতে পারে। তবে পর্যায়ক্রমে সব প্রতিষ্ঠানই এই সুবিধা পাবে।

এমপিওভুক্তির জন্য কত টাকা বরাদ্দ থাকবে, সেটি অবশ্য জানাননি মন্ত্রী। বলেন, ‘এখনও বলতে পারছি না কত বরাদ্দ দেওয়া হবে, সেটা দেখব। তবে সব একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করা যাবে না।’

এমপিও সুবিধা পাওয়া বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারীরা মূল বেতনের শতভাগ সরকার এবং এর বাইরে কিছু ভাতা পান। সবশেষ ২০১০ সালে ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি স্কুলকে এমপিওভুক্ত করা হয়। বাকিগুলোতে এই সুবিধার আওতায় আনতে নানা সময় দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সংগঠন।

নানা সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপিও সুবিধা দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেন দরবার করে আসছিলেন। কিন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ না দেয়ায় কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধা দেয়া যায়নি।

এমপিও সুবিধার বাইরে থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও সুবিধার দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। টানা পাঁচদিন অবস্থান করার পর কোনো সাড়া না পেয়ে ৩১ ডিসেম্বর থেকে তারা আমরণ অনশনে যায়। কর্মসূচির ষষ্ঠ দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রতিনিধি পাঠিয়ে শিক্ষকদেরকে এমপিও সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দেন। এরপর অনশন প্রত্যাহার করে তারা বাড়ি ফিরে যান।

সে সময় শিক্ষক নেতারা জানান, এমপিও সুবিধার বাইরে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধার আওতায় আনতে বছরে সরকারের ব্যয় হবে এক হাজার কোটি টাকারও কম। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এটা সরকারের জন্য খুব একটা ঝামেলা হওয়ার কথা নয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এমপিওভুক্তের দাবিটা সবচেয়ে প্রচণ্ড, বিশেষ করে এখন নির্বাচনের সময়।’

এই বলে মন্ত্রী সবশেষ কবে এমপিওভুক্তি করা হয়েছে সেটা জানতে চান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে। ২০১০ সালে এটা করা হয়েছে-এমন তথ্য শুনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে তো দিতেই হবে এবার ‘

‘এটা মাস্ট দিতেই হবে। এ বছর কোন মতেই আটকানো যাবে না।’

অর্থমন্ত্রী জানান, মাধ্যমিকে ২৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন এপিওভুক্ত। আর নয় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠার এই সুবিধার বাইরে।

এই নয় হাজারকেই এক সঙ্গে এমপিও সুবিধার আওতায় আনা হবে কি না- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘না, নয় হাজারকেই একসঙ্গে এমপিওভুক্ত করা যাবে না। সেটা কত করা হবে দেখব, জানাব। এক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা যেতে পারে।’

এমপিওভুক্তি ছাড়াও শিক্ষক সংকট দূর করার দিকেও চোখ রাখছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকের দারুণ অভাব। বিশেষ করে সিটিগুলোতে, জেলায়, বিভাগে। সেখানে এক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রের সংখ্যা ৮০০ থেকে ১২০০। তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ঘরও নেই, শিক্ষকও নেই। এটা একটা বড় সমস্যা। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

ইদানীং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো বেশিদিন টিকছে না বলেও অসন্তুষ্ট অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়া হয় সেটা পাঁচ বছরে শেষ হয়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনন্তকাল থাকত। আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠনে পড়েছি সেটা এখনও আছে। এগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

প্রাক বাজেট আলোচনায় চারটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যন অংশ নেন। এরা হলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটি।

(ঢাকাটাইমস/১৪মার্চ/জেআর/ডব্লিউবি)