বাগেরহাটে যুবদলের আংশিক কমিটি, দুই নেতার পদত্যাগ

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০১৮, ২০:৪১

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

কেন্দ্র থেকে বাগেরহাট জেলা জাতীয়তাবাদী যুবদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সাবেক ছাত্রদলের দুই নেতা হারুন আল রশিদকে সভাপতি ও মোল্লা সুজাউদ্দিন সুজনকে সাধারণ করে জেলা যুবদলের পাঁচ সদস্যের নতুন ওই কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বুধবার যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

এদিকে, নতুন কমিটির জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সাজ্জাদ হোসাইন পদত্যাগ চেয়ে কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে পদত্যাগী নেতারা সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দল বিচ্ছিন্ন, বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগ ঘরানার বলে দাবি করেছেন। অবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করা না হলে যুবদলের সকল সাংগঠনিক ইউনিটের নেতারা একযোগে পদত্যাগ করাসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছেন ওই পদত্যাগীরা।

অপরদিকে, বিএনপির মতামতকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র থেকে জেলা যুবদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদল। সদ্য বিদায়ী যুবদলের সভাপতি মেহেবুবুল হক কিশোর ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী মোল্লা বাবু বর্তমান জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালামের আস্থাভাজন অনুসারী বলে পরিচিত। তিনি তার আস্থাভাজন এই দুই নেতাকে আবারও স্বপদে বহাল রাখতে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের দুজনকে বাদ নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে। যুবদলের নতুন কমিটির সভাপতি হারুন আল রশিদ এবং সাধারণ সম্পাদক মোল্লা সুজাউদ্দিন সুজন জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম বিরোধী বলে পরিচিত।

তবে জেলা বিএনপির ত্যাগী অন্য একটি অংশ নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছে। রাজনীতির মাঠে ভূমিকা রাখা বিএনপির অন্যতম দুটি অঙ্গ সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিএনপি দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে কমিটি নিয়ে নিজেদের ভেতরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসায় আগামী দিনে রাজনীতিতে প্রতিপক্ষদের মোকাবেলায় বাগেরহাটে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।

এরআগে গত ৫ জুন কেন্দ্র থেকে জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করায় তা প্রত্যাখ্যান করে ছাত্রদলের পদ বঞ্চিতদের একটি অংশ স্থানীয় বিএনপির সভাপতি এম এ সালামকে দায়ী করে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে।

মোল্লা সুজাউদ্দিন সুজন জেলা ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী সভাপতি এবং হারুন আল রশিদ আগের কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

নতুন কমিটিতে নাজমুল হুদাকে জেষ্ঠ্য সহসভাপতি, রফিকুল ইসলাম রকিবকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাজ্জাদ হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।

২০১৪ সাল থেকে মেহেবুবুল হক কিশোর জেলা যুবদলের সভাপতি ও আইয়ুব আলী মোল্লা বাবু সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। আগের কমিটিও পাঁচ সদস্যের করা হয়েছিল। তারা গত পাঁচ বছরে জেলা যুবদলের কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে ব্যর্থ হন বলে অভিযোগ ছিল পদবঞ্চিত দলের নেতাকর্মীদের।

যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয়তাবাদী যুবদলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে বাগেরহাট জেলা যুবদলের পুরানো কমিটি বিলুপ্ত করে পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলো। এই কমিটি যুবদলকে সংগঠিত করে আগামীদিনের নেতৃত্বকে এগিয়ে নিবে।

সদ্য গঠিত কমিটির পদত্যাগী সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সাজ্জাদ হোসাইন বিকালে ঢাকাটাইমসকে বলেন, নতুন কমিটির সভাপতি হারুন আল রশিদের বাড়ি বাগেরহাট শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে মোল্লাহাট উপজেলায়। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশ নেন, তিনি দল বিচ্ছিন্ন নেতা। আর সাধারণ সম্পাদক মোল্লা সুজাউদ্দিন সুজন ২০১৪ সালের পর থেকে নিজেকে দলীয় কর্মকান্ড থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। তাই আমি এই কমিটি থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জন বিচ্ছিন্ন এই নেতারা যুবদলের নেতৃত্বে থাকলে আগামীদিনে বাগেরহাটে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন এবং তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে উল্টো আওয়ামী লীগের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে মন্তব্য করেন ওই নেতা।

পদত্যাগী জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা বলেন, সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্মী বিচ্ছিন্ন, বিতর্কিত ও আওয়ামী লীগ ঘরানার। এদের দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন হবে না। তাই আমি কমিটি থেকে পদত্যাগ চেয়ে কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছি। অবিলম্বে এই ঘোষিত কমিটি বাতিল করা না হলে যুবদলের সকল সাংগঠনিক ইউনিটের নেতারা একযোগে পদত্যাগ করে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দেন ওই নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি, যুবদল, কৃষকদল ও শ্রমিকদলের একাধিক নেতা বলেন, বাগেরহাট শহর বিএনপির ঘাঁটি। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ও স্থানীয় ইস্যুতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক এসেছে। কিন্তু আমরা শহরে কোন সভা সমাবেশ করতে পারিনি। জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালামের আপোষহীনতার জন্য বাগেরহাটে বিএনপির রাজনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তিনি হামলা, মামলা, জেলজুলুমের ভয়ে তার অনুগতদের দিয়ে কোন রকমে গোপণে দায়সারা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। বাগেরহাটে বিএনপির আজ নেতৃত্ব শূন্য অবস্থা। কেন্দ্র পাঁচ বছর আগে জেলা যুবদলের পাঁচ সদস্যের কমিটি দিয়েছিল। ওই কমিটি গত পাঁচ বছরে থানা কমিটি তো দূরের কথা জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি পর্যন্ত করতে পারেনি। বিগত দিনের যুবদলের ব্যর্থতা কার। তাই বাগেরহাটের রাজনৈতিক শূন্যতা বুঝতে পেরে পদ আকড়ে থাকা অযোগ্যদের বিদায় দিয়ে নতুনদের সুযোগ করে দেয়ায় কেন্দ্র কমিটিকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সেই সাথে নতুন এই কমিটি যুবদলকে সংগঠিত করে আগামীদিনে রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মূখ্য ভূমিকা রাখবে বলে আশা ওই নেতাদের।

এ প্রসঙ্গে সদ্য বিদায়ী জেলা যুবদলের সভাপতি মেহেবুবুল হক কিশোর বলেন, বিরোধী দলে যাওয়ার পর মিথ্যা নাশকতাসহ অসংখ্য মামলার আসামি হয়েছি। পুলিশ ও বিরোধীদলের ভয়ে অধিকাংশ সময় এলাকায় থাকতে পারি না। গ্রেপ্তারের ভয়কে উপেক্ষা করে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি সফল করেছি। বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছি। আমি পারিবারিকভাবে বিএনপির রাজনীতিতে আছি। আমি ছাত্র অবস্থা থেকে ছাত্রদলের রাজনীতিতে ছিলাম। দীর্ঘদিন ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিয়েছি। রাজনীতির মাঠে অগ্রহী ভূমিকার কারণে যুবদলের নেতৃত্বে ছিলাম তা সবাই জানে। এটা কারও দয়া বা করুণায় পাইনি। বিরোধী দলে যাওয়ার পর কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি দেয়। সরকারি দলের হামলা মামলার ভয়ে এলাকায় থাকতে পারিনি। তাই যুবদলের কমিটি করতে ব্যর্থ হয়েছি। যুবদলের কমিটি কেন্দ্র কেন আমাকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি দিল তা আমার বোধগম্য নয়।

জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম এই প্রতিবেদককে বলেন, বাগেরহাটে বিএনপির রাজনীতিতে কোন নেতার কি ভূমিকা তা দলের নেতাকর্মীরাই ভাল জানেন। গত নয় বছরে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের পদধারী ওই নেতারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে বাগেরহাটের রাজপথে কি ভূমিকা রেখেছেন তা তুলে ধরতে সাংবাদিকের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন। যুবদলের যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে থাকার কারণে যুবদল নেতারা মিথ্যা নাশকতাসহ একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন। জেল খেটেছেন। তারা এমনি এমনি পদ পায়নি। তারা মাঠের নেতা। যুবদলের এই কমিটি ঘোষণায় কেন্দ্র জেলা বিএনপির মতামতকে উপেক্ষা করেছে। যাকে সভাপতি করা হয়েছে তিনি জেলা সদরে থাকেন না। তিনি যুবদলের মত একটি সংগঠনকে মোল্লাহাটে বসে কিভাবে পরিচালনা করবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে এই কমিটি পরিবর্তন করতে কেন্দ্রে আমরা কথা বলব।

জেলা যুবদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি হারুন আল রশিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি জেলা ছাত্রদলের জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। পরে আমাকে দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। ছাত্রদল থেকে বিদায় নেয়ার পর যুবদলে আমার জায়গা হয়নি। আমি দলের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করিনি বলে বিগত কমিটি আমাকে পদ বঞ্চিত করে রেখেছিল। বিগত কমিটি গত পাঁচ বছরে জেলা যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কেন্দ্র বাগেরহাট জেলা যুবদলকে সংগঠিত করতে পুরানো কমিটি ভেঙে যে নতুন কমিটি দিয়েছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমি আমার কমিটির সদস্যদের নিয়ে জেলার সকল ইউনিটকে শক্তিশালী করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে ভূমিকা রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।

(ঢাকাটাইমস/৪জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)