লালমনিরহাটে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ জুলাই ২০১৮, ২০:২৯

ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার ২০ হাজার মানুষ। বন্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নদী ভাঙন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বসত-বাড়ি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন নদী তীরবর্তী মানুষগুলো।

তিস্তা ব্যারেজের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ দোয়ানী পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটর। যা ছিল বিপদ সীমার ২ সেন্টিমিটার নিচে। কয়েক ঘণ্টা পর পানি বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে দুপুরে ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পরে ওই দিনই সন্ধ্যায় ৬টা থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে খুলে দেয়া হয়েছে ব্যারাজের সকল জলকপাট।

অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন এবং আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার রাজপুর, খনিয়াগাছ ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকাসহ ২৫ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার সংকট দেখা দিলেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

এদিকে তিস্তা গোবর্দ্ধন চর ঘেষা স্প্যার বাঁধের ভাটিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ১০টি বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাস্তহারা মানুষগুলো বাঁধের উচু স্থানে ভাঙা টিন দিয়ে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। এছাড়া বন্যাকবলিত চরাঞ্চলগুলোর মানুষজন মাচাংয়ের ওপর চুলা বসিয়ে কোনো রকমে চাল সিদ্ধ খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। এছাড়া গত এক সপ্তাহে জেলায় শতাধিক ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো।

আদিতমারী উপজেলার কুটিরপাড় বালুর বাঁধের প্রায় দুই শত মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বাঁধটি রক্ষায় কাজ শুরু করেছে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ। জরুরি প্রতিরক্ষা প্রকল্পের আওতায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও বাঁশের পাইলিং দিয়ে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন লালমনিরহাট পাউবো কর্তৃপক্ষ।

ওই এলাকার আবু তালেব ও আলমগীর হোসেন জানান, গত কয়েক রাত ধরে চোখে ঘুম নেই। রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন। কখন হিংস্র স্রোতে ভেসে যায় বসত বাড়ি। এ আতঙ্কে তাদের দিন কাটছে।

তিস্তা ঘেষা মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী জানান, চলতি সপ্তাহে এ ইউনিয়নে মোট ৪৫টি বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিরীন হয়ে গেছে। কুটিরপাড় বালুর বাঁধটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে আরও প্রায় ১০টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়বে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বৃহস্পতিবার তিস্তার পানি বেড়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে বিপদ সীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ রক্ষায় জরুরিভাবে কোথাও প্রয়োজন পড়লে তার জন্য প্রস্তত রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে বর্ষাকালে পানি প্রবাহ এভাবে বাড়া কমার মাঝেই চলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোর মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিনিয়ত ইউএনও, পাউবো কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নদী পাড়ের খোঁজ-খবর নিয়ে সে অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/৫জুলাই/প্রতিনিধি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :