তরিকুলকে হাতুড়িপেটা, মামলা করছে না কেউ

রিমন রহমান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ০৭ জুলাই ২০১৮, ১৭:৪৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তরিকুল ইসলামকে ছাত্রলীগ নেতার হাতুড়িপেটার পাঁচ দিনেও কোনো মামলা হয়নি। সহপাঠীরা জানিয়েছেন তারা থানায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। বোন বলেছেন, তার ভাইয়ের সুস্থতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ একে অপরের কথা বলছে। কিন্তু কেউ উদ্যোগী হচ্ছে না।

পুলিশ বলছে, মামলা প্রথমত ভুক্তভোগী অথবা তার পরিবারকেই করতে হবে। তা না হলে মামলা করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পুলিশ নিজের থেকে এ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে না।

তবে একজন আইনজীবী বলেছেন, এই ধরনের ঘটনায় রাষ্ট্র অর্থাৎ পুলিশ নিজ উদ্যোগে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিষয়টিকে যে কোনো মূল্যে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাই কেউ এগিয়ে আসছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আহত তরিকুলের খোঁজও নেওয়া হয়নি।

গত ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠনের কয়েকজন নেতাকে পিটুনির প্রতিবাদে ২ জুলাই বিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও মিছিল হচ্ছিল। প্রধান ফটকের সামনে গেলে হামলা হয়।

সে সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী তরিকুলকে ঘিরে ধরে বাঁশ দিয়ে পেটাতে থাকে। আর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন তাকে হাতুড়িসদৃশ একটি বস্তু দিয়ে পেটান বলে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে।

এ সময় পিটুনিতে তরিকুলের ডান পায়ের হাড় ভেঙে যায়। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর তার মাথায় সেলাই পড়ে ৯টি। পুরো পা প্লাস্টার করে দেওয়া হয়। এখনও উঠে বসতে পারেন না তরিকুল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। আর ওই দিনই তাকে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার বেসরকারি হাসপাতাল ‘রাজশাহী রয়্যাল’ এ ভর্তি করা হয়।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তরিকুলের ছোট বোন ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘ আগে ভাইয়ার সুস্থ্যতা প্রয়োজন। এরপর আমরা মামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’

তরিকুল কোটা নিয়ে আন্দোলন করা সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ একজন নেতা। সংগঠনটির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা নিজেরাই থানায় যেতে ভয় পাচ্ছি। মামলা করব কীভাবে? থানায় গেলে আটকে দেওয়া হবে, এমন ভয় দেখানো হচ্ছে।’

সংগঠনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেশমা খাতুনের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের উস্কানি দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো আইনশৃঙ্খলার বিঘœ ঘটাইনি। তবু কেন ছাত্রলীগের হামলা? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি সবকিছু দেখাশোনার জন্য ছাত্রলীগকে দায়িত্ব দিয়েছে? আমরা এ প্রশ্নের উত্তর চাই।’

হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আইনি ব্যবস্থা কেন নেয়া হয়নি, এ বিষয়ে জানতে চাইলে লুৎফর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ঘটনাস্থল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে, মেইন গেটের সামনে। পুলিশের সামনেই সব ঘটেছে। পুলিশ আহত ছাত্রকে উদ্ধার করে তাদের তত্বাবধানে চিকিৎসা করিয়েছে। সুতরাং, এ বিষয়ে পুলিশই ব্যবস্থা নেবে।’

তবে নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন খান বলেন, ‘নির্যাতিত ব্যক্তিকেই মামলা করতে হয়। পুলিশ মামলা করে না। আমাদের আইনগত যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নিচ্ছি। হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা করছি।’

হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এবং ছবিতে হামলাকারীদের স্পষ্টই চেনা যাচ্ছে। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তবে ওসি শাহাদাত জানিয়েছেন, তারা কাউকে শনাক্ত করতে পারেননি।

তরিকুলকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া সিটি নির্বাচনে গণসংহতি আন্দোলন সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আইনজীবী মুরাদ মোর্শেদ অবশ্য পুলিশের বক্তব্য মানছেন না। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনায় ভুক্তভোগী আইনের সহায়তা চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভুক্তভোগী অসহায় হলে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। এটা আইনেই আছে। পুলিশ নিজেই বাদী হয়ে মামলা করতে পারে। আমরা যেটাকে পুলিশ বাদী মামলা বলে থাকি।’

হামলাকারীরা লাপাত্তা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বলছেন, হামলার পর পর পুলিশ তৎপর হলে সবাইকে ধরতে পারত। কিন্তু তারা সেটা না করায় এই সুযোগে পাঠিয়েছে সবাই।

তরিকুলের ওপর হামলার ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আবদুল্লাহ-আল-মামুনই সেই ব্যক্তি যিনি হাতুড়ির মতো দেখতে বস্তুট নিয়ে এসেছিলেন।

আর লাঠি হাতে পেটানো অন্যরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, হাসান লাবন, সহ-সভাপতি গোফরান গাজী, মিজানুর রহমান সিনহা, রমিজুল ইসলাম রিমু, সাদ্দাম হোসেন, আহমেদ সজীব, ছানোয়ার হোসেন সারোয়ার, আরিফ বিন জহির, এবং কর্মী জন স্মিথ ও লতিফুল কবির মানিক।

হামলার পর থেকে মামুন ফোন ধরছেন না, তার ফেসবুক আইডিও ডিঅ্যাকটিভেট করা। অন্যদেরও অবস্থান সম্পর্কে মিলছে না কোনো তথ্য।

ঢাকাটাইমস/০৭জুলাই/আরআর/ডব্লিউবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

ফেসবুক আইডি ক্লোন করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, যুবক গ্রেপ্তার

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পুলিশ সুপারের মতবিনিময়

পতেঙ্গায় ফিশিং বোটের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ

চট্টগ্রামে ঈদকে সামনে রেখে জালনোট চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

বরিশালে নামাজের সময় মসজিদের এসি বিস্ফোরণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রুতগতির লেনে যাত্রী নামানোর অপরাধে ৩৩ যানবাহনকে মামলা 

বরগুনা প্রেসক্লাব দখলের মামলায় ৭ জন কারাগারে  

পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে তাহিরপুরের শহীদ সিরাজ লেক

ঝিনাইদহে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :