আজমিরীগঞ্জ উপজেলার উপ-নির্বাচন

চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ আ.লীগ-যুবলীগের ৪২ জনের নামে মামলা

প্রকাশ | ০৯ জুলাই ২০১৮, ১৮:৪৩

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আলাউদ্দিন মিয়াকে প্রধান করে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের ৪২ নেতা-কর্মীকে আসামি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে।

রবিবার রাতে উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা বিল্লাল মিয়া বাদী হয়ে আজমিরীগঞ্জ থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার অপর আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন-উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন, প্রচার সম্পাদক স্বাধীন মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা খালেকুজ্জামান, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ সেন, পৌর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি টিটন মাহমুদ, যুবলীগ নেতা কামাল সিকদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শেখ আমির হামজা, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ সাদ্দাম, আজমিরীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অনিক আহমেদ।

গত ১৮ জুন আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় হামলা চালিয়ে সভাপতি মিছবাহ উদ্দিন ভূঁইয়াসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের আহত করার ঘটনায় এ মামলাটি দায়ের করেন ওই যুবলীগ নেতা।

এর আগে মামলার বাদীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল।

জানা যায়, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতর আলী মিয়া গত ৩০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। পরে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ গত ১৮ জুন উপজেলা পরিষদ হলরুমে বর্ধিত সভা আহ্বান করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া। সভায় উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মর্তুজা হাসান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আতর আলী মিয়ার ছেলে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. আল-আমিন মিয়া ও রানা রায় উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। শুরু হয় আলোচনা। এতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে গোপন ব্যালটে প্রার্থী নির্ধারণের বিপক্ষে মত প্রকাশ করে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার আলী ৪ সদস্যের বোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থী নির্ধারণের সিদ্ধান্ত দেন। তৃণমূলের নেতারা এর প্রতিবাদ করেন। প্রার্থী আল-আমিন মিয়াও ভোটের দাবিতে অনড় থাকেন। এ সময় মিসবাহ উদ্দিন ভূইয়া সভার সমাপ্তি ঘোষণা করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এনিয়ে নেতা কর্মীদের মাঝে ঠেলাধাক্কা ও হাতাহাতির এক পর্যায়ে হট্টগোল চলতে থাকে। এরই মাঝে আল আমিন হল রুমে অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহত আল-আমিনের ভাই উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলাউদ্দিন বাদী হয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিছবাহ উদ্দিন ভূইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার আলী, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কাকাইলছেও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক ভূইয়াসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে আজমিরীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পরবর্তীতে কেন্দ্র থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়াকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। এ নিয়েও এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে যুবলীগ নেতা আল আমিন হত্যা মামলায় মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে হেলিকপ্টারে করে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। এ বিষয়টি নিয়েও নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী আলাউদ্দিন মিয়া।

এ ব্যাপারে আলাউদ্দিন মিয়ার ভাই স্বাধীন মিয়া জানান, মামলাটি দায়ের করায় এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার জনসাধারণ ও দলীয় নেতাকর্মীরা আগামী ২৫ জুলাই ব্যালটের মাধ্যমে এর জবাব দেবেন।  

এ ব্যাপারে আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইকবাল হোসেন বলেন, রবিবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন যুবলীগ নেতা বিল্লাল মিয়া। ওই মামলায় সোমবার দুপুরে ১৬ আসামি আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন বলেও শুনেছি। তবে জামিনের কাগজপত্র এখনো আমরা পাইনি।

ঢাকাটাইমস/০৯জুলাই/প্রতিনিধি/ইএস