আমি ফ্রান্সেরই সম্ভাবনা দেখছি

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৮, ১৭:৫৯ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮, ১৮:২১

আব্দুস সালাম মুর্শেদী

ফ্রান্স-বেলজিয়াম যে ধরনের লড়াই আশা করেছিলাম তেমনটাই হয়েছে। সেমিফাইনাল হয়েছে সেমিফাইনালের মতোই। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং দুর্দান্ত একটা ম্যাচ দেখলাম। বেশ ভালো লাগলো।দুই দলই সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। বলের পজিশনে বেলজিয়াম এগিয়ে ছিল, কিন্তু ফুটবল যে গোলের খেলা। আমি মনে করি, যোগ্য দল হিসেবে ফ্রান্স ফাইনালে গেছে। দিদিয়ের স্ট্রাটেজি পুরোপুরি সফল।

এ ধরনের বড় ম্যাচে প্রথমে গোল পাওয়া মানে বড় অ্যাটভান্টেজ। সেই অ্যাডভান্টেজ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখলো ফ্রান্স। যদিও পিছিয়ে পড়ার পর বারবার আক্রমণে গেছে বেলজিয়াম। ফান্সের রক্ষণভাগ মজবুত ছিল, তার চেয়ে বড় কথা হলো- হুগো লরিস  এ ম্যাচেও দারুণ সেভ করেছেন। ওদিকে অসাধারণ খেলেছেন হ্যাজার্ড। কিন্তু লুকাকুর বড্ড খারাপ সময় গেছে। সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি। লকাকু ভালো খেলতে পারলে ফল অন্যরকম হতে পারত।

আবার ফ্রান্স এর চেয়ে বড় ব্যবধানেও জিততে পারত। প্রথম অর্ধে তারা গোটা দুয়েক দারুণ সুযোগ পেয়েছিল। শেষ দিকেও গোল পেতে পারত তারা। কোর্তোয়া এ ম্যাচেও দুর্দান্ত সেভ করেছেন। বেলজিয়াম হেরেছে, তবে কোর্তোয়া বাহাবা পাবেন। তিনি মানুষের মনে দাগ কেটেছেন। আর মনে রাখার মতো খেলেছেন হ্যাজার্ড।

আসলে অভিজ্ঞতা একটা বড় ব্যাপার। বেলজিয়াম এই দলটি বেশ অভিজ্ঞ হলেও দেশটির বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা নেই। ৪/৫বার সেমিফাইনাল খেলারও নজির নেই। এখানে বেলজিয়াম ইংল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়ে ছিল। তবে বেলজিয়াম এতদূর যে এসেছে, তার জন্য ধন্যবাদ পাওয়ার দাবি রাখে। দলটির প্রতি পুরো সম্মান রেখেই এ কথা বলছি। যেমন জাপনের সঙ্গেই তারা হেরে যেতে পারত। দুই গোলে পিছয়ে ছিল। ব্রাজিলের বিপক্ষেও বেলজিয়াম নাও জিততে পারত।

দেখলাম, ফ্রান্সের খেলার ধরন নিয়ে সমালোচনা করেছেন কোনো কোনো বেলজিয়াম খেলোয়াড়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। ফ্রান্স বাজে কৌশল নিয়ে খেলেছে বলে আমি মনে করি না। আসলে এই অভিযোগ উঠত না যদি না বেলজিয়ামকে গোল না খেতে হতো। ফ্রান্সের খারাপ কৌশল কোথায় দেখলেন, আমি বুঝলাম না। ৫ট/৬টি দুর্দান্ত আক্রমণ করেছে তারা। বড় ম্যাচে লিড নেওয়ার পর যে কোনো দলই সেটা ধরে রাখার জন্য কৌশলি হয়। এটা দোষের নয়। এমবাপে, গ্রিসম্যান, পগবা, জিরুডরা দারুণ খেলেছেন। দুর্দান্ত হেডে গোল করেছেন উমতিতি। এমবাপে যে দ্রুততার সঙ্গে বল টেনেছেন তা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। কি দুর্দান্ত গতি এই ছেলেটার! সব মিলে দারুণ একটি দল হয়ে ওঠেছে ফ্রান্স। ফাইনালে আমি তো এই ইংল্যান্ডেরই সম্ভাবনা দেখছি।

ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে বিজয়ী দল খেলবে ফ্রান্সের বিপক্ষে। এই দলটি ইংল্যান্ড না ক্রোয়েশিয়া রাতে জানা যাবে। ফুটবল ঐতিহ্য বলুন আর দলের শক্তি সামার্থের কথা ধরুন- আমি ইংল্যান্ডকেই স্পষ্ট এগিয়ে রাখছি আজকের ম্যাচে। ১৯৬৬ সালের পর বড় কোনো সাফল্য আসেনি ইংল্যান্ডের। এবার তারা যেন মরিয়া। হ্যারি কেন দলটির সবচেয়ে বড় তারকা। র‌্যাশফোর্ড লিংগার্ড, ডেলে আলিরাসহ কয়েকজন তরুণ খেলোয়াড় আছেন যাদের গতি মুগ্ধ করার মতো। যদিও তুলনামূলক সহজ গ্রুপ পেরিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে তারা। কিন্তু ইংল্যান্ড এই তরুণ দলটির ক্ষুরধার গতি মুগ্ধ করার মতো।

ক্রোয়েশিয়াও যথেষ্ঠ ভালো দল। তারা সেমিফাইনাল পর্যন্ত এসেছে যোগ্যতার বলেই। ছোট দেশ, কিন্তু বড় মাপের কিছু ফুটবলার আছে দলটিতে। ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখলেও ক্রোয়েশিয়াও প্রস্তুত। দারুণ মিডফিল্ডের সঙ্গে  গতিময় আক্রমণভাগ। গোল কিপার সুবাসিচ তো এক কথায় দুর্দান্ত। লুকা মড্রিচ, মানজুকিচ, রকিতিচরা যদি সেরা দিতে পারেন তাহলে ম্যাচটা খুব কঠিন হয়ে উঠতে পারে ইংল্যান্ডের জন্য। তবে আমি ইংল্যান্ডের তরুণ দলটিকেই এগিয়ে রাখছি সব কিছুর বিচারে।

আব্দুস সালাম মুর্শেদী : সাবেক তারকা ফুটবলার