কোটা আন্দোলন: প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি চান রওশন

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৮, ১৮:৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। সেই সঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স সীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করার বিষয়টিও বিবেচনার অনুরোধ করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে চলতি বাজেট অধিবেশনের সমাপনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন রওশন এরশাদ।

বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। তারা তো আমাদের সন্তান। তারা তো আবদার করবেই। তারা তো চাকরি চাইবে। তাদের চাকরিতে যেমন করে হোক, প্রোভাইড করতে হবে। চাকরি দিতে হবে।’

‘প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে সচেতন আছেন চেষ্টা করছেন। স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, তিনি যেন সহানুভূতির দৃষ্টি নিয়ে এই বিষয়টি বিবেচনা করেন।’

সরকারি চাকরিতে কোটা ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তুমুল আন্দোলনের মধ্যে গত ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, কোনো কোটা থাকবে না।

সেই ঘোষণার আলোকে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে থাকা আন্দোলনকারীরা সম্প্রতি নতুন করে রাজপথে নামার চেষ্টা করে হামলার মুখে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই হামলায় সরকারপন্থী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রকে হাতুড়িপেটা করে পা ভেঙে দেয়া হয়েছে।

আবার ফেসবুক লাইভে এসে ‘রক্ত গরম হয়ে গেছে’, ‘আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে’, ‘মনে হচ্ছে তার বাপের দেশ’, ‘প্রবাসীদের বলব আপনাদের পাঠানো রেমিটেন্স ভিন্নখাতে ব্যবহার করা হচ্ছে’ জাতীয় বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলেন কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খাঁন। এরই মধ্যে তিনি দুই দফায় মোট ১৫ দিনের রিমান্ডে আছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও দুই জন নেতা।

রওশন এরশাদ বলেন, ‘সরকার জনগণের চাহিদা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে, তা চিন্তাভাবনা করতে হবে। আমরা বেকার যুবকদের চাকরি দিতে পারছি না। সংসদে আসলাম,বসে সময় কাটালাম, তাহলে তো হবে না।’

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উত্তীর্ণ করার দাবিও তোলেন রওশন । বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলব, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন। তিনি দেশকে ভালোবাসেন। জাতিকে ভালোবাসেন। তিনি এটা পারবেন। তিনি না করে পারবেন না।’
‘চিকিৎসকরা আন্তরিকতার সঙ্গে রোগী দেখেন না’
চিকিৎসকদেরকে রোগী দেখার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলেও মনে করেন রওশন। বলেন, ‘এজন্য মানুষ বিদেশ যায়। বাইরের ডাক্তাররা অনেক বেশি আন্তরিকভাবে রোগী দেখেন। কিন্তু আমাদের দেশের চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে রোগী দেখেন না।’

‘এখানে তাড়াহুড়া করা হয়। অনেক সময় রোগী সম্পর্কে ডাক্তার জানতেই চান না। ওষুধের চেয়ে ডাক্তারের আন্তরিকতা বেশি প্রয়োজন। আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে অনেকে বাইরে চলে যান।’

‘শিক্ষাব্যবস্থা সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছে। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে হচ্ছে।এটা যদি হয়, তাহলে দেশের শিক্ষার মান কোথায় গিয়েছে?’
‘মাদকের ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। অনেক প্রভাবশালী লোক মাদকে জড়িয়ে পড়েছে। মাদকের ব্যবসা করছে। কর্মসংস্থানের অভাবে অনেকে মাদক ব্যবসায় জড়াচ্ছে।’

যানজট প্রসঙ্গ

রাজধানীতে তীব্র যানজট এবং ভিভিআইপিদের চলাচলের সময় রাস্তা বন্ধ করে রাখা নিয়েও কথা বলেন বিরোধীদলীয় নেতা। বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী চলাচল করলে রাস্তা বন্ধ রাখা হয়। রাস্তায় যানজট ছাড়তে ছাড়তে রাত হয়ে যায়। অন্য রাস্তায় যাওয়াই যায় না।’

‘বৃষ্টিতে সব রাস্তা ভাঙা। কেউ বলে না সাহস করে। এখানে যারা আছেন, সবাই জানেন। কিন্তু কারও সাহস নেই বলার। সবাই যানজটে নাকাল থাকে।’

প্রধানমন্ত্রীকে রওশন বলেন, ‘গত নির্বাচনে ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচন করে আপনাদের দায়িত্ব দিয়েছি। সব সমস্যাগুলো তো আপনাকে দেখতে হবে। এই সমস্যাগুলো না দেখলে সরকারের ভালো কাজগুলো ফুটে উঠবে না।’

‘আমি যত কথা বলেছি, সবই বাস্তবায়ন করতে হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ছাড়ব না তো।’

ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/ডব্লিউবি