পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প দুইবার আটকে দেয় বিএনপি

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৫:১২ | আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৮, ১৭:৪৮

তানিম আহমেদ, ঢাকাটাইমস
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আওয়ামী লীগ সরকার দুই দফা উদ্যোগ নিলেও বিএনপি ক্ষমতায় এসে দুইবার তা আটকে দেয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার পাবনার রূপপুরে টাকার অংকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ শুরু। হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বরিসভ যৌথভাবে এই কাজ উদ্বোধন করেন। 

২০২৩ সালে এই কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং পরের বছর সম পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে। এখান থেকে টানা ৬০ বছর পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তীব্র বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদী যেসব প্রকল্প হাতে নেয়, তার একটি রূপপুরের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের আগেই এটি নির্মাণের অঙ্গীকার ছিল আওয়ামী লীগের। এই কেন্দ্রটি নির্মাণে দলটির পরিকল্পনা অবশ্য আরও পুরনো।

পাকিস্তান আমলে ৬০ এর দশকেই রূপপুরে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু এরপর আর পাকিস্তান সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

স্বাধীনতার পর পর ১৯৭২ সালের মার্চে রাশিয়া সফরে গিয়ে রূপপুরে ২০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে সে দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন সে সময়ের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তিনি প্রকল্পটির কাজ শুরুর আগেই ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসে আর প্রকল্পটি এগিয়ে নেননি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।

এরপর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ আবারও সেখানে কাজ শুরুর প্রক্রিয়া শুরু করে। তখন পরিকল্পনা হয় ৬০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আবারও প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়।

সেই ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠতে পারবে, এটা বহু মানুষের কল্পনারও বাইরে ছিল। যদিও বহু আগে উদ্যোগ নেয়া হয়েছি, আমি শুধু উদ্যোগই পেয়েছিলাম। পাকিস্তান আমলে আর কিছুই পাইনি।’

‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা শুরু করেছিলেন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের। এখানে অনেকগুলো কাজ করতে হয়। অনেক নিয়ম মানতে হয়, অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়। তিনি সেই কাজগুলো শুরু করেছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি তা শেষ করে যেতে পারেননি। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর তা আগায়নি তেমনভাবে।’

‘৯৬ সালে যখন প্রথম সরকার গঠন করি, তখন একটা কমিটি করে দিয়েছিলাম তখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন সাদেক সাহেব, তাকে দিয়ে। যেখানে আমার প্রাইম মিনিস্টার অফিসের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ছিলেন ড. সামাদ, মশিউর রহমান সাহেবসহ অনেকেই তার সদস্য ছিলেন।’

‘তখন তারা অনেকগুলো কাজও শুরু করেন এবং আমরা ভিয়েনাতে আইইএর (ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি) সাথে যোগাযোগ করা, এই জায়গাটি পরীক্ষা করা এবং বিভিন্ন কাজ আমরা এগিয়ে রেখে গিয়েছিলাম।’

‘এই কাজটা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করতে হয়। অনেকগুলো আইন মানতে হয়, নিয়ম মানতে হয়। জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশনে সই করতে হয়েছে, এগ্রিমেন্টে সই করতে হয়েছে। মোটামোটিভাবে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম, এই কাজগুলো আমরা করে গিয়েছিলাম। এবং আইইএ সব সময় আমাদেরকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে।’

‘কিন্তু ২০০১ সালে আমরা সরকারে আসতে পারিনি, তখন আর কাজগুলো আগায়নি সেটা হলো বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ এ আবারও জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলে আমরা সরকার গঠন করার সুযোগ পাই। আর ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা উদ্যোগ নেই এবং তখনই আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করার পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।’

‘কারণ, আমাদের লক্ষ্য ছিল আমরা বাংলাদেশকে উন্নত করব। আর উন্নত করতে হলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে হবে, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। দেশকে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যা যা দরকার করতে হবে এবং সেই দিক থেকে চিন্তা করেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠনের পরের বছরের ২১ মে পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে চুক্তি হয় মস্কোতে। আর ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুই হাজার চারশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার দুটি চুল্লি নির্মাণে রাশিয়ার এটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ।

মুক্তিযু্দ্ধের বন্ধু রাশিয়ার এই সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সোভিয়েত রাশিয়া কেবল যুদ্ধের সময়ই আমাদের সহযোগিতা করেনি, মুক্তিযুদ্ধের পর দেশকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও আমরা তাদের সহযোগিতা পাই। সে সময় মাইন উত্তোলন করার সময় তাদের কয়েকজন সদস্য আত্মত্যাগও করেছিলেন, সে জন্য আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’

‘আমি যখন রাশিয়া সফরে গিয়েছিলাম, তখন রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি তখন সহযোগিতা করেছিলেন। তিনি সহযোগিতা করেছিলেন বলে আমরা আজ এগিয়ে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ১৯ হাজার মেগাওয়াট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগেই এই অগ্রগতি হয়েছে।

‘১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তখনই বিদ্যুৎ উৎপাদনে বহুমুখী প্রকল্প নিয়েছিলাম। বেসরকারিখাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ তখন থেকেই শুরু হয়।’

‘আজকে প্রায় ৯৩ ভাগ মানুষের ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুধু গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল ছিল। আজকে গ্যাস, তেল, কয়লা, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বহমুখীকরণ করে দিয়েছি।’

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী ইউরি ইভানোভিচ বরিসভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বিজ্ঞান প্রমুখ এ সময় বক্তব্য রাখেন।

ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/টিএ/ডব্লিউবি