সবজি চাষে বেকারত্ব দূর!

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০১৮, ১১:৫৬

সুজন সেন, শেরপুর

শেরপুরের নকলায় দিনদিন সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবতীরা। শাক-সবজি ও ফলের বাগান করে বেকারত্ব জয় করার স্বপ্ন দেখছেন তারা। আর লাভ পেয়ে আরও উদ্যমী হয়ে উঠছেন তারা। শাক-সবজি ও ফলের বাগানের পাশাপাশি হাঁস ও মুরগি পালনের দিকেও ঝুঁকছেন বেকাররা।

উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে অনেকেই পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি ও ফলের বাগান করেছেন। উপজেলার উরফা ইউনিয়নের শালখা গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে এইচ এম শেখ ফরিদ। পড়াশুনা করছেন শেরপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রসায়ন বিভাগে।

ফরিদের ভাষ্য, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে শূন্য পদের চেয়ে প্রার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভূগছেন। তাই চাকরির পেছনে না ছুটে স্বাবলম্বী হওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। ২০১৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙিনায় ১০টি দেশীয় জাতের পেঁপে গাছ লাগান।

বিভিন্ন প্রকারের শাক-সবজি থেকে ওই বছর প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাভ হয় তার। লাভের টাকায় তার সারা বছরের লেখাপড়ার খরচ চলে যায়। পরে বিলের পাড়ে বাড়ি হওয়ায় পরিবারের অন্যান্যদের সহযোগিতায় পরে  হাঁস পালন শুরু করেন। শাক-সবজি, পেঁপে ও হাঁস পালনে লাভ দেখে চাকরি করার চিন্তাই ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, বর্তমানে আরও ১০ শতক জমিতে পেঁপে বাগান শুরু করেছেন তিনি। এই বাগানে পারিবারিক শ্রম বাদে সব মিলিয়ে ১২ হাজার টাকা টাকা ব্যয় হয়েছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করার আশা করছেন তিনি।

ফরিদ জানায়, তার সফলতা দেখে এলাকার শতশত শিক্ষিত বেকার এখন শাক-সবজি ও ফলের বাগানের পাশাপাশি হাঁস মুরগি ও গরু পালনে ঝুঁকছেন।

তার সফলতা দেখে উরফার তারাকান্দা গ্রামের এমএসসি পাস রেজাউল হক হীরা, পিছলাকুড়ি গ্রামের এমএসসি পাস মোশাররফ হোসেন, ভূরদী মারাকান্দার বিএসসি (অনার্স) পাস এস এম মনিরুজ্জামানও শুরু করেছেন সবজি চাষ।

তারা বলেন, আমাদের মতো শতশত শিক্ষিত বেকার যুবক আজ নিরাপদ শাক-সবজি ও ফল বাগানের পাশাপাশি দেশীয় জাতের হাঁস-মুরগি ও গরু পালন করে বেকারত্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। শিক্ষিত হয়ে কৃষি কাজ করাকে হেয় মনে করেন কেউ কেউ। তাই সমাজে কৃষিকে অধিক গুরুত্ব দিতে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে মত দিয়েছেন তারা।

শেখ ফরিদের বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, ছেলে পেঁপে চাষে বাড়তি আয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার বাগানে দুই শতাধিক এবং বাড়ির আঙিনায় আরও ২০টি দেশি ও বিদেশী জাতের পেঁপে গাছ রয়েছে। আশাতীত সফলতা পেয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষের আগ্রহ জাগছে তার। প্রতিটি গাছে ছোট বড় মিলিয়ে ৫৫ থেকে ৬৫টি পেঁপে হয়েছে, পরিপক্ক হলে যার ওজন হবে ৪০ কেজি থেকে ৫০ কেজি। সবজি হিসেবে বিক্রি করলে তার ওই বাগান থেকে অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয় হবে।

আর পাকা পেপে বিক্রি করা হলে আয় হবে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। অল্প জমিতে অধিক লাভ হওয়ায় আগামী বছর তার ছেলেকে আরও ২০ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করবেন তারা।

কৃষি কর্মকর্তা আফজাল জানান, পেঁপে বাগানের গাছের ফাঁকে ফাঁকে দেশি সবরী কলা ও বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি চাষ করা যায়। পেঁপে গাছ একবার লাগালে টানা দেড়বছর ফল দেয়। তার পরের ৬ মাস যেন জমিটুকু পতিত না থাকে সেদিক বিবেচনায় ওইসব ফল ও শাক-সবজি রোপন করেছেন তারা। বাজারে নিরাপদ ফল ও শাক সবজির চাহিদা বেশি থাকায় দামটাও  ভাল পাওয়া যায়। তাছাড়া দেশি হাঁস মুরগির ডিম ও মাংসের চাহিদা ও দাম দুটিই বরাবরই বেশি থাকে।

উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, এ বছর উপজেলায় শাহী, বারি-১, রেডলেডী এবং বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক উদ্ভাবিত ইপসা এছাড়া স্থানীয় জাতের পেঁপে বেশি চাষ হয়েছে। শাক-সবজি ও ফলের চাষ করে আজ পর্যন্ত কারও লোকসান গুণতে হয়নি। তাই এসব চাষ বাড়াতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবনারীরা কৃষি ক্ষেত্রে এগিয়ে আসায় আগামীতে শাক-সবজি ও ফল চাষের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ।

এ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর বলেন, যে কেউ চাকরির আশা বাদ দিয়ে শাক-সবজি ও ফলের বাগান করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এসবের চাহিদা সারা বছরই থাকে।

স্থানীয় কৃষি বিভিাগ জানায়, চলতি বছর উপজেলায় অতিরিক্ত ৭৫ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে শতাধিক বাগান রয়েছে। সব মিলিয়ে উপজেলায় প্রায় তিন হাজার পেঁপে গাছ রয়েছে বলে ধারণা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দীন।

(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/প্রতিনিধি/ওআর)