সেই সব থাই কিশোর...

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৮, ০৮:৪৩ | আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮, ০৯:২৬

তায়েব মিল্লাত হোসেন

গুহায় আটকে পড়েছিল থাই কিশোরদের একটি ফুটবল দল। বিশ্বকাপের মগ্নতা খান খান হয় এই খবরে। গুহাবন্দিরা জীবিত ফিরতে পারবে তো? এ প্রশ্নে উদ্বেগে ছিল সবাই। একদল ডুবুরির বীরত্বে ফিরেছে থাই কিশোররা। উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের বাবা-মা, পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা ২৪ ঘণ্টা গুহার চারপাশে ছিলেন। এই ১২ কিশোরের বয়স ১১ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাদের সবার স্বপ্ন, তারা একসময় দেশটির জাতীয় দলে খেলবে। এখানে তাদের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

পানুমাস সাংদি (১৩)

তার ডাকনাম মিগ। পাকাপোক্ত ডিফেন্ডার। ফুটবলের মাঠে রক্ষণভাগে তার দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কোচের ভাষায়, তার শারীরিক মনোবলও খুব জোরালো। ফুটবলে তার নিপুণ দক্ষতা রয়েছে। বন্ধু মহলে সে ‘পালের গোদা’ হিসেবেই পরিচিত। বন্ধুদের কাছে স্মার্ট ও শান্ত ছেলে। ফুটবল খুব ভালোবাসে। শিগগিরই প্রাদেশিক টিমে খেলতে চায়। রক্ষণভাগে খেলে থাকে। মাঝে মাঝে গোলরক্ষকও থাকে।

প্রাজাক সুথাম (১৫)

তার ডাকনাম নোট। এ ছেলেটি দলের প্রধান প্রেরণা। ফুটবলের বহু কারসাজি সে জানে। দলকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা ও ভালো বোধশক্তি রয়েছে তার। লাজুক স্বভাবের ছেলে।

দুগানপেট প্রমটেপ (১৩)

তার ডাকনাম ডোম। সেই ওয়াইল্ড বোয়ার দলের ক্যাপ্টেন। স্থানীয় পত্রিকাকে তার পরিবার জানিয়েছে, সেই গ্রুপের অনুপ্রেরণাকারী। তার সহ-খেলোয়াড়রা বলেছে, তার ভেতরে নেতৃত্বের গুণাবলি আছে। এ ছাড়া সে একজন মেধাবী খেলোয়াড়। স্থানীয় শীর্ষ দলের হয়ে খেলার চেষ্টা করেছে সে।

পিপাট বোধহু (১৫)

তার ডাকনাম নিক। মূলত সে ওয়াইল্ড বোয়ার্স দলের খেলোয়াড় নয়। প্রশিক্ষণে সবে যোগ দেয়। গোলরক্ষক একারাতের খুব ভালো বন্ধু। দলের নতুন গোলরক্ষক হওয়ার চেষ্টা করছে।

পিরাপাত সোমপিয়াংজাই (১৭)

তার ডাকনাম নাইট। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সে মাঝমাঠের খেলোয়াড়। তাকে সবাই নাইট নামে ডাকে। ছেলেবেলা থেকেই চঞ্চল। গুহার মৃত্যুকূপেই সে ১৭ বছরে পা দিয়েছে। গত ২৩ জুন ছিল তার ১৭তম জন্মদিন। তার জন্মদিন উদযাপনেই সেদিন পুরো দল গুহার ভেতরে ঢুকেছিল। পিরাপাতের বাবা-মা এখনও তার কেক সযত্নে রেখে দিয়েছেন।

নাত্তাওয়াট তাকামরং (১৪)

তার ডাকনাম টার্ন। বাবা-মা-শিক্ষক সবার কাছে শান্ত ছেলে। ডানপিটে স্বভাবের বেশ সাহসী ছেলে। গুহা থেকে বাবা-মাকে সাহসী হওয়ার আহ্বান জানায়। তাদের দুশ্চিন্তা না করার জন্য বলে।

ছানিন ভিবুলরানগুরুয়াং (১১)

তার ডাকনাম টিটান। সবচেয়ে খুদে খেলোয়াড়। মাত্র সাত বছর বয়স থেকেই ফুটবল খেলা শুরু। খুদে হলেও দলের অন্যতম পুরনো খেলোয়াড়। চার বছর ধরে এ টিমে খেলছে। শিক্ষক ও পরিবারের কাছে খুবই ভদ্র ছেলে। তার বাবা থিনাকর্ন বলেন, আমার ছেলে খুবই পড়–য়া। সে পড়তে ভালোবাসে। পড়ালেখার বাইরে সে ফুটবল খেলতে ভালোবাসে।

মঙ্কল বোনপিয়াম (১৩)

তার ডাকনাম মার্ক। দলের গোলরক্ষক। গুহা থেকে লেখা চিঠিতে সে জানায়- মা, আর বাঁদরামি করব না। বেঁচে ফিরলে মাকে দোকানের কাজে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয় সে। তারা বাবা জানিয়েছেন, সে ভালো ছেলে। যে ফুটবলের মতো পড়াশোনা করতে ভালোবাসে। বছরখানেক আগে সে ওয়াইল্ড বোয়ার ফুটবল দলে যোগ দেয়।

একারাত ওয়াংশুকেহান (১৪)

তার ডাকনাম বিউ। দলের দুজন গোলকিপারের মধ্যে সে একজন। তাকে সবাই বিউ নামে ডাকে।

আবুল সাম-ওয়ান (১৪)

তার ডাকনাম আবুল। থাই ভাষা ছাড়াও বার্মিজ, চায়নিজ ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী। এসব কারণে বন্ধুমহলে ‘সবজান্তা পণ্ডিত’ নামে বেশি পরিচিত। ভলিবল টিমেরও সদস্য। উত্তর থাইল্যান্ড ওয়াইড টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। মিয়ানমারে রাষ্ট্রহীনভাবে জন্ম নিয়েছে সে। থাইল্যান্ডের খ্রিষ্টান শিক্ষকদের কাছে সে বেড়ে উঠেছে। কিশোরদের মধ্যেই একমাত্র সেই ব্রিটিশ ডুবুরিদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে পেরেছে।

পর্নচাই কামলুয়াং (১৬)

তার ডাকনাম তি। দলে রক্ষণভাগে খেলে থাকে। কোচের ভাষায়, তাকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে ঢোকানো খুবই কঠিন। তবে একটু ভিতু প্রকৃতিরও বটে। মনেপ্রাণে জাতীয় ফুটবল দলে খেলার স্বপ্ন লালন করে। ইংল্যান্ড দলের ভক্ত। গুহায় নিখোঁজ হওয়ার দিনও তার পরনে ইংল্যান্ড দলের জার্সি ছিল।

সামপং জাইওয়াং (১৩)

তার ডাকনাম পং। মাঝমাঠে খেলতে অভ্যস্ত পং বিশ্বকাপ ফুটবলে ইংল্যান্ডের সমর্থক। একজন বড় খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই সে বিভোর থাকে সব সময়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সে দেশের হয়ে খেলতে চায়। পং সব সময় উচ্ছল থাকে। ফুটবলসহ সব খেলাই ভালোবাসে সে। তার পরিবার জানায়, সে লিভারপুল ক্লাবের সমর্থক। সে চায়, ইংল্যান্ড দল যেন জয়ী হয়।