রাজশাহীর ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে বর্তমান কাউন্সিলররা

প্রকাশ | ১৭ জুলাই ২০১৮, ০৯:০৭

রিমন রহমান, রাজশাহী

রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩০টি। আগামী ৩০ জুলাইয়ের সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে সব ওয়ার্ডেই চলছে প্রার্থীদের প্রচারযুদ্ধ। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি সক্রিয় কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। নানা কারণে নগরীর বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই ভোটারদের পছন্দের তালিকায় নেই বর্তমান কাউন্সিলররা। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পাঁচ ও ছয় নম্বর ওয়ার্ড। ভোটাররা বলছেন, ওয়ার্ড দুটিতে বর্তমানরাই এগিয়ে। নতুন প্রার্থীদের জিততে হলে তুমুল লড়াই করতে হবে তাদের সঙ্গে।

নগরীর পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ৯৫০ জন। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান কামরু। তিনিও এবার ‘ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও চার প্রার্থী। তারা হলেন- সাবেক কমিশনার মাহাতাবুল ইসলাম বাবু (ঠেলাগাড়ি), সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাশেম (লাটিম), রাজপাড়া থানা জামায়াতের সেক্রেটারি কামরুজ্জামান সোহেল (টিফিন ক্যারিয়ার) ও বিএনপি নেতা আফজাল হোসেন (ঘুড়ি)।

এই ওয়ার্ডে ২০০৮ এবং ২০১৩ সালের নির্বাচনে পরপর দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন কামরুজ্জামান কামরু। দুই দফায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে এলাকায় একজন সমাজসেবক হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তরুণদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়। এবারও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে পাশে পাচ্ছেন। তবে তার সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পারেন সাবেক কমিশনার মাহাতাবুল ইসলাম বাবু। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়ন এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করাই আমার মূল্য লক্ষ্য। আমি সে লক্ষ্যেই ১০ বছর থেকে কাজ করে চলেছি। ইতোমধ্যে ওয়ার্ডবাসীর সহযোগিতায় অধিকাংশ উন্নয়নমূলক কর্মকা- সম্পন্ন করা হয়েছে। ওয়ার্ডে শতকরা ৮০ ভাগ ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো কয়েকটি মহল্লার রাস্তার সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে পারিনি। এবার নির্বাচিত হলে সব কাজ শেষ করতে চাই।

রাজশাহী পৌরসভা থাকাকালে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন মাহাতাবুল ইসলাম বাবু। তিনি সে সময় এলাকায় বেশ উন্নয়নমূলক কাজ করেন। মাহাতাবুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি সন্ত্রাসমুক্ত ওয়ার্ড উপহার দিতে চাই। মাদকমুক্ত ওয়ার্ড গঠন করতে চাই। এছাড়া বিনোদনের ব্যবস্থার জন্য শিশু পার্ক এবং খেলার মাঠ করারও ইচ্ছে রয়েছে। অতীতে এ ওয়ার্ডে যথেষ্ট উন্নয়ন কাজ করায় ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবেন বলে আমি আশাবাদী।

এলাকার ভোটাররা বলছেন, এ ওয়ার্ডে ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন কামরুজ্জামান কামরু এবং মাহাতাবুল ইসলাম বাবু। এখানে জামায়াতের প্রার্থী কামরুজ্জামান সোহেলের এলাকায় সেভাবে পরিচিতি নেই। এছাড়া জামায়াতের প্রতি এ এলাকার মানুষের রয়েছে বিরূপ ধারণা। অন্য দুই প্রার্থী আফজাল হোসেন এবং আবুল হাশেমের ব্যাপারে ভোটারদের মধ্যে সেভাবে আলোচনা নেই। তবে তারাও নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক আবু জাফর ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রার্থীরা আসছেন। ভোট চাইছেন। কিন্তু তাদের আসা-যাওয়ায় কিছু আসে যায় না। কাকে ভোট দেব তা ঠিক করে ফেলেছি। যাকে বিপদে-আপদে পাশে পাওয়া যাবে তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব।

পাশের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক হাফিজুর রহমানও একই কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, কাউন্সিলরের বড় গুণ হতে হবে বিপদে-আপদে ডাকলে যেন তাকে পাশে পাওয়া যায়। দেখে-শুনে এমন প্রার্থীকেই তিনি ভোট দেবেন।

ছয় নম্বর ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ২৭৯ জন। এখানকার বর্তমান কাউন্সিলর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান টুকু। ভোটে এবার তিনি ‘টিফিন ক্যারিয়ার’ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তার সঙ্গে আরও পাঁচজন আছেন নির্বাচনের মাঠে। তারা হলেন- রাজাপাড়া থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বদি (ট্রাক্টর), বর্তমান সহ-সভাপতি তরিকুল ইসলাম স্বপন (মিষ্টি কুমড়া), বিএনপি সমর্থক মনিরুল ইসলাম মনি (ঠেলাগাড়ি), ব্যবসায়ী মশিউল হক মুন্না (লাটিম) এবং ওয়ার্ড জামায়াতের আমির রেজাউল করিম রিপন (ঘুড়ি)।

এ ওয়ার্ডে বিএনপি এবং জামায়াতের প্রার্থী চারজন। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকু। এ কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করছেন ভোটাররা। তাছাড়া টুকুর পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্য রয়েছে। তার বাবা আলতাফ হোসেন দীর্ঘদিন মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বড় ভাই আসাদুজ্জামান আসাদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এসব মিলিয়ে এলাকায় টুকুর প্রভাব রয়েছে। রয়েছে সুনাম। তাই সবার চেয়ে টুকুই এগিয়ে বলে জানিয়েছেন ভোটাররা।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে ২০১৩ সালে নির্বাচনে প্রথমবার লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নেন নুরুজ্জামান টুকু। তরুণ এই কাউন্সিলর ঢাকাটাইমসকে বলেন, ওয়ার্ডে নানা ধরনের নাগরিক ভোগান্তি ছিল। মাত্র সাড়ে চার বছর দায়িত্ব পালন করছি। এই সময়ের মধ্যে ওয়ার্ডের সমস্যাগুলোর ৭০ ভাগ সমাধান করেছি। এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। এবার নির্বাচিত হলে দ্রুততার সাথে সেসব কাজ শেষ করব।

এই ওয়ার্ডে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বদিউজ্জামান বদি দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। সাবেক এ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। বদি বলেন, আমি দীর্ঘ সময় থেকে মাঠে রয়েছি। গত নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছি। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। জলাবদ্ধতাসহ রাস্তাঘাটের সমস্যা রয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে এসব সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করব।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আরেক প্রার্থী বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ত্রাণের টিন আত্মসাতের মামলা হয়। অপর প্রার্থী জামায়াত নেতা রেজাউল করিম রিপনের বিরুদ্ধেও নাশকতার মামলা আছে। তার প্রতি এলাকার ভোটারদের মনোভাব ইতিবাচক নয়। অপর দুই প্রার্থী বিএনপি সমর্থক মনিরুল ইসলাম মনি এবং ব্যবসায়ী মশিউল হক মুন্নার নামও সেভাবে আলোচনায় নেই। তবে তারা প্রার্থীদের সবাই এখন ব্যস্ত প্রচার-প্রচারণায়।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/আরআর/জেবি)