ন্যূনতম মজুরি নিয়ে মুখোমুখি পোশাক শ্রমিক-মালিক

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ০৮:২৬

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
ফাইল ছবি

তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা ন্যূনতম যে মজুরি দাবি করছেন, মালিকরা তার অর্ধেক দেয়ার প্রস্তাব করেছেন৷ এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ৷ মজুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বলছেন, মালিকদের প্রস্তাবটা প্রহসনের মতো৷ খবর ডিডব্লিউ’র।

গত ১৪ জানুয়ারি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য সৈয়দ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়৷ সোমবার কমিশনের তৃতীয় বৈঠকে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতা শামছুন্নাহার ভূঁইয়া ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা করার প্রস্তাব করেন৷ আর তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র  সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রস্তাব করেন ছয় হাজার ৩৬০ টাকা৷ ফলে মজুরি নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি৷ এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়৷

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিকঐক্য লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা৷ যিনি শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে ১২ হাজার ২০ টাকা মজুরি প্রস্তাব করেছেন, তা-ও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না৷ কারণ, তিনি সরকারের লোক৷ আর শ্রমিক নেতা হিসেবে তিনি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নন৷ আর মালিকরা যে মজুরি প্রস্তাব করেছেন, সেটা হাস্যকর৷ কারণ, পাঁচ বছর আগে যে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি করা হয়েছিল, শ্রমিকরা এখন তার চেয়ে বেশি পান৷ কারণ, ইনক্রিমেন্ট হয়েছে, যেটা মালিকরা প্রস্তাব করেছেন, সেই মজুরি এখন বাস্তব মজুরির চেয়ে কম।’

‘আমরা মালিকদের এই একগুঁয়েমি ভাব নিয়ে এরই মধ্যে বৈঠক করেছি৷ প্রথম বৈঠকের পর থেকে ছয় মাসের মধ্যে কমিশনকে প্রতিবেদন দিতে হবে। সেই হিসেবে আরও কিছু সময় পাবে কমিশন৷ আমাদের আশা এর মধ্যে মজুরি নিয়ে মালিক-শ্রমিক সমঝোতা হবে৷ আর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী৷ আমরা মনে করি, তিনি মজুরির ব্যাপারের সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আরও দুই সপ্তাহ সময় আছে৷ এরমধ্যে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করতে হবে৷ মালিকপক্ষ এখন সময় চেয়ে কালক্ষেপণের পথ বেছে নিতে পারে৷ তারা যদি সেরকম কিছু করেন, তাহলে শ্রমিকরা তা মেনে নেবেন না।’

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘মালিকরা যে মজুরির প্রস্তাব দিয়েছেন, তা শ্রমিকদের একটা বিক্ষোভের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে৷ আজও আমরা সমাবেশ করেছি৷ আমরা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় সমাবেশ করবো৷’

‘মালিকদের মানসিকতা হয়েছে, তারা যেন বেতনই দিতে চান না৷ আমরা বলেছি, গার্মেন্টস মালিকরা যেন বিলাসিতা কমিয়ে দেন৷ তারা যেন মানসিকতার পরিবর্তন করেন৷ আমরা সবাই মিলে ১৬ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছিলাম৷ আর সেটাই যৌক্তিক৷’

‘মালিকরা যে মজুরির প্রস্তাব দিয়েছেন, তা শ্রমিকদের একটা বিক্ষোভের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তারপরও শ্রমিক প্রতিনিধি যে ১২ হাজার ২০ টাকা প্রস্তাব করেছেন, তিনি সরকারের লোক৷ তা-ও মালিকরা মানছেন না।’

বিজিএমই'র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ‘আমরা মূল্যস্ফীতি, উৎপাদন খরচ এবং বিশ্বে তৈরি পোশাকের দাম ও চাহিদা বিবেচনা করে ন্যূনতম মজুরি ছয় হাজার ৩৬০ টাকার প্রস্তাব করেছি৷ আমাদের উৎপাদনসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে৷ এর বেশি মজুরি দিলে পোশাক কারখানা চালানো সম্ভব নয়৷ বন্ধ হয়ে যাবে৷ আর তাতে সবার ক্ষতি হবে।’

‘যাদের জন্য ন্যূনতম মজুরির কথা বলা হচ্ছে, তারা শিক্ষানবিশ৷ তারা কাজ শেখে৷ পরে তাদের বেতন বেড়ে যায়৷ শিক্ষানবিশকে এর চেয়ে কে বেশি বেতন দেবে? শিক্ষানবিশরা ইনক্রিমেন্ট পান না৷ যারা বলেন ইনক্রিমেন্ট পেয়ে পাঁচ বছরে তাদের বেতন এখন আমাদের প্রস্তাবিত বেতনের চেয়ে বেশি, তারা না জেনেই কথা বলছেন।’

মজুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইকতেদার আহমেদ বলেন, ‘২০১৩ সালে ন্যূনতম মজুরি করা হয় পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা৷ প্রতি বছর শতকরা ৫ ভাগ ইনক্রিমেন্টের বিধান ছিল৷ তাতে ইনক্রিমেন্টসহ পাঁচ বছরে যে ন্যূনতম মজুরি হয়েছে তা এখন মালিকরা যে প্রস্তাব করেছেন তার চেয়ে বেশি৷ তারা যে মজুরি প্রস্তাব করেছেন, তা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না।’

‘আমার বিবেচনায়, বাজারদর, জীবনমান সব কিছু মিলিয়ে ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকাই হওয়া উচিত৷ কারণ, মজুরি হিসাব করা হয় পাঁচজনের একটি পরিবারের কথা মাথায় রেখে।’ –ডয়েচে ভেলে

(ঢাকাটাইমস/১৮জুলাই/জেবি)